শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

আটঘরিয়ায় পাওনা টাকা চাওয়ায় দুধের সাথে গ্যাস ট্যাবলেট মিশিয়ে হত্যার অভিযোগ

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: রবিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২০, ৫:৩৮ অপরাহ্ণ

আটঘরিয়া(পাবনা) প্রতিনিধি:
পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা সদর দেবোত্তর বাজার থেকে পূর্ব দিকে প্রায় পৌনে তিন কিলোমিটার দুরে পুস্তিগাছা গ্রাম। বাজার না পেতে পাকা রাস্তার বামপাশে আব্দুল মজিদের বাড়ী। একটি চার চালা টিনের ঘর।স্ব-পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন আব্দুল মজিদ। ঘরের মধ্যে বেড়া দেওয়া। অভাবঅনাটনের সংসার জীবন ভালই চলত মজিদের। সাদা সিদে দিন মজুর আব্দুল মজিদকে কাজের জন্য ডাকত সবাই। শান্তিপূর্ণ ভাবে দাম্পত্য জীবন যাপন করছিলেন সে।

কখনো করোনা ভয়ে ঘরে বন্দি হয়ে থাকত আব্দুল মজিদ। আবার পেটের খুধা নিবারনের জন্য করোনা মধ্যে জীবন বাজী রেখে কাজে যেতেন তিনি। খেয়ে না খেয়ে পরিবারের সবার মুখে অন্ন তুলে দিতেন আ: মজিদ। তারপরও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে অন্যের কাছে হাত পাততে হয়নি মজিদকে।

বাড়ীর ভিতরে ডুকতেই এ-প্রতিবেদককে দেখে ছোট শিশু বাচ্চা কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন আব্দুল মজিদের স্ত্রী রনজিনা খাতুন। ওভাইগো মাইরা ফেলাইছে আমার সোয়ামিরে,ভাইগো আমার স্বামীরে সজীব,সুকচাঁদ,শিল্পী,হৃদয়,বাবু,সংগ্রাম গ্যাস বড়ির সাথে দুধ মিশাইয়া খাইয়া মাইরা ফেলাইছে। এরা সবাই মাস্তান, এই এলাকায় ওরা সন্ত্রাস কইরা বেড়াই, টাকার ল্যাইগা মানুষকে মাইরা ফেলাই ওরা, আমার স্বামী খুব ভালা মানুষ ছিল, এই গ্যারামের হগল মানুষি জানত আমার স্বামী সাদাসিদে। আমার স্বামীরে পাওনা ১০ হাজার টাকার জন্য সজীবরা ষড়যন্ত্র কইরা খুন করছে।

পুস্তিগাছা গ্রামের দিনমজুর আব্দুল মজিদের বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে ওঠে একই এলাকার সুকচাদ আলীর ছেলে সজীব আলীর সাথে। সুযোগ বুঝে আব্দুল মজিদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা ধার (হাওলাত) চায় সজীব। মজিদ অটোভ্যান বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা ধার দেয় সজীবকে। দীর্ঘদিন যাবত মজিদের ধার দেওয়া ১০ হাজার টাকা সজীব না দিয়ে বিভিন্ন সময় তালবাহানা করে। পাওনা টাকা চাইলেই মাঝে মধ্যেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠত সজীব মজিদের উপর।

নিহতের স্ত্রী রনজিনা খাতুন বলেন, একই এলাকার সুকচাঁদ আলী ছেলে সজীব ১০ হাজার টাকা ধার নেয় আমার স্বামী আব্দুল মজিদের কাছ থেকে। অভাব অনাটনের সংসারে আমার স্বামী সজীবের কাছে পাওনা ১০ হাজার টাকা বার বার চাইত। এক মাসের মধ্যে এই পাওনা টাকা দেওয়ার কথা ছিল সজীবের। আমার স্বামী পাওনা টাকা বার বার চাওয়ায় সজীব গংরা মেরে ফেলার হুমকি দিত।

এক পর্যায় সজীব তার বাহিনীর লোক দিয়ে উল্টো ৩০ হাজার টাকা পাওনা দাবি করে বসেন মজিদের কাছে। হতবাগ হয় আব্দুল মজিদ। বলে চোরে মার বড়গলা। ওই ১০ হাজার টাকার না দিয়ে বরং উল্টো ৩০ হাজার টাকা সজীব তার বাহিনীর লোজজন নিয়ে এসে আব্দুল মজিদকে মারপিট এবং চাপ সৃষ্টি করে ঘটনার আগের দিন।

গত ১৬/৬/২০২০ইং তারিখে সোমবার দিবাগত রাত ৩ টার দিকে একই এলাকার সজীব,সুকচাঁদ,শিল্পী, হৃদয়, বাবু, সংগ্রাম সহ আর অজ্ঞতনামা ৮/১০জন জোর পূর্বক আমার বাড়ীতে এসে ঘুরে ঢুকে পরিকল্পিত ভাবে গ্যাস ট্যাবলেট দুধের সাথে মিশিয়ে আমার স্বামীকে খাওয়াইছে। পরে আমার স্বামী বমি করতে করতে স্বজোরে চিৎকার করলে আশপাশের পাড়া প্রতিবেশীরা ছুটে এলে তারা দ্রুত পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

পরের দিন ১৭/৬/২০২০ইং তারিখে মঙ্গলবার ওই রাতেই পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর আমার স্বামীর অবস্থার অবনতি ঘটলে সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া পথে বানেশ^র নামক স্থানে আমার স্বামী মারা যায়। কি খেয়ে বেঁচে থাকব। আমার এই ছোট ছোট শিশু বাচ্চাদের কিভাবে মানুষ করব। তাই প্রশাসনের কাছে আমার জোর দাবি আমার স্বামীকে যারা খুন করেছে তাদের সুষ্ঠ বিচার চাই, ফাঁসি চাই আমি।

নিহত মজিদের মেয়ে মীম জানান, আমার বাবা মারা যাওয়ার আগে জবান বন্দি দিয়ে যায় এলাকার চিহিৃত বাবু, সংগ্রাম ও উল্লেখিত লোকজনের সাথে এসে জোরপূর্বক দুধের সাথে গ্যাস ট্যাবলেট মিশিয়ে আমাকে খাওয়ায়। আমি সজীবের কাছে ধার দেয়া ১০ হাজার টাকা চাওয়ায় সে লোকজন নিয়ে এসে ঘরের ভিতরে ঢুকে ঝাঁপটে ধরে জোরপূর্বক করে আমার মুখে দুধের সাথে গ্যাস ট্যাবলেট মিশিয়ে খাওয়ায়।

প্রতিবেশি হামজাল প্রামানিক জানান, শুনেছি মজিদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা হাওলাত নিয়েছে সজীব। এই টাকা নিয়ে অনেক দিন ধরে কানা ঘোষা হতো। তবে আব্দুল মজিদ একজন দিনমজুর ও সাদাসিদে সরল সোজা মানুষ ছিলেন। তাকে আমি ছেলের মত দেখতাম। সে মারা যাওয়া এক সাজানো নাটক ও পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে মনে করি আমি। মজিদ মারা যাওয়ায় শোকে আমার ছেলে আব্বাস দুই দিন না খেয়ে ছিল।

তবে এলাকাবাসি বলেছে ঘটনার আগের দিন সন্ধায় এবিষয়ে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রজব আলীর মাধ্যমে আপোষ মিমাংসার কথা ছিল। কিন্তু কোনো কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে রজব আলী এবিষয়ে মুখ খুলতে রাজী নয়। তবে এলাকাবাসি আরও বলছে এই টাকার জন্য পরিকল্পিতভাবে আব্দুল মজিককে হত্যা করা হয়েছে। এটা দুঃখজনক। বিষয়টি সুষ্ঠ তদন্ত করলে থোলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে বলে ধারণা করছেন অভিজ্ঞ মহল।

এঘটনায় পাবনা বিজ্ঞ আমলী আদলতে-২, মামলা নং ৪৩২০। ফোজদারী দন্ড বিধি ৩০২/১১৪ ধারায় একটি মামলা হয়েছে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর