সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

শিরোনাম :
শিরোনাম :
পাবনায় মাছভর্তি গাড়ির ধাক্কায় এক ব্যাক্তি নি*হ*ত, আ*হ*ত ১ জন  বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজে ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের প্রকল্প প্রদর্শনী বিভিন্ন কিন্ডারগার্ডেন ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দক্ষিণ সুলতানপুর স: প্রা: বি: ভর্তি দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার অভিযোগ  পাকুন্দিয়ায় তিন দিনব্যাপী তরুণ নেতৃত্ব বিষয়ক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন সেরা সংগঠন সম্মাননা পেল বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবী সমাজ কল্যাণ পরিষদ (বিএসএসকেপি) চাটমোহরে মাদ্রাসার সুপারকে স্থায়ী বরখাস্তের দাবিতে মানববন্ধন নাগরপুরে ট্রান্সফরমারের সরঞ্জামসহ দুই চোর গ্রেফতার ভূঞাপুরে রাতের আধারে কৃষি জমির মাটি কেটে বিক্রি, অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন

ঈশ্বরদীতে পল্লী চিকিৎসক ৪১ বছর ধরে দিয়ে আসছেন শিশু চিকিৎসা

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
আপডেট সময়: শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৭:৫১ অপরাহ্ণ

পাবনার ঈশ্বরদী স্টেশন রোডে জনতা ফার্মেসীতে ৪১ বছর ধরে শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে নবজাতকসহ শিশুদের সকল ধরণের চিকিৎসাপত্র, ওষুধ ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আসছেন আনোয়ার হোসেন বাচ্চু (৫৮)। কিন্তু তিনি কোন শিশু বিশেষজ্ঞ নন। মেডিক্যাল কলেজেও লেখাপড়া করেননি। প্রয়াত বাবা হারুন আলী ছিলেন পল্লীচিকিৎসক। বাবার জন্য খাবার নিয়ে যেতেন বাচ্চু। বাবার পাশে বসে চিকিৎসা দেওয়া দেখতেন এই আনোয়ার হোসেন বাচ্চু। এভাবেই কর্মহীন আনোয়ার হোসেন বাচ্চু হয়ে উঠেন শিশু বিশেষজ্ঞ। তবে স্থানীয় প্রশাসন, সিভিল সার্জনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নবজাতকসহ শিশুদের সকল শিশুদের চিকিৎসা দেওয়ার নামে দিয়ে যাচ্ছেন অপচিকিৎসা। তবে বিষয়টি জানানোর পর দুঃখ প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে বলে জানান পাবনা সিভিল সার্জন ডাক্তার শহীদুল্লাহ দেওয়ান। (শনিবার) দুপুরে ঈশ্বরদী শহরের স্টেশন রোডস্থ জনতা ফার্মেসিতে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত অর্ধশত অভিভাবক তাদের নবজাতক ও শিশুদের নিয়ে বসে আসেন। সর্দি, জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ব্রেন, জন্মগতভাবে হার্টের ফুটোসহ নানা রকম সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন তাঁরা। আনোয়ার হোসেন বাচ্চু শিশু বিশেষজ্ঞ পরিচয় দেন। কিন্তু তার করা প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসক হিসেবে তাঁর কোন নাম নেই, ডিগ্রী উল্লেখ্য নেই। বছর খানিক আগে নিজের নামের পাশে শিশু বিশেষজ্ঞ লিখতেন। প্রেসক্রিপশন প্যাডে লিখতেন ডাক্তার আনোয়ার হোসেন বাচ্চু। নবজাতক ও শিশু বিশেষজ্ঞ। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন ভুয়া ডাক্তারের চেম্বারে র‍্যাবসহ প্রশাসনের অভিযান চলতে দেখে সুকৌশল অবলম্বন করে নামের আগে আর ডাক্তার লিখছেন না। কিন্তু পুর্বের মতই নবজাতকসহ শিশুদের সকল ধরণের চিকিৎসা সেবা, পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং ওষুধ দিচ্ছেন এই আনোয়ার হোসেন বাচ্চু। জনতা ফার্মেসিতে তিন ভাই পরিচালনা করেন। চিকিৎসক হিসেবে আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, ওষুধের দোকানদার ও সিরিয়াল দেওয়ার কাজে এক ভাই পান্না ও ল্যাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন আরেক ভাই কেশরু। এই ওষুধ বিক্রয়ের জন্য নেই ড্রাগ লাইসেন্স। আবার ল্যাবেরও নেই লাইসেন্স। এমনকি ল্যাব টেশনিশিয়ান হিসেবেও নেই কোন প্রশিক্ষণ সনদ। শুধুমাত্র দেখেই তিন ভাই তিন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হয়েছেন। প্রেসক্রিপশন এবং ওষুধ দিয়ে এক সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে ফি রোগিদের নিকট থেকে এক সঙ্গে নেওয়া হয়। অপেক্ষামান শিশুর অভিভাবক রনক বলেন, শুনেছিলাম আনোয়ার হোসেন বাচ্চু শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। কিন্তু তার করা প্রেসক্রিপশনে তো ডাক্তার হিসেবে তাঁর নাম ও ডিগ্রী লেখা নেই। সাদা কাগজে শিশুর নাম লিখে ওষুধ দিচ্ছেন। আবার ওষুধও সেখান থেকেই কিনতে হয়। এমনকি পরীক্ষা নিরীক্ষাও ওই সাদা কাগজেই লিখে দিচ্ছেন। বিষয়টি দেখে বুঝছি তিনি আসলে শিশু বিশেষজ্ঞ নন। তিনি একজন ভূয়া ও হাতুড়ি ডাক্তার। তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এই বিষয়ে নবজাতক ও শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে চিকিৎসা প্রদানকারী আনোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, আমার মেডিক্যালের শিক্ষাগত ডিগ্রী নেই। ডাক্তার হিসেবেও ডিগ্রী নেই। তবে ৪১ বছর ধরে নবজাতকসহ শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে আসছি। রোগীরা সেবা পায় বলেই তো আমার নিকট আসে। লেখালেখি করার দরকার নেই রাতে দেখা করেন, কথা বলা যাবে বলেও অনুরোধ করেন চিকিৎসক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু ও তার ল্যাব টেশনিশিয়ান ভাই কেশরু। ঈশ্বরদী উপজেলা পল্লী চিকিৎসক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর পারভেজ বলেন,  একজন পল্লীচিকিৎসক হিসেবে নবজাতক ও শিশুদের সকল ধরণের চিকিৎসা দেওয়া অনুচিত। আনোয়ার হোসেন বাচ্চুর পল্লী চিকিৎসক সমিতির একজন সদস্য। আগামী ৩ অক্টোবর পল্লী চিকিৎসকদের সভা আছে। সেখানে এবিষয়টি আলোচনা করা হবে। ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার এফএ আসমা খান বলেন, আমরা এসব হাতুড়ি ডাক্তারদের সঙ্গে পারছি না। নানাভাবে প্রলুব্ধ করে গ্রামের সহজ সরল মানুষদের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে। ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবির কুমার দাশ বলেন, মেডিক্যালে লেখাপড়া না করে নবজাতক ও শিশুদের চিকিৎসা প্রদান করাটা বিস্ময়ের। বিষয়টি গুরুত্বেও সঙ্গে দেখা হবে।পাবনা সিভিল সার্জন ডাক্তার শহীদুল্লাহ দেওয়ান এই বিষয়ে বিস্ময় ও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, একজন ব্যক্তি মেডিক্যালে লেখাপড়া না করে কিংবা কমপক্ষে এমবিবিএস পাশ না করে শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে আসছে কিভাবে। শুধুমাত্র ৪১ বছর ধরে চিকিৎসা দিয়েই যদি ডাক্তার হওয়া যেত তাহলে মেডিক্যাল কলেজ, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করা প্রয়োজন ছিল না। বিষয়টিতে অবশ্যয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর