গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি:
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গের মধ্যে প্রথম প্রতিবাদকারী নির্যাতিত অসহায় সেই তিনবন্ধু প্রবীর, অশোক ও নির্মলের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিলেন নাটোরের গুরুদাসপুরের ইউএনও মো. তমাল হোসেন। প্রবীর বর্মনের অসুস্থ স্ত্রী সন্ধ্যারানীকে চিকিৎসা সহায়তা, অশোক পালের গানবাজনার জন্য আধুনিক চেঞ্জার হারমোনিয়াম ও তার অসুস্থ স্ত্রী সুরুপা পালের চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ ঋণগ্রস্থ নির্মল কর্মকারের চোখের চিকিৎসা করানোর প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এমনকি নির্মলের হার্ডওয়ার্সের দোকানে আর্থিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাসও দেন ইউএনও।
সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ওই তিন সৈনিকের পারিপারিক দুঃখ-দর্দশার করুন কাহিনী প্রকাশিত হলে ইউএনও তমাল হোসেনের নজরে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি শেষ করেই চাঁচকৈড় বাজারপাড়া মহল্লার তিন বন্ধুর বাড়িতে খোঁজ নিতে যান তিনি। এসময় এসিল্যান্ড মো. আবু রাসেল ও দৈনিক দিবারাত্রীর নির্বাহী সম্পাদক আলী আক্কাছ উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে ইউএনও তমাল হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে ওই তিনবন্ধুকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে। সুরুপা পালকে উপজেলা ¯^াস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষ ব্যবস্থায় ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার শরীরে থাকা একাধিক ফোঁড়ার অপারেশন সফল হয়েছে। সেই সাথে অসুস্থ নির্মল ও সন্ধ্যারানীকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইউএনও আরো বলেন, নির্মল কর্মকারের ব্যাংকে থাকা ঋনের লভ্যাংশ (সুদ) মওকুফের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চেয়ে যাদের জীবন তছনছ হয়ে গেছে, তাদের জন্য কিছু করতে চাই। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের স্বীকৃতি দাবির বিষয়টিও পূরণ করার চেষ্টা করবেন তিনি।
গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে গুরুদাসপুর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই তিনবন্ধুকে বীরচিত সংবর্ধনা ও সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করেছিলেন ইউএনও। উল্লেখ্য, পচাত্তরের ১৫ আগস্ট “রক্তের বদলে রক্ত চাই, মুজিব হত্যার বিচার চাই” স্লোগানে পোষ্টারিং ও লিফলেট বিতরণের অপরাধে ওই তিনবন্ধুকে আটক করে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল। তাদের পরিবারকেও রাখা হয়েছিল হুমকির মুখে। টানা ২৯ মাস কারাভোগের পর রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। তাদের জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হলেও ভাগ্যোন্নয়ন হয়নি।
তিনবন্ধু বলেন, মুজিব হত্যার ৪৪ বছর কেটে গেলেও কেউ খোঁজ নেয়নি। ইউএনও তমাল হোসেন আমাদের জন্য যেটুকু করলেন তা অবিস্মরনীয় হয়ে থাকবে।