সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৭ অপরাহ্ন

ই-পেপার

শিরোনাম :
শিরোনাম :
ভাঙ্গুড়ায় রাতের আঁধারে গাছ কেটে ফেলল দুর্বৃত্তরা অভয়নগরে সৌন্দর্য বিলাচ্ছে মাঠভরা হলুদ, সরিষার ব্যাপক ফলনের সম্ভাবনা; কৃষকের মুখে হাসি সড়কের ব্রিজ ভেঙ্গে মরণফাঁদ চরম  দুর্ভোগে পথচারীরা বাগেরহাটে উন্নত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ ও ব্যবস্থাপনা শীর্ষক কর্মশালা উদ্ভোধন সাতক্ষীরায় সাংবাদিক হত্যা চেষ্টা মামলায় ৪ দিন অতিবাহিত,আটক হয়নি সন্ত্রাসী রমজান বাহিনীর প্রধান দৌলতপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের শুভ উদ্বোধন  অভয়নগরে সাবেক চেয়ারম্যান কামাল গ্রেফতার “ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও কেওক্রাডং বাংলাদেশ এর উদ্যোগে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে হলো ‘কোস্টাল ক্লিনআপ’”

‘বাবা আমাকে নিয়ে যাও ; আমি সারা জীবন জেলখানায় থাকবো

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০২০, ৯:৪০ অপরাহ্ণ

মোঃ কামাল হোসেন যশোর থেকে:

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হয়ে নিহত তিন জনের একজন পারভেজ হাসান রাব্বি(১৬)। রাব্বি বোধহয় আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল যে খুব খারাপ কিছু একটা ঘটতে চলেছে। তাইতো নিজের মৃত্যুর সাত দিন আগে পরিবারের কাছে জানিয়েছিলো নিজের আর্তি । রাব্বি তার বাবাকে সেদিন বলেছিল, “বাবা আমি আর এখানে থাকতে চাইনা। আমার জন্মনিবন্ধন সংশোধন করে আমাকে প্রাপ্ত বয়স্ক দেখিয়ে এখান থেকে নিয়ে যাও। আমি সারা জীবন জেলখানাতে থাকবো তবু এখানে থাকবো না।”   সন্তানের কথা শুনেছিলেন বাবা রোকা মিয়া এবং তিনি যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ছেলেকে অন্যত্র নিতে রাব্বির জন্মনিবন্ধন সংশোধনের চেষ্টা ও চালিয়েছেন। কিন্তু তিনি তা করতে ব্যর্থ হন। রোকা মিয়া সন্তানকে শান্তনা দেন যে  তাকে দ্রুত ছাড়িয়ে নিয়ে যাবেন তিনি। বলেন একটু অপেক্ষা করতে।

 

অপেক্ষার পালা শেষে হল ঠিকই, তবে রাব্বির জায়গায় ফিরল তার নিথর দেহ। এমন মৃত্যুতে খুলনার দৌলতপুর থানার পশ্চিম সেনপাড়া এলাকায় চলছে শোকের মাতম। পরিবারের একমাত্র পুত্র সন্তানকে হারিয়ে মা পারভীন বেগম মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থেকে নির্মম এমন মৃত্যু পরিবারসহ এলাকাবাসী কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। দৌলতপুর থানাধীন পশ্চিম সেনপাড়ার বাসিন্দা খুলনা বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মো. রোকা মিয়ার একমাত্র পুত্র মো. পারভেজ হাসান রাব্বি বন্ধু মহলের বিরোধে গত বছরের ৩১ আগস্ট একই এলাকার মোস্তফা ফরাজীর পুত্র মো. জনি ফরাজী (১৮) হত্যা মামলার চার্জশীট ভুক্ত আসামী ছিলেন। জনি ফরাজী হত্যায় তার পিতা মোস্তফা ফরাজী বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় হত্যা মামলা করেন (মামলা নং ১৮, তাং ৩১/৮/১৯)।

 

মামলায় নিহত পারভেজ হাসান রাব্বি, মো. জনি ও মো. মামুনুর রশিদ লিমনকে আসামী করা হয়। আসামীরা সকলে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর হওয়ায় আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে ৮/৯ মাস আগে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। নিহত পারভেজ হাসান রাব্বি মাঝে মধ্যে পরিবারকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের খাওয়া দাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে অবহিত করতেন। সর্বশেষ রাব্বি গত বৃহস্পতিবার সকালে পরিবারকে ফোন করে জানায় এখানে সমস্যা হচ্ছে, তাকে যেন নিয়ে যায়। নিহত রাব্বির পিতা রোকা মিয়া জানান, তার পুত্র রাব্বি ফোনে জানায় এখানে ঠিকমত খেতে দেয়না –  খাবার চাইলে কারণে অকারণে নির্যাতন করা হয়। গত দুই সপ্তাহ আগে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে খাবার নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা কাটাকটি হয়েছে রাব্বি সহ কয়েকজন বন্দীর। এখানকার কর্মকর্তাদের মদদপুষ্ট কিছু বন্দীরা একজোট হয়ে তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করছে। রাব্বি আরো বলেছিল, ‘এখানকার যাদের ফোনে কথা বল্‌ তারা পাশে দাড়িয়ে থাকে। তাই কিছু বললে পরে শাস্তি দিবে।’ রোকা মিয়া বলেন, কেঁদে কেঁদে আমার ছেলে আমাকে বলে ‘বাবা আমি আর যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকতে চাইনা। আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।’ আমি ছেলেকে বলেছিলাম অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোররা এখানে থাকে। রাব্বি আমাকে বলে, ‘বাবা, আমি আর অপ্রাপ্ত বয়স্ক থাকতে চাই না।

 

আমার জন্মনিবন্ধন সংশোধন করে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। আমি সারা জীবন জেলখানাতে থাকবো তবু এখানে থাকবো না।’ আমি জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের চেষ্টা করে ব্যার্থ হই। তিনি জানান, সর্বশেষ রাব্বি বৃহস্পতিবার সকালে ফোন করে তাদেরকে জানিয়েছিল যে এখানে ঝামেলা হচ্ছে। তারা যেন রাব্বিকে নিয়ে যান। পরে ঐ দিন খবর আসে রাব্বির মৃত্যুর। রাব্বির পিতা রোকা মিয়া অশ্রুশিক্ত কন্ঠে বলেন, ‘আমি আমার ছেলের লাশ আনতে গিয়ে আহত বন্দীসহ অনেকের কাছে নির্মম নির্যাতনের কথা শুনেছি। ২/৩ দিন যাবত না খাওয়া আমার ছেলে সহ কিশোর বন্দীদেরকে প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের মদদপুষ্ট বন্দীরা মিলে অডিটরিয়ামের সিড়ি ঘরের নিচে নিয়ে গ্রীলের সাথে হ্যান্ডকাপ দিয়ে বেধে মুখে গামছা ঢুকিয়ে লোহার রড, ক্রিকেটের স্টাম্প, পাইপ, কাঠের ও বাশের লাঠি দিয়ে শরিরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ী ভাবে মারপিট করে। মুমুর্ষ অবস্থায় তাদেরকে চিকিৎসা না করে অডিটরিয়ামের মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। পানি চাইলেও তাদেরকে পানি দেওয়া হয়নি।

 

পরবর্তীতে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লে আমার ছেলেসহ আহতদেরকে হাসপাতালে নেয় কিন্তু তার আগে আমার ছেলে রাব্বি সহ নাঈম হোসেন ও রাসেল ওরফে সুজন মারা যায়। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা একই এলাকার মো. আলমগীরের পুত্র মোঃ জনি গুরুতর আহত অবস্থায় যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর