সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার ধূবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান তালুকদার রাসেলের বিরুদ্ধে দুই ফসলী জমিতে আইন অমান্য করে দুটি ৮০ বিঘার পুকুর খনন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে ওই এলাকার দুটি মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে কয়েক শ বিঘা জমি অনাবাদি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট জমির মালিকরা। প্রায় ১৫ দিন ধরে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা মিলে প্রকাশ্যে খননযন্ত্র (এক্সেভেটর) দিয়ে পুকুর খনন করে ইট ভাটায় মাটি বিক্রি করলেও প্রশান রয়েছে
নির্বিকার। এ বিষয়ে ভূক্তভোগীরা জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পাননি। অভিযোগে প্রকাশ, মিজানুর রহমান তালুকদার রাসেল সলঙ্গা আওয়ামী লীগের সদস্য ও নৌকামার্কা প্রতীক নিয়ে ধূবিল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। এ কারণে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে প্রকাশ্যে বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতি করে চলেছেন। ক্ষমতাসীন শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথে সখ্যতা থাকায় স্থানীয় প্রশাসনও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভয় পায়। এ নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে সলঙ্গা থানার উত্তরপাড়া ভরমোহনী গ্রামের বাসিন্দা মো: সোহেল রানা গত ৯ জানুয়ারি আবাদী জমিতে পুকুর খনন বন্ধ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা চেয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেন। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান তালুকদার রাসেলের নেতৃত্বে রায়গঞ্জ উপজেলার ধূবিল ইউনিয়নের উত্তরপাড়া ভরমোহনী পূর্ব মাঠে দুই ফসলী জমিতে প্রকাশ্যে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে একটি পুকুর ও উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা ইউনিয়নের জগজীবনপুর গ্রামের মাঠে ৪০ বিঘা জমিতে অপর আরেকটি পুকুর খনন করছেন। আর ওই দুই পুকুরের খনন করা মাটি স্থানীয় ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। দিনরাত ড্রাম ট্রাকে ওভারলোড করে মাটি বহন করায় আঞ্চলিক সড়কগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ সূত্রে প্রকাশ, জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আবেদনকারীরা রায়গঞ্জ উপজেলার ধূবিল ইউনিয়নের উত্তরপাড়া ভরমোহনী গ্রামের বাসিন্দা। তাদের প্রধান আয়ের উৎস কৃষিখাত। প্রতি বছর তারা বোরো ধান সহ বিভিন্ন রবি শস্যের আবাদ করে থাকেন। কিন্তু গত ৬ জানুয়ারি থেকে ধূবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান তালুকদার রাসেলের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মুনাফালোভী ভূমিখোর মাটি ব্যবসায়ী তার ছোট ভাই শোভন তালুকদার,হেদায়তুল ইসলাম,জহুরুল ইসলাম,আব্দুস সামাদ , মনিরুল ইসলাম ও আলহাজ্ব উদ্দিন মিলে আবাদী জমিতে পুকুর খনন করছে। যার ফলে ওই মৌজায় ৮০ থেকে এক শ বিঘা জমিতে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে সাধারণ কৃষকগণের প্রধান আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু অভিযোগ করার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অপরদিকে জগজীবনপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, মফিজ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আমরা উল্লাপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি ) মোছা: খাদিজা খাতুন কে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান তালুকদার রাসেলের পুকুর কাটা প্রসঙ্গে মৌখিকভাবে বারবার জানানোর পরও অদৃশ্য কারণে তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। এ কারণে প্রতিকার চেয়ে আমরা মানববন্ধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পুলিশকেও পুকুর খননকারীদের সাথে এক প্রকার আপোষ করে চলার অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। এ নিয়ে কথা হয় সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: এনামুল হকের সাথে। তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি জেলায় কন্ফারেন্সে রয়েছি, পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে ধূবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান তালুকদার রাসেলের কাছে পুকুর খনন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করে বলেন, নীচু জমি আমরা লীজ নিয়ে ও পার্টনারশীফে পুকুর খনন করছি। বেআইনীভাবে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ইট ভাটায় মাটি বিক্রি করছেন কেনো? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাই আপনার সাথে আমার লোক দেখা করবে। উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা সুলতানা বলেন, সলঙ্গা ইউনিয়নের জগজীবন আমার এলাকা ভূক্ত। অবশ্যই আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, এসিল্যান্ড কে পাঠিয়ে ধূবিল ইউনিয়নের উত্তরপাড়া ভরমোহনী পূর্ব মাঠে পুকুর খনন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। এ
ছাড়াও চেয়ারম্যান কে ডেকেও সতর্ক করা হয়েছে। আবার পুকুর খনন করলে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।