১৪ই শাবানের দিবাগত রাত লাইলাতুল বারাআত বা শবে বারাআত নামে অভিহিত, এই পবিত্র রাতে নিহিত রয়েছে মানবতার মুক্তি ও কল্যাণ, তেমনি রয়েছে বহু তাৎপর্য, ফজীলত ও বরকত,অন্যদিকে মাহে শা’বান রামাজানের পূর্বের মাস হওয়ার কারনে মূলতঃ এটি মাহে রামাজানের সাধনা ও অধ্যাবসায়ের পূর্ব প্রস্তুতির মাস,তাই তো মহানবী সাঃ এরশাদ করেন শা’বান আমার মাস আর রামাজান মহান আল্লাহর মাস,শা’বান মাসের ১৫তম রাত্রি বা শবে বারাআত সম্পর্কে রাসূলে কারীম সাঃ এরশাদ করেন ”তোমরা শবে বারাআতের রজনীতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে এবং দিনের বেলায় রোযা রাখবে।” ( মিশকাত)লাইলাতুল বারাআত শব্দের অর্থ গুনাহ থেকে মুক্তির রজনী,বস্তুতঃ এই রজনীতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে গুনাহগার বান্দাদের গুনাহ মাফের উত্তম সুযোগ প্রদান করা হয়ে থাকে,প্রিয়নবী সাঃ ইরশাদ করেন – তোমাদের সামনে যখন শা’বানের ১৫তম রজনী উপস্থিত হয় তখন তোমরা সে রাত্রটি জাগ্রত থেকে ইবাদতে কাটাও আর দিনের বেলায় রোযা রাখ, কারন এ দিনের সূর্যাস্তের পরক্ষণই আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আকাশে নূরের তাজাল্লীর বিচ্ছুরণ ঘটান এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষনা করা হয়- এমন কোন গুনাহগার বা নাফরমান ব্যক্তি আছো কি – যে আমার সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা করবে? আমি তার গুনাহ মাফ করে দিব, কোন দারিদ্রক্লিষ্ট আছে কি, যে কষ্ট মেটানোর জন্য আমার কাছে দুয়া করবে? আমি তার জন্য আমার রিযিকের ভান্ডার উন্মুক্ত করে দিব,
কোন বিপদগ্রস্ত আছে কি- আমার নিকট বিপদ বিপদ থেকে মুক্তি প্রার্থনা করবে? আমি থাকে বিপদমুক্ত করে দিব,রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন সারারাত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সূর্য উদিত হওয়া পূর্ব পর্যন্ত এরুপ ঘোষণা দেয়া হয়ে থাকে এবং বান্দাদের উপর আল্লাহর অজস্র ধারায় রহমত নাযিল হয়ে থাকে।(ইবনে মাজাহ,১৫৫)
হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন একদা রাসুলুল্লাহ সাঃ আমাকে সম্বোধন করে বললেন তুমি কি জান এ রাত্রে অর্থাৎ শবে বারাআতের রাত্রে কি রয়েছে? আমি বললাম ইয়া রাসুলুল্লাহ সাঃ দয়া করে একটু বলুন – এ রাত্রে কি রয়েছে? রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন আগামী এক বৎসর যত আদম সন্তান এই পৃথিবীতে জন্ম নিবে এবং যারা মৃত্যুবরণ করবে এরাত্রে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়,বিশেষ করে এরাত্রে বান্দাদের আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় এবং রিযিক অবতীর্ণ করা হয়,মিশকাত -১ঃ১১৫)
এরাতের গুরুত্ব ও ফজিলতের আরো বহু হাদীস রয়েছে,
তার মধ্যে কিছু বিষয় রয়েছে
১.এ রজনীতে মহান আল্লাহর দরবারে মানুষের আমলনামা পেশ করা হয়,
২.এ রজনীতে মহান আল্লাহ মুমিন বান্দাদের প্রতি তার বিশেষ অনুগ্রহ বর্ষণ করেন,
৩.শবে বারাআতের এ পূণ্যময় রজনীতেই পরবর্তী এক বছরের মৃতবরণকারীদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়,
৪.এ রজনীতেই পরবর্তী এক বছরের রিযিক নির্ধারন করা হয়,
৫. এ রজনীতেই মহান আল্লাহ সূর্যাস্তের পর থেকে পৃথিবীর আকাশে তাসরিফ আনেন এবং ফজর অবধি নিয়ে জ রহমতের কৃপা বিতরণ করতে থাকেন,
৬এ রজনীতে বিশেষ কিছু অপরাধী ছাড়া নেক আমলে মগ্ন বাকি সব অপরাধীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়।
৭. এ রজনীতে মহান আল্লাহ নিজ বান্দাদের ক্ষমা ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান প্রার্থনার জন্য আহবান করতে থাকেন এবং যারা যা প্রার্থনা করে তাদেরকে তা দান করেন,
আমাদের করনীয়
এরাতে কবর যিয়ারত করা সূন্নাত,তবে তা পুরুষদের জন্য,এ রাতের জন্য নির্দিষ্ট কোন ইবাদত নেই, তাই এ রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত তথা কুরআন শরীফ বেশি বেশি তিলাওয়াত করা,দরুদ শরীফ অধীক পাঠ করা,নফল নামাজ পড়া,যিকির – আযকার তসবীহ তাহলীল পাঠ করা উচিত,নফল নামাজের কোন পরিমান নেই , বরং সামর্থ অনুযায়ী একা একা যত খুশি নফল নামাজ পড়া,উমরী কাজা পড়া,সালাতুত তাসবীহ’র নামাজ পড়া,এবং পরের রোযা রাখা,নিজের জন্য পরিবারের জন্য ও মৃত্যু ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করা,তবে কোন অবস্থায় ফজরের নামাজ কাযা করা যাবে না,আলোকসজ্জা করা যাবেনা,পটকা ফুটানো যাবেনা,মোমবাতির বহর জালানো যাবেনা,মাজারে গিয়ে শিরকে লিপ্ত হওয়া যাবেনা,কেননা মহান এ রাত্রিতে শিরক ব্যতিত সকল গুনাহ করবেন,মহান আল্লাহ আমাদের সজলকে আমল করার তাওফিক দান করুন।আমীন।