বিশেষ প্রতিনিধি:
প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে হাতিয়ার হিসেবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে যার ৮০ শতাংশই মিথ্যা বলে বিভিন্ন গবেষণা তথ্যে ওঠে এসেছে। আর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে যেসব মামলা দায়ের করা হয়, তার ৮০ শতাংশই যৌতুকের দাবিতে। একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত আলমগীর হোসেন, নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া না হওয়ায় বিয়ের ৯ মাসের মাথায় ২৮ জুনে স্ত্রীকে তালাকের নোটিশ পাঠান। কিন্তু ১ মাস পর তার সাবেক স্ত্রী তার বিরুদ্ধে নির্যাতন ও ৫ লাখ টাকা দাবিতে যৌতুকের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (গ) ধারায় মামলা করেন। এই ধারায় সাধারণ জখমের জন্য সর্বোচ্চ ৩ বছর সাজার বিধান আছে। ভুক্তভোগী আলমগীর হোসেন দাবি করে বলেন, বিয়ের সময় নগদ মোহরানা দিয়েছি। অথচ এখন বলছে দেইনি। আমি ডিবোর্স চেয়েছিলাম তাই এমন মামলা।
আমাদের পরিবারের কেউই নির্যাতন করেনি, যৌতুকও চাইনি।” সারাদেশে ৯৫ টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মধ্যে যৌতুকের মামলায় বেশি। ভিত্তিহীন মামলা জট ও হয়রানি কমাতে যৌতুকের সাধারণ মামলাগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে যৌতুক নিরোধ আইন কিংবা পারিবারিক আইনে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী জানান, আইনজীবিদের কাছে অভিযোগকারীরা পরামর্শ নেওয়ার জন্য আসে, কোন সেকশন না পেয়ে তখন কিছু আইনজীবি যৌতুকের মামলা দিয়ে দেয়, এটা ঠিক না। কিছু ঘটনা সত্যি হলেও অনেকেই রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মামলা দিয়ে থাক। এই বিষয়ে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ফৌজিয়া করিম জানান, অনেক সময় দেখা যাচ্ছে যৌতকের মামলা হচ্ছে তবে সেটা আসলেই যৌতুকের জন্য নির্যাতন করেনি।
হয়তো অন্যকোন বিষয় আছে। আসলে বিচার পাওয়ার জন্য কেউ আসে না, মামলা হলেই যে ৩ মাস গ্রেফতার হওয়ার সুযোগ থাকে সেটাকেই প্রতিশোধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অভিযোগ, অপরাধ প্রমাণের আগেই গ্রেফতারের সুযোগ থাকায় বাড়ছে এই ধারার অপব্যবহার। সহকারী এটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ মাহমুদ বাশার বলেন, এই আইনে মামলা তদন্ত কিংবা বিচারের আগেই গ্রেফতার প্রক্রিয়া যুক্তি সঙ্গত নয়। এসব কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ১১(গ) ধারার মামলাগুলো যৌতুক নিরোধ আইনে বিচারের পরামর্শ আইনজিবীদের। তবে আইনমন্ত্রী বলছেন মিথ্যা মামলা হলে সাজা হিসেবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অন্য ধারাগুলোর ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, মিথ্যা মামলা যদি প্রমান হয়, তবে পাল্টা শাস্তির ব্যবস্থার আইন আছে। সেই প্রক্রিয়ায় যাওয়া উচিত। জামিন অযোগ্য হলেও এসব ক্ষেত্রে পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে মামলা হলে আদালতে জামিন দেয়ার নজির রয়েছে।
#CBALO/আপন ইসলাম