স্বল্প জায়গায় অধিক মাছ উৎপাদন ও লাভজনক হওয়ায় পাবনার আটঘরিয়ায় আধুনিক এয়ারেটর প্রযুক্তিতে বাড়ছে মাছের চাষ। এই মাছচাষ প্রযুক্তিতে একদিকে যেমন পানির অক্সিজেন বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে মাছের ক্ষতিকারক গ্যাস হতে মাছকে রক্ষা করছে। এর ব্যবহারের ফলে একই পুকুরে ২-৩ গুন অধিক ঘনত্বে মাছচাষ সম্ভব বলে জানান মৎস্য চাষীরা। আটঘরিয়া মৎস্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য মতে, বর্তমানে আটঘরিয়ায় মোট পুকুরের সংখ্যা রয়েছে ৪৬৬২ টি, একল পুকুরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১০২০০ মেট্রিক টন যার বর্তমান বাজারে চাহিদা রয়েছে ৪৬০০ মেট্রিক টন। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫৬০০ মেট্রিক টন মাছ। আটঘরিয়ার চাঁদভা ইউনিয়নের বেরুয়ান গ্রামের সফল মৎস্য খামারি মো. আমজাদ হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রায় ২৫ বছর যাবত মাছ চাষ করেছেন তিনি। বর্তমানে নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন মৎস্য খামার। আমজাদ হোসেন আধুনিক এয়ারেটর পদ্ধতির ব্যবহার করে তার খামারে এখন রুই, কাতল, সিলভার কাপ, মৃগেল, জাপানি পুঁটি, বাটাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছেন। আমজাদ হোসেন জানান, এক হেক্টর পুকুরে বছরে ২২ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করে থাকেন তিনি। সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে প্রায় ১২ লাখ টাকা লাভ করেন বলে জানান এই মৎস্য খামারি। সবমিলিয়ে বর্তমানে তিনি প্রায় ৪ হেক্টর পুকুরে মাছের চাষ করছেন। কথা হয় বেরুয়ান গ্রামের মৎস্য খামারি রফিকুল ইসলাম, রুহুল আমিন, ফুরকান হোসেন, নুরুল ইসলামের সাথে তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তারা। আগে সনাতন পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলেও বর্তমানে এয়ারেটর পদ্ধতির মাধ্যমে মাছ চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন এই মৎস্য খামারিরা। তারা জানান, এয়ারেটর এর মাধ্যমে মাছের খাবি খাওয়া ও ভেসে উঠা নিয়ন্ত্রণ করে এবং পুকুরে পুষ্টি ও অন্যান্য উপাদানের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এছাড়াও পুকুরের পানি বিশুদ্ধকরণে সহায়তা করাসহ মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কথা হয় বাড়ইপাড়া এলাকার আরেক মৎস্য খামারি মো. আজহার শেখ এর সাথে তিনি জানান, এয়ারেটর পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ করে পানির গুণগতমান উন্নত করে। এছাড়াও এয়ারেটর ব্যবহারের ফলে ক্ষতিকারক নীল-সবুজ শেওলাগুলির পরিবর্তে কম ক্ষতিকারক সবুজ শেওলা উৎপন্ন হয় এবং পুকুরে মাছের উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে যায়। এই পদ্ধতিতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে জানান তিনি। আটঘরিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা উপজেলা মৎস্য দপ্তরের পক্ষ থেকে চাষীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে উন্নত বিষয়ে মাছ চাষের প্রদর্শনী দিয়েছি এবং যার মাধ্যমে পুকুরে এয়ারেটর স্থাপন করা হয়েছে। তিনি জানান, যদি কোন পুকুরে এয়ারেটর থাকে তাহলে কম যায়গাতে অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ করা যায়। বর্তমানে পুকুরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী মৎস্য খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষে আমরা কাজ করছি। এছাড়াও দিন দিন এই উপজেলাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরী হচ্ছে যার ফলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি খামারিরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে বলে জানান তিনি। আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহারুল ইসলাম বলেন, মাছে ভাতে বাঙালি নামে পরিচিত আমাদের এই দেশ। তার মাঝে আটঘরিয়া যেমন প্রাকৃতিক মাছে সমৃদ্ধ তেমনি আবদ্ধ জলাশয়গুলোতেও মাছ চাষে বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। শুকনা মৌসুমে এই ধরনের মাছ চাষের মাধ্যমে দেশে আমিষের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে। তিনি জানান, এই প্রদশর্নী খামারের মাধ্যমে জানতে পারলাম বিভিন্ন পুকুরে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ হচ্ছে। যদি আমরা বিভিন্ন সহযোগিতা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে আধুনিক বিভিন্ন সরঞ্জাম দিতে পারি এবং যুব সমাজ যদি নতুন আঙ্গিকে মাছ চাষ করে তাহলে আমাদের দেশ মাছ চাষ আরও সমৃদ্ধ হবে আরও উন্নত পর্যায়ে পৌঁছিয়ে যাবে এবং আমরা অর্থনৈতিক ভাবে আরও লাভবান হবো।