দল গোছাতে ব্যস্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উল্লাপাড়া উপজেলা শাখার নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন রাজনৈতিক কর্মকান্ড গোপনে পরিচালনা করলেও বর্তমানে প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা’র সরকার পতনের পর তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড কোন বাধানিষেধ থাকছে না । উপজেলার প্রতিটি দলীয় কর্মকান্ড সরকারি প্রোগ্রামে স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে তারা।
উল্লাপাড়ার প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং গ্রাম পর্যায়ে তাদের বিচরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। বিগত আওয়ামী লীগের সময়ে উল্লাপাড়ায় রাজনৈতিক মামলায় শিকার সংগঠনটির ১০০০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী। প্রতিটি মামলা ছিলো রাজনৈতিক পুলিশ বাদী মিথ্যা এবং হয়রানি মূলক৷ দীর্ঘদিন মামলা চললেও এই শতাধিক মামলার একটিরও বিচার কার্য শেষ করতে পারেনি আদালত। কাউকে দোষী প্রমাণ করা যায়নি। কিন্তু এই মামলা গুলোতে কারাভোগ করেছে ৯ শতাধিক এর বেশি নেতাকর্মী। অনেকেই পুলিশের হয়রানির ভয়ে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। যাদের কে অভিযুক্ত এবং মামলার বিবরণে যা বলা হয়েছে সংগঠনটির দাবি এটি মিথ্যা এবং সাজানো ঘটনা। বিগত সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা পুলিশের সাথে সংঘর্ষ অন্তত ৫ জন নেতাকর্মী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। জামায়াতের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট অন্তত ৫ হাজারের বেশি জনশক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছে। উপজেলার বাখুয়া গ্রামের আতাউর রহমান নামে জামায়াতের নেতার দোকান বন্ধ করে দেয় আওয়ামী লীগের লোকজন। একই গ্রামের জামায়াত নেতা সাইদুর রহমান পেশায় ব্যবসায়ী,তিনি উল্লাপাড়া সদর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি। তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, পরবর্তী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হিসেবে দেখানো হয়।এরকম আরো অনেক ঘটনা রয়েছে উপজেলায়। ২০১৪ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় পূর্বদেলুয়া পুলিশের গুলিতে মাহফুজ নামে এক যুবক নিহত হয়। এসকল ঘটনায় আসামি করা হয়েছে শতাধিক জামায়াত বিএনপির নেতাকর্মী।
শতঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে আবারও নতুন দিগন্তের সূচনা করতে কাজ করে যাচ্ছে উল্লাপাড়া উপজেলা জামায়াতের নেতাকর্মী। এই উপজেলায় ২০০৮ সালে জামায়াত থেকে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে নির্বাচন করেন বর্তমান জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খাঁন।
ছাত্র জীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি এবং পরবর্তীতে শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন,তিনি রাজশাহী বিশ্বিবদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট সদস্য,তিনি বর্তমানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, জামায়াতের এই হেভিওয়েট নেতার বাড়ি উল্লাপাড়া উপজেলায় হওয়াতে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী করে ভোট পায় ৯৮ হাজারের বেশি এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম ১ লাখ ৬২ হাজার ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়। বিএনপি থেকে এম আকবর আলী ২০ হাজার ভোট পায়। সেসময় রফিকুল ইসলাম খাঁন বিএনপি ও জামায়াত থেকেই ভোট পেয়েছে। বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমান নির্যাতিত দল হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে জামায়াতে ইসলামীর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। এদের নেতাকর্মীরা তাদের দলের নির্যাতিত নেতাকর্মী ও পরিবারের পাশে থেকে এজন্য তারা রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ করেননি।
সিরাজগঞ্জ-৪ উল্লাপাড়া আসনে জামায়তের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খাঁন নির্বাচন করলে বিএনপি সুবিধা করতে পারবে না বলে মনে করেছে দলটির নেতাকর্মী। তবে উল্লাপাড়ার আসেন বিগত সময়ে দেখা যায় বিএনপির ভোট বেশি রয়েছে। বিএনপি থেকে নির্বাচন করলে জামায়াতের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক নির্বাচন হবে।
উপজেলা শ্রমিক ফেডারেশনের সহকারী সেক্রেটারি এসএম আল-আমীন হোসেন বলেন তারা এখন সাংগঠনিক কাজ নিয়ে ব্যস্তসময় পার করছেন। জামায়াতের এই নেতা জানান উল্লাপাড়ায় জামায়াতে ইসলামী আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে কমিটি রয়েছে, এরআগে সবাই গোপনে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বর্তমানে প্রকাশ্যের করছে।
উল্লাপাড়া উপজেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক শাহজাহান আলি জানান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি আদর্শিক দল। আমরা নীতি এবং নৈতিকতা নিয়ে রাজনীতি করি। দীর্ঘদিন এই সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার জামায়াতের নেতাকর্মী। তবুও তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ হয়নি। তিনি দাবি করেন উল্লাপাড়ায় আগের চেয়ে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ আরো শক্তিশালী এবং জনপ্রিয়।