রঙিন পোশাকে সেজে এসেছেন সবাই। সবার আগমনে একসময় মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। শতবর্ষী পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শুক্রবার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসের চিত্র ছিল এমন।
শীতের শুভ্র সকালে ঘাসের ডগায় তখনো শিশিরবিন্দু জমে আছে। ভিজে আছে পথঘাট। এরই মধ্যে আসতে শুরু করেন প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। ফুলে ফুলে সাজানো চারপাশ।
দীর্ঘদিন পর প্রিয় ক্যাম্পাসে বন্ধু-সহপাঠীরা উচ্ছ্বাস, আনন্দ, গানের ছন্দ, বাজনার তালে মেতে ওঠেন। গল্প-আড্ডা জমান বিভাগের নবীন-প্রবীণেরা।
‘উচ্ছ্বাসে উল্লাসে, নতুন আলোর উদ্ভাসে’ স্লোগানে সকাল সাতটার দিকে উপহারসামগ্রী বিতরণের মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হয়। এরপর আনন্দ শোভাযাত্রা। কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে বের হয়ে এটি জেলা শহর প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বিভাগের প্রাক্তন, বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
শোভাযাত্রা শেষে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে শুরু হয় ফ্ল্যাশ মব। মনোমুগ্ধকর এই পরিবেশনায় মুহুর্মুহু করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। এরপর ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ ও জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল আয়োজন।
পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের যাত্রা ১৯০৬ সালে। এটি পূর্ণাঙ্গ কলেজে রূপ নেয় ১৯১১ সালে। আর কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭২ সালে।
গত ৫০ বছরে ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা সহপাঠী ও অগ্রজ-অনুজদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠেন। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রায় সবাই মুঠোফোনে ছবি তোলেন।
উৎসবে অংশ নেওয়া রাকিবুল ইসলাম রনি বলেন, ‘প্রায় দুই যুগ পর প্রিয় ক্যাম্পাসে এসেছি। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলো। সবাই মিলে অনেক আনন্দ করছি। এই ভালো লাগা ভাষায় প্রকাশের মতো নয়।’
১৯৭৮ সালে বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন সালেহ আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘নিজের ক্যাম্পাস সব সময় আবেগের, ভালো লাগার। কত স্মৃতি এখানে। জীবিকার তাগিদে ফিরে দেখা হয় না। পুনর্মিলনীর ডাক পেয়ে এসেছি। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলো। মনটা আজ অনেক ভালো।’
এ আয়োজনে বর্তমান ব্যাচগুলোর শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছেন। তাঁদের একজন মুরাদ হোসেন,
নিজের উচ্ছ্বাসের কথা জানিয়ে বলেন, সব মিলিয়ে মনে রাখার মতো একটি দিন উদ্যাপিত হলো।
১৯৯৩ সালে ব্যবস্থাপনা বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন শিক্ষক শামসুল বারী। তিনি বলেন, ‘সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ শতবর্ষী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কলেজের শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের পর এটাই সবচেয়ে বড় আয়োজন বলে মনে হচ্ছে। বহুদিন পর ক্যাম্পাসে এসে প্রাক্তন ছাত্রদের সঙ্গে দেখা হলো। খুব ভালো লাগছে।’
বিভাগের ৫০ বছর পূর্তিতে এ আয়োজনে সবাই আসায় নিজের ভালো লাগার কথা জানান অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক নূরুল আলম।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মাহবুব আলম বলেন, ‘এটা শুধু আনন্দ আয়োজন নয়, নবীন-প্রবীণের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের আয়োজন। সবাই সবার সঙ্গে মিলছে, কথা বলছে। এতে অভিজ্ঞতার একটা বিনিময় হবে। নবীনেরা অনেক কিছু জানতে পারবে।