রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

সিরাজগঞ্জে মিল্কভিটার গো-চারণ ভূমিতে ঘাসের বদলে আবাদ হচ্ছে ফসল

ডা.এম.এ.মান্নান,স্টাফ রিপোর্টার:
আপডেট সময়: শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮:৫০ অপরাহ্ণ

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় মিল্কভিটার নামে সরকারীভাবে বরাদ্ধকৃত গো-চারণ ভূমির প্রায় ২শ বিঘা জমিতে ঘাস চাষের পরিবর্তে শসাসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করা হচ্ছে। স্থানীয় দুগ্ধ সমিতি এবং মিল্কভিটার কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে এসব জমি ইজারা নিয়ে কৃষকরা ফসল চাষ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ফসল চাষীরা লাভবান হলেও গো-চারণ ভূমি কমে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন গো-খামারীরা। উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের বৃ-আঙ্গারু এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে।
শসা চাষী জাবেদ সরকার জানান, বৃ-আঙ্গারু গ্রামের প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী একটি সমবায় সমিতির সভাপতি হাজী আব্দুল লতিফ এবং আরেকটির ম্যানেজার তাহেজ আলীর কাছ থেকে ১২ থেকে ১৬ হাজার টাকা বাৎসরিক চুক্তিতে প্রতি বিঘা জমি ইজারা নিয়ে শসা চাষ করছি। জমির ধরন পরিবর্তন বিষয়ে বলেন, আমরা এতো কিছু জানি না, টাকার বিনিময়ে জমি ইজারা নিয়ে শসা চাষ করছি। যারা ইজারা দিয়েছে তারা এ বিষয়ে ভাল বলতে পারবেন।
আরেক চাষী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মিল্কভিটার আওতাধীন গো-চারণ ভূমির প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে শসা চাষ হচ্ছে। সবাই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব জমি ইজারা নিয়েছেন।
বৃ-আঙ্গারু সরকার পাড়ার প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেডের ম্যানেজার তাহেজ আলী জানান, শুনেছি বিঘা প্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা বাৎসরিক চুক্তিতে সমিতির সভাপতি শসা চাষীদের মাঝে গো-চারণ ভূমির জমি ইজারা দিয়েছেন। এসবের সাথে আমি জড়িত নই।
অভিযোগ অস্বীকার করে দক্ষিণ বাঙ্গালপাড়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি হাজী মোঃ লতিফ জানান, কোন শসা চাষীকে গো-চারণ ভূমি ইজারা দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি মিল্কভিটার উপ-মহা ব্যবস্থাপক ডাঃ মো: ছাইদুল ইসলাম জানান, ঘাস চাষ করার জন্য গো-চারণ ভূমির প্রতি একর জমি মাত্র দুই হাজার টাকার বিনিময়ে গো-খামারীদের মাঝে বাৎসরিক ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন কার্যালয়। এখানে অন্য কোন ফসল আবাদ করার নিয়ম নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) লিটুস লরেন্স চিরাং জানান, গো-খামারীদের মাঝে ইজারা দেওয়া গো-চারণ ভূমি অন্য কোন ফসল আবাদের কোন সুযোগ নেই। পাশাপাশি অন্য কাউকে ইজারা দেওয়ারও নিয়ম নেই। এ বিষয়ে খোজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, শাহজাদপুর উপজেলার বুড়ি পোতাজিয়া, দখলবাড়ি, রামকান্তপুর, হাড়নি, রাউতবাড়ি, পশ্চিম খারুয়া, নাগডেমরা, বিলচান্দ, বৃ-আঙ্গারু ও রতনপুর এই মৌজা গুলোর আওতায় বিল এলাকায় ১১৭৯ দশমিক ৮৩ একর সিএস খতিয়ানভুক্ত সরকারী খাস জমি রয়েছে। তৎকালীন জমিদার গগেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সমেরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অবেন্দনাথ ঠাকুর এই জমিগুলোর দখলদার ছিলেন। জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের নামে এসব জমি এস.এ খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। ১৯৮২ সালে ওই সব জমির মধ্যে থেকে ১,০৩০ একর খাস জমি গেজেট আকারে গো-চারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার করার জন্য মিল্কভিটার অনুকুলে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ইজারা প্রদান করা হয়। সমবায় মন্ত্রনালয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং মিল্কভিটার প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত কমিটি গো-চারণ ভূমিগুলো মিল্কভিটার তালিকাভুক্ত প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির নামে বাৎসরিক ইজারা দিয়ে আসছে। এই গো-চারণ ভূমি গবাদিপশুর লালন পালন এবং দুধের উৎপাদন বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর