গ্রামের সহজ প্রকৃতির ছেলে হ্নদয় তার প্রিয় মানুষটির প্রেমে হাবুডাবু খাচ্ছে । সে লেখাপড়া বাদ দিয়ে দিবারাত্রীতে শুধু অন্নপুর্ণাকে স্বপ্ন দেখতে থাকে। অন্নপূর্না প্রাথমিক শিক্ষক পদে চাকুরীর আবেদন করে। নিয়মিত চাকুরীর জন্য প্রস্তুতিমুলক লেখাপড়া করে। আর এদিকে হ্নদয় শুধু অন্নাপুর্নার সাথে মোবাইলে কথা বলে । অন্নাপুর্না দের বাড়ীতে যায গল্প করিতে । অন্নাপুর্না একদম চালাক প্রকৃতির। সে মোবাইলে কথাবার্তা বললে ও নিজের লেখাপড়ার দিকে মনোযোগ ছিল শতভাগ। তার লেখাপড়ায় কোন প্রভাব পড়েনি। হঠাৎ একদিন পোস্টমাস্টার এসে তার ইন্টারভিউ কার্ড দিয়ে । সে আরো মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করিতে থাকে। দুইদিন পর তার পরীক্ষা। পরীক্ষার দিন সে তার বাবার সাথে পরীক্ষা দিতে যায়। হ্নদয়ও তাদের সাথে সঙ্গী হওয়ার জন্য পরীক্ষার সেন্টারের সামনে বখাটে ছেলের মত দাড়িয়ে থাকে। পরীক্ষা শেষে বাহির হলে হ্নদয় তাকে জানায় পরীক্ষা কেমন হয়েছে। সে জানায় পরীক্ষা অনেক ভাল হয়েছে। একদিন হ্নদয় ,অন্নাপূর্না ও তার কাজিন স্কুল মাঠে বসে গল্প করছে। তখন তার কাজিন কে দিয়ে হ্নদয়ের মোবাইল সেট দিয়ে ডুয়েট ছবির পোজ দিচ্ছে । তার কাজিন বুঝতে পারতো যে, তাদের মধ্যে একটি বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে । সে ছোট বলে কিছু বলে নি। তাদের কথামত অনেকগুলো ছবি তোলা হয়েছে । এমন সময় অন্নাপুর্নার বাবা বাজার হতে বাড়ী আসিতেছে। ওদের ছবি পোজ দেয়া দেখে ভীষন রাগান্মিত হয়। ঐদিন বাড়ীতে ওর পিতা-মাতা অন্নাপুর্নাকে ভীষন বকেছে। এতে করে মনে হয় ওদের সম্পর্ক আরো মজবুত হয় । দুইদিন পর অন্নাপুর্না তার ছাত্রীনিবাসে চলে যায় । তখন হ্নদয়ের আর ভাল লাগেনা। একটু পর পর মোবাইলে খোঁজ খবর নেয় । বিভিন্ন বিষয়ের কথোপকথন হয় । অনেক সময়ে বায়না ধরে মোবাইলে গান শুনে । এভাবেই চলতে থাকে। অন্নাপুর্নার চাকুরীর পরীক্ষায় পাশ করেছে শুনে হ্নদয় খুব খুশি হয় । হ্নদয়ই দুদিন পর পোষ্টমাস্টারের বাড়ী হতে ভাইভা কার্ড নিয়ে আসে। জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ে ভাইভার দিন ও হ্নদয় তার সাথে ছিল । প্রেমে পড়িলে মানুষ এমনই হয় । তার নিজের চাকুরীর কোন চিন্তা না করে বা তার ভবিষ্যৎ কি হবে ? এসব বিষয়ে তার কোন চিন্তা নেই। শুধু অন্নাপুর্নাকে নিয়েই সে ব্যস্ত। অন্নাপুর্না অবশ্য তাকে মাঝে মাঝে হ্নদয় কে ঠিকমত লেখাপড়া চালিয়ে নিতে বলেছে। চাকুরীর প্রস্তুতি নেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে । কিন্তু সে শুনেনি। সে বলতো যে তার প্রিয় মানুষটিই তার কাছে সবকিছু । তার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিতেও প্রস্তুত। তোমার জন্য মরতেও পারি। হঠাৎ করে একদিন হ্নদয়ের ভিডিও ফোনটি হাত থেকে পড়ে ডিসপ্লে নষ্ট হয়ে যায় । হ্নদয় অন্নাপুর্নাকে বলে তার ফোন নষ্ট হয়েছে , সে যেন কাষ্টমার কেয়ারে খোঁজ নেয় । কখন যাইতে হবে। হ্নদয় ভাবতে থাকে যে, ফোন মেরামতের উছিলায় আবার তার প্রিয় মানুষটির সাথে সময় কাটানো যাবে। দুদিন পর সে কাস্টমার কেয়ারে যাওয়ার উদ্দ্যেশে বাড়ী হতে বাহির হয় । সোজা সুজি হৃদয় অন্নাপুর্নার ছাত্রীনিবাসে হাজির। অন্নাপুর্ণাকে সাথে নিয়ে রিক্সাযোগে পার্কের পাশে অবস্থিত কাস্টমার কেয়ারে তার ফোন দেখায় । কাস্টমার কেয়ারের ম্যানেজার জানায়, এক/দেড় ঘন্টা দেরী হবে। তখন কাস্টমার কেয়ার ফোন জমা দিয়ে তারা পার্কে প্রবেশ করে। পার্কে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের সমাহারে বেষ্টিত । তার মাঝে মাঝে বসার জন্য চেয়ার রয়েছে । সেখানে দুজনে একসাথে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে অল্পসময়েই যেন সময়টা ফুরিয়ে এলো । সেখান থেকে আসতে মন চাচ্ছে না। তারপর ফোন নিতে হবে বিধায় তারা আবার কাস্টমার কেয়ার হতে ফোন নিতে পার্ক হতে বাহির হয়ে আসে। সারাদিন তার সাথে সময় কাটিয়ে, বিকেলে হৃদয় বাড়িতে আসে। বাড়ীতে এসে আর হ্নদয়ে ঘুম হয়না। মোবাইলে কল আসলে হ্নদয়ের মনটা যেন ভাইব্রিশন হয় । এই বুঝি অন্নাপুর্নার কল এসেছে । অল্পকিছুদিন পর অন্নাপুর্নার প্রাথমিক শিক্ষক পরীক্ষার যোগদান পত্র আসে। অন্নাপুর্না ভাবতে থাকে কিভাবে কবে সে চাকুরীতে যোগদান করিবে। পাশের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সে যোগদান করে। সে প্রতিনিয়ত স্কুলে পাঠদানের জন্য যায় । প্রতিদিন আসার সময় হ্নদয়ের সাথে বাড়ী আসে। এভাবেই চলতে থাকে তাদের সম্পর্ক। পাড়া মহল্লার অনেক লোক তাদের নিয়ে কানাঘুষা করতে থাকে। সেদিকে তাদের কোন কর্ণপাত নেই। হ্নদয় তাকে মোবাইলে বলে, বিধাতা তোমাকে আমার জন্যই এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন । তাই তোমার ভালবাসার জন্য মরতেও পারি।