সিরাজগঞ্জে শাহজাদপুরে করতোয়া নদী খননের স্ট্যাক দিয়ে রাখা বালু অবৈধভাবে বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন শাহজাদপুর গাড়াদহ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা সাইফুল ইসলামসহ তার দুই সহোদর সাইদুল ইসলাম এবং আব্দুল হাই।
অদৃশ্য কারণে পাউবো ও উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলেও দেশের স্বার্থে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে বালু স্তুপকৃত রাখা জমির মালিকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে বালুদস্যু আওয়ামীলীগ নেতা সাইফুল চেয়ারম্যান ও তার দুইভায়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাসহ অবৈধ বালু বিক্রির লাখ লাখ টাকা ফেরত নিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
জানা যায়, শাহজাদপুর উপজেলাধীন মশিপুর মৌজায় করতোয়া নদী ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় পুরান টেপরি গ্রামের আব্দুল বারী নিজ খরচে ড্রেজার ভাড়া করে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে। ২০২৩ সালে আওয়ামীলীগ নেতা গাড়াদহ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামসহ তার দুই সহোদর সাইদুল ইসলাম এবং আব্দুল হাই ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ক্ষমতা দাপটে আব্দুল বারির উত্তোলনকৃত বালি বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।
এ নিয়ে আব্দুল বারি সিরাজগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে মামলা এবং সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দাখিল করলে বিজ্ঞ আদালত এবং জেলা প্রশাসক সাহেব আব্দুল বারীর পক্ষে রায় ঘোষণা করে এবং সাইফুল গংকে কে বালু বিক্রির জন্য নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন।
কিন্তু প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা আদালতের আদেশ অমান্য অবৈধ ভাবে জোরপূর্বক সম্পূর্ণ বালু অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। এতে আব্দুল বারি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে আব্দুল বারি সেনাবাহিনী বরাবর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য আবেদন করলে পুনরায় সেনাবাহিনী আব্দুল বারিকে পুনরায় বালু উত্তোলনের সুযোগ দেয়। সে মোতাবেক আব্দুল বারি বালি উত্তোলন শুরু করলে আবারো বালু উত্তোলনের জন্য দুই লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে।
পরবর্তীতে চাঁদা থানায় জিডি করলেও সুরাহা না হওয়ায় দুই লক্ষ টাকা দিয়ে চাঁদা দাবি দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। গত ৫ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ উত্তোলনকৃত বালু বুঝিয়ে দিয়ে যায় ও বালু বিক্রয়ের অনুমতি প্রদান করে। আমি বালু বিক্রির প্রস্তুতি নেয়ার সংবাদ পাওয়ার পর আবারো ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাইফুল ইসলাম ও তার দুই ভাই দুই সহোদর সাইদুল ইসলাম এবং আব্দুল হাই ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে বালূ বিক্রি শুরু করে। এমনকি আব্দুল বারী বালু বিক্রি করতে গেলে তাকে হত্যাসহ নানা হুমকি দিচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবগত করলে তারাও নিশ্চুপ থাকেন। এ অবস্থায় গত ২৭ আগস্ট একদল সংবাদ কর্মী ঘটনাস্থলে গেলে কুখ্যাত সন্ত্রাস সাইফুল চেয়ারম্যানের ভাই দুই সহোদর সাইদুল ইসলাম এবং আব্দুল হাই কাগজপত্রের বলে বালু তুলছেন বলে দাবি করে। কিন্তু কাগজপত্র দেখাতে সক্ষমত হয়নি। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। এ অবস্থায় কাগজপত্র বলে প্রকৃত বালুর মালিক আব্দুল বারীকে বালু উত্তোলনে সহায়তা প্রদানে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসীসহ জমির মালিকগন।
এ বিষয়ে জমির মালিক রেজাউল করিম সাচ্চু, রফিকুল ইসলাম চান, রাকিব হোসেন, রুহুল আমিন জানান, করতোয়া নদী খননের বালু স্ট্যাক আমাদের জমিতে রাখা হয়েছিল। গাড়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আমাদের উত্তোলিত বালু ঝোর পূর্বক ভাবে বিক্রি করে দেয়। এবারও আমাদের বালু চেয়ারম্যান ও তার লোক জন বালু বিক্রি শুরু করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেনা বাহিনীর সদস্যরা অবৈধ ভাবে বালু বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।
এ বিষয়ে আব্দুল বারী জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড জমিদাতা ও বালু উত্তোলনকারী হিসেবে আমাকে বালু বিক্রির অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের কুখ্যাত সন্ত্রাসী গাড়াদহ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও তার দুই সহোদর সাইদুল ইসলাম এবং আব্দুল হাই ঝোর পূর্বক ভাবে বালু বিক্রি করছে। অবিলম্বে আমি যেন বালু বিক্রি করতে পারি সেই ব্যবস্থার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
গাড়াদহ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলামের আব্দুল হাই জানান, আমার পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ইজারা নিয়েছি। এই স্থানের জমিগুলা ডিট করে নেওয়া হয়েছে। আমাদের বালু আমরা বিক্রি করছি। তবে সে কাগজপত্র দেখা যায়, তাদের ডিট মাকড়খোলা মৌজার বালুর ডিট রয়েছে। আর জোরপূর্বক তুলছে মশিপুর এলাকা থেকে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মোখলেছুর রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে একটু সমস্যা তৈরি হয়েছে। সমাধানের চেষ্টা চলছে।