মায়াবতী ও দয়াল কুমারের সংসার বেশ ভালই কাটছে। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে দুজনে রাজদরবারের পাশে পুকুর পাড় ও পার্কে ঘুরতে যায় । তিন বেলায় খাওয়ার সময় দুজন একে অপরকে খাইয়ে দেয় । একজন এক মুহুর্ত ও অন্যকে ছাড়া থাকতে চায় না। মায়াবতী বলেছিল, অনেকদিন হলো তার মা-বাবাকে দেখছে না। একটু বাবার বাড়ীতে যাবে। তখন দয়াল বলে তোমার সাথে আমিও যাবো। অথচ তখন সে এক গুনীজনের কাছে রাজ্যের পরিচালনার কৌশল শিখছিল। রাজা বলছিল, রাজকীয় মর্যাদায় মায়াবতীকে পেয়াদা ও সেনা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রটৌকল দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি, তোমার যাওয়ার দরকার নেই। দয়াল একদম নাছোড় বান্দা। সে মায়াবতীর সাথে যাবেই। শেষে তালিম নেয়া বন্ধ করেই সে মায়াবতীর সাথে তাদের বাড়ী যায়। মায়াবতীদের বাড়ীতে তারা বেশ কয়েকদিন বেশ আনন্দে দিন কাটে। পুরনো অভ্যাস পাখি শিকার ও করে। তারপর বাড়ী থেকে খবর আসে দয়াল তার মার অসুস্থ্যতার কথা শুনে মায়াবতীকে সাথে নিয়ে বাড়ী ফেরে। অল্প কয়েকদিন পর রাজপরিবারে একটি খুশির খবর রটে যায় যে, দয়াল কুমার সন্তানের পিতা হতে চলেছে। এ খবর শুনে রাজ পরিবার তথা রাজ্যবাসীর মনে আনন্দের বন্যা বয়ে যায় ।
সন্তানের সাদ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে রাজ্যের সকল রাস্তায় আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়। রাজ্যের সকল মানুষকে সাদ অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হয়। রাজা -রানী চিন্তা করেছিল, যেহেতু ছেলের পুনরায় বিয়ের অনুষ্টান হওয়ার আগেই সু-খবর পাওয়া গেল। তাহলে সাদ অনুষ্ঠানের ৩/৪দিন আগেই তাদের পরিচিতি পর্ব টা সেরে ফেলা উচিত। তাই মায়াবতীর বাবাকে খবর পাঠানো হলো রাজপরিবারে আসার জন্য। মায়াবতীর বাবা খবর শুনে বন থেকে কিছু ফল-মুল এবং দেশীয় শাক সবজি ভর্তি ব্যাগ নিয়ে রাজ পরিবারে আসে। রাজা ও রানীর সাথে বসে চা খেতে খেতে গল্প করতে থাকে। শেষে রাজা মায়াবতীর বাবাকে বলে দাদা এ খুশির খবর তো সবার কানে চলে গেছে। সাদ অনুষ্টান করিতে হবে। তার আগে আমাদের আর আপনার সকল আত্নীয়-সজন নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করিতে চাই।
সেখানে আমাদের পরিবার ও আপনাদের পরিবারের মধ্যে একটি পরিচিতি পর্ব থাকা উচিত। তখন মায়াবতীর বাবা তাদের প্রস্তাবে রাজী হয় এবং দিন ক্ষন ঠিক করেন। আগামী শুক্রবার পরিচিতি পর্ব উপলক্ষ্যে দাওয়াত পত্র বিতরন করা হয় । রাজ পরিবাওে নবাগত সদস্যেও আগমন উপলক্ষ্যে মায়াবতীর সেবা যত্ন আরো বেড়ে গেছে। যেখানে দুজন দাসী তার খোজখবর রাখতো । সেখানে আরো তিন জন মোট ০৫জন দাসী তার সেবা যত্ন করছেন। একটু পর পর রানী এসে তার খোজ খবর নিচ্ছেন। রাজবৈদ্যমশাই প্রতিনি তার শরীর চেক আপ করছেন। শুক্রবারের দিন রাজ পরিবারের সকল মানুষের আগমনে বেশ আনন্দ ময় পরিবেশ তৈরী হয়েছে। মায়াবতীর পরিবারের সকল আত্নীয় স্বজন ও তার মা-বাবা রাজপরিবারে এসেছে। বেশ আনন্দে সারাদিন রাজকীয় পরিবেশে রান্না করা সুস্বাদু খাবার খেয়ে রাজ্যের গরীব প্রজা সাধারন মায়াবতী ও দয়াল কুমারের আশির্বাদ করছিল। রাজা-রানী মায়াবতীর পিতা-মাতাকে থাকার জন্য পীড়াপিড়ি করিলে, তারা জানায়, দুদিন পর সাদ অনুষ্ঠানে তো আসতেই হবে। তখন না হয় নাতী ভাই এর সাথে থেকে যাবো বলে বিদায় নেয় । অনুষ্ঠান শেষে মায়াবতীর চাচা-চাচী ও আত্নীয় স্বজনদের সাথে তার পিতা-মাতা তাদের সন্তানকে আশির্বাদ করে চলে যান। বেশ আদর যত্নের মধ্যেই মায়াবতীর জীবন কাটছে। মায়াবতীর সন্তানের নাম রাখার জন্য রাজপরিবারে পাশের রাজ্য হতে নামকরা পুরোহিত কে নিমন্ত্রন করা হয় । দয়াল কুমার বেশ আনন্দে রাজ্যপরিচালনা শিক্ষায় মনোযোগী হয়ে পড়ে । আগামীকাল তার সন্তানের সাদ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে তার গুরু ঠাকুর কে জানায় তিনি যেন সে অনুষ্ঠানে থাকেন। এবং তার সন্তানকে তার মতো গুরু ঠাকুর হওয়ার আশির্বাদ করেন। পরের দিন বেশ জাকঁজমক ভাবে সাদ অনুষ্ঠান হয়।
রাজ্যের সকল গরীব প্রজা সাধারন সে অনুষ্ঠানে অংশ নেয় । মায়াবতীর গর্ভে তার সন্তান ধীওে ধীওে বেড়ে উঠতে থাকে। তাকে সামান্যতম কাজ করতে দেয়া হয়না। তাকে পুর্বে দিনে একবার চেক আপ করা হতো । আর এখন তাকে দিনে সকাল বিকাল দুবার চেকআপ করা হয় । তার অত্যাধিক আদর যত্নে সে যেন বিরক্ত বোধ করতে থাকে। শেষে সে তার সন্তানের নিরাপদ গর্ভধারনের চিন্তায় সে চিকিৎসা ব্যবস্থা মেনে নেয় । মাঝে মাঝে তার পিতা অথবা তার মা তার পছন্দের ফল-মুল দেশীয় শাকসবজী দিয়ে যেতে থাকে। এভাবে মায়াবতীর দশ মাস দশদিন পর তার কোল আলোকিত করে এক ছেলে সন্তান চলে আসে। সুদর্শন চেহারার অধিকারী দয়াল কুমারের মতই দেখতে সন্তানের চেহারা । সবাই বাচ্চাকে নিয়ে খুশি। দাদা-দাদী, নানা-নানী তাদের নাতীকে কোলে নিয়ে আনন্দ করতে থাকে। তাদের প্রেমের ফসল একমাত্র প্রিয় সন্তান তাদের অমর প্রেমের কালজয়ী স্বাক্ষী হয়ে থাকে। তাদের দুজনের অমর প্রেমের আববরন দিয়ে ডাকা সুখের সংসারে দু:খ / কষ্ট নামক দানব উকি দিতে পারেনি। এভাবেই দয়াল ও মায়াবতীর সংসারে সুখের পাখি ডানা মেলে ছায়া দিয়ে ডেকে রাখে।