সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আইন উপেক্ষা করে তিন ফসলি জমিতে অবাধে গণহারে পুকুর খনন করা হচ্ছে। এতে সব চেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছেন প্রান্তিক কৃষকরা। যত্রতত্র অবৈধ পুকুর খনন করায় পানি নিষ্কাশনের ক্যানেল গুলো বন্ধ হয়ে বিস্তীর্ণ মাঠের জমিতে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। বছরের পর বছর ধরে আবাদযোগ্য জমি অনাবাদি হিসেবে পড়ে থাকছে। ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, তিন ফসলি জমিতে দিন-রাত অবাধে পুকুর খনন করা হচ্ছে। কৃষকরা নিরুপায় হয়ে নিমগাছি আর্মি ক্যাম্পে জানালে তারা বুধবার দিবাগত রাত ৯টা থেকে ১২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত প্রায় সব পুকুরে অভিযান চালায়। এ সময় তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করার দায়ে কয়েক জন ভেকু্ মেশিনের চালককে আটক করা হয়।
নিমগাছি আমি ক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আকবার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অবৈধ পুকুর খননকারীদের ক্যাম্পে ডেকে বুঝিয়েছি। তারা আবাদযোগ্য উর্বর জমিতে পুকুর খনন করবেন না মর্মে মুচলেকা দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন উপেক্ষা করে তাড়াশে কোনো পুকুর খনন করতে দেওয়া হবে না।
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২০২৩-এর ১৩ ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে ‘যদি কোনো ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের অনুমতি ব্যতিরেকে আবাদযোগ্য বা কর্ষণীয় জমির উপরি- স্তর কর্তন করেন অথবা জমির রেকর্ডীয় মালিকের বিনা অনুমতিতে জমিতে বালু বা মাটি দ্বারা ভরাট করেন, তাহলে তাহার অনুরূপ কার্য হবে একটি অপরাধ। তজ্জন্য তিনি অনধিক দুই বছর
কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। ১৯ ধারায় এই আইনের সব প্রকার অপরাধকে আমলযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। চাইলেই বিচারপ্রার্থীরা ভূমি অপরাধ সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে এই আইনের অধীনে স্থানীয় এক্তিয়ারভুক্ত থানাতেই মামলা দায়ের করতে পারবেন এবং সেক্ষেত্রে ঐ থানার পুলিশ বিনা পরোয়ানায় অভিযুক্তকে আটক করতে পারবেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নওগাঁ ইউনিয়নের ভায়াট গ্রামে খালকুলা সড়কের মসজিদের পশ্চিম পাশে বড়-বড় কয়েকটি পুকুর খনন করা হচ্ছে। খালকুলা-মহিষলুটি সড়কের পার্শ্ব রাস্তার দক্ষিণে প্রায় অনুরূপ আয়তনের পুকুর খনন করা হচ্ছে তিনটি ভেক্যু মেশিন লাগিয়ে। মহিষলুটি-নওগাঁ সড়কের পশ্চিমে একই জায়গাতে একটি ৫২ বিঘা দুইটি ২০ বিঘা ও একটি ১৭ বিঘা আয়তনের পুকুর খনন করা হচ্ছে চারটি ভেকু মেশিন দিয়ে। বিরৌহালী গ্রামের বিরৌহালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিমে পুকুর খনন চলছে। মহিষলুটি সড়কের পশ্চিম পাশে গোয়াল গ্রামে ১৭ বিঘা পুকুর খনন হচ্ছে। মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের মাগুড়া-নাদোসৈয়দপুর সড়কের মধ্যে কাটা গাঙ সেতুর সঙ্গে পুকুর খনন হচ্ছে তিন ফসলি জমিতে। নওগাঁ ইউনিয়নের সাকুয়াদীঘি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, পুকুর খননকারীরা ফসল নষ্ট করে জোরপূর্বক পুকুর খনন করছেন আমার জমিতে। টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না, জমিও বুঝিয়ে দিচ্ছেন না।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুইচিং মং মারমা বলেন, অবৈধ পুকুর খনন করার অপরাধে থানায় দুইটি মামলা করা হয়েছে। তাছাড়া ভ্রাম্যমাণ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।