অবসরে গিয়েও প্রেসক্রিপশন, ভেটেরিনারি সেবা, টাকা আদায় সবই চলছে সরকারি বিধির চোখে ধুলো দিয়ে। যশোরের অভয়নগর উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরের অধীন পশু হাসপাতালে এক অদ্ভুত অব্যবস্থা চলে আসছে দীর্ঘদিন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত সময়ে অফিসে থাকেন না, আর সেই ফাঁকেই হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী বিকাশ চন্দ্র রায়ের হাতে। তিনি সরকারি চাকরি থেকে দেড় বছর আগে অবসরে গেলেও এখনো নিজেকে পশুচিকিৎসক পরিচয় দিয়ে নিয়মিত বসছেন হাসপাতালে—এবং প্রেসক্রিপশনও দিচ্ছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকাশ চন্দ্র প্রতিদিন হাসপাতালের একটি ঘরে চেয়ারে বসে রোগী দেখছেন। সরকারি আইন অনুযায়ী অবসরপ্রাপ্ত কেউ চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন না। কিন্তু তিনি সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পশুচিকিৎসার নামে টাকা তুলছেন লাখে লাখে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিটি চিকিৎসা, ইনজেকশন, পরীক্ষা–সব ক্ষেত্রেই তিনি অতিরিক্ত টাকা নেন। পাশাপাশি ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছ থেকে মাসোয়ারা নেওয়ার অভিযোগও বহু পুরোনো। অস্থায়ী প্রশিক্ষণরত ভেটেরিনারি কর্মীরা সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায়। তাদের ভাষ্য—বিকাশ চন্দ্র নিয়মিত ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিমাসে ২-৩ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। কেউ প্রতিবাদ করলে চাকরি বা কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। হাসপাতালের সঙ্গে থাকা কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, বিকাশ চন্দ্র রাজনৈতিক ছত্রছায়া পেয়ে এতদিন অপ্রতিরোধ্য ছিলেন। আগের সরকারের সময় তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাদের সাপোর্টেই হাসপাতালে তার ‘অঘোষিত আধিপত্য’ তৈরি হয়। বিকাশ চন্দ্র রায়ের সঙ্গে কথা বললে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে প্রেসক্রিপশন দেওয়ার বিষয়টি এড়াতে পারেননি। তিনি বলেন,
“আমি অবসরপ্রাপ্ত ঠিকই, কিন্তু আমার স্থলে অন্য ডাক্তার না থাকায় দায়িত্বটা আমিই পালন করছি। মৌখিক অনুমতি আছে। লিখিত অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নীরব থাকেন। অভয়নগর উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সার্জন মো. শামছুল আরেফিনের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। অফিসে পাওয়া যায়নি, তার ফোন নম্বরেও বারবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। স্থানীয়দের দাবি একটাই অবৈধ চিকিৎসা, দুর্নীতি আর ভয়ভীতির দাপটে হাসপাতালের সেবা ধ্বসে পড়েছে। যথাযথ তদন্ত হলে পুরো ঘটনাই স্পষ্ট হয়ে যাবে। দেশের প্রাণিসম্পদ সেবার স্বার্থে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে দিনদিন।