নির্মল বড়ুয়া মিলন:
আজ ২৬ জুলাই-২০২০ জননেতা সাইফুল হক এর জন্মদিন তিনি ৬৪ বছর পেরিয়ে ৬৫ বছরে পদারপর্ণ করলেন।বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশের বিপ্লবী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব জননেতা সাইফুল হক এর জন্ম ১৯৫৬ সালের ২৬ জুলাই চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। মাতা-পিতার তিনি বড় সন্তান। মাকে হারিয়েছেন তার জন্মের সোয়া তিন বছরের মাথায় ১৯৫৯ সালে, আর বাবাকে হারিয়েছেন ১৯৭৮ সালে। অনুজ মহিবুল হক সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় সরকারি চাকুরীতে।
১৯৬০ সালে তাদের পরিবার স্থায়ীভাবে নিবাস গড়েন বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট থানার লকপুর গ্রামে। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা ল্যাবরেটরী হাইস্কুল, খুলনায় বিএল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবন কাটে।
ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী বহ্নিশিখা জামালীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ১৯৮২ সালে। তাদের একমাত্র সন্তান মোশরেকা অদিতি হক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
একেবারে কিশোর বয়স থেকে সাইফুল হক রাজনীতি ও রাজনৈতিক আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানী স্বৈরশাসন বিরোধী গণআন্দোলন-গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রকর্মী হিসেবে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে বাগেরহাটের লকপুর, চুলকাঠি, পিলজঙ্গ-ফকিরহাট অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছাত্র-তরুণদের সংগঠিত করেন।।রাজাকারদের রোষানলে পড়ে জুুলাই মাসে তাকে আত্মগোপনে চলে যেতে হয়। ১৯৭১ এর নভেম্বরে তিনি সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্ত হন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে অবস্থান করেন।
তিনি ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন) গ্রুপের সাথে যুক্ত হন ১৯৬৮ এর শেষদিকে। ১৯৬৯ সালে তার সাথে যোগাযোগ ঘটে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এম -এল) এর সংগঠকদের সাথে। ৭০ সালে নবম শ্রেণীর ছাত্র অবস্থায় তিনি পার্টির প্রাথমিক গ্রুপ সদস্য হন। এই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন স্কুলের বড় ভাই সৈয়দ মোকতার আলী ও হাফিজুর রহমান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পার্টির বিতর্কিত ও বিভ্রান্তিকর ভূমিকায় তিনি আর ততকালীন পার্টির উপর আস্থা রাখতে পারেননি। তার সাথে পার্টির সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। ১৯৭২-৭৫ সাল তিনি মূলত মার্কসবাদী পড়াশুনা, পাঠচক্র, কিছুটা লেখালেখি ও সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৭৩-৭৫ এ খুলনা অঞ্চলে জাসদ নেতাদের সাথেও তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে।
১৯৭৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াকালীন বিএল কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন থেকে তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। আইনগত নিষেধাজ্ঞার কারণে সে নির্বাচন আর অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭৩ সালে বিএল কলেজে বাৎসরিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ফিরোজ আহমদ এর সাথে তিনি যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হন। ১৯৭৫ সাল থেকে তিনি ভাসানী ন্যাপ সমর্থিত জাতীয় ছাত্রদলের সাথে সম্পর্কিত হন এবং ১৯৭৮ সালে ঢাকায় হোটেল ইডেনে জাতীয় ছাত্রদলের জাতীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সম্মেলনের অব্যবহিত পরেই ছাত্র সংগঠনের উপর বাইরের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপসহ অভ্যন্তরীণ নানা কারণে জাতীয় ছাত্রদলের সাথে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। কমিটির অন্য অনেকের সাথে তিনিও জাতীয় ছাত্রদল থেকে পদত্যাগ করেন। এই সময়কালে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ উন্মেষ’ এর সাথে তার সম্পর্ক গড়ে উঠে।
১৯৭৯ সালের ৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠকদের এক প্রতিনিধিত্বশীল সম্মেলনে ‘ছাত্র ঐক্য ফোরাম’ গঠিত হলে তিনি এর যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ৬ মাস পর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য, ছাত্র ঐক্য ফোরাম ছাত্র আন্দোলনের পাশাপাশি ছাত্রদের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছাত্রদের মধ্যে বৈপ্লবিক বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা ও মননশীলতার চর্চা এগিয়ে নিতেই মাসিক ‘ফোরাম’ পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। ফোরামের আহ্বায়ক থাকাকালীন তার উদ্যোগে এই পত্রিকাটির ২৭টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।
১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদের নেতৃত্বে সামরিক শাসন জারীর পর জুলাই মাসে ফোরামের উচ্চতর রূপ মার্কসবাদী-লেনিনবাদী সংগঠন ‘সংগঠক গ্রুপ’ গড়ে তোলা হয় এবং সাইফুল হক এর সম্পাদক নির্বাচিত হন। জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসন জারীর পরপরই তিনি এবং তার বন্ধুরা মিলে ‘বিপ্লবী ফ্রন্ট’ এর ঘোষণা দিয়ে সামরিক শাসন প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইশতেহার প্রকাশ করেন। ১৯৮২ সালের জুলাই-আগস্ট থেকেই কমরেড আবুল বাসারের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের মজদুর পার্টি, বিনোদ দাসগুপ্ত, শাহরিয়ার কবীর ও কৃষক নেতা আবদুস সাত্তারের নেতৃত্বাধীন সিপিবি (এম-এল) এবং সংগঠক গ্রুপের মধ্যে ঐক্য প্রক্রিয়া গড়ে ওঠে। ’৮৩ সালের মাঝামাঝি সিপিবি (এম-এল) এই ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নিলে ’৮৪ সালে এক ঐক্য সম্মেলনের মধ্য দিয়ে মজদুর পার্টি ও সংগঠক গ্রুপ একীভূত হয় এবং বাংলাদেশের মজদুর পার্টি নাম ধারণ করে। সাইফুল হক এই পার্টির কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য হন। ১৯৮৫ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি বিভক্ত হবার পর অক্টোবরে মজদুর পার্টির সাথে ওয়ার্কার্স পার্টির সংখ্যালঘিষ্ঠ অংশের ঐক্য সম্পন্ন হয় এবং ঐক্যবদ্ধ পার্টি ‘বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি’ নাম ধারন করে।
সাইফুল হক এই ঐক্যবদ্ধ পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৯১ পর্যন্ত এই পার্টির প্রথমে কেন্দ্রীয় দফতর এবং পরবর্তীতে পার্টির কেন্দ্রীয় সংগঠন বিভাগের প্রধান ও শিক্ষা বিভাগের সদস্য হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।
’৭০ দশকের শুরু থেকেই ছাত্র আন্দোলনের পাশাপাশি শ্রমিক আন্দোলন ও কৃষক আন্দোলনের সাথে সাইফুল হক এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে। ১৯৮৪-৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি শ্রমিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। এই সময়কালে তিনি আদমজী, ঢাকা জুটমিল, পলাশ ও ঘোড়াশালে শ্রমিকদের মধ্যে পাঠচক্রসহ রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কাজে সময় দেন। জননেতা কমরেড় আবুল বাসার ও মুহাম্মদ জহুর এ ব্যাপারে তাকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করেন।
১৯৮৫ সালে পার্টির সিদ্ধান্তে তিনি খেতমজুর – ভূমিহীনদের লডাকু সংগঠন খেতমজুর ইউনিয়নের সাথে সম্পর্কিত হন। প্রথমে তিনি খেতমজুর ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং পরে ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে তিনি খেতমজুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ২০০৮ পর্যন্ত এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এবং তৎপরবর্তীকালে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
১৯৮২-৯০ এরশাদ সামরিক স্বৈরতন্ত্র বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের তিনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক। ১৯৮৩ সালে স্বৈরতন্ত্র বিরোধী মধ্য ফেব্রুয়ারির ছাত্র আন্দোলনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই সময়কালে টানা ৯ বছর রাজপথের আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন। এই সময়কালে কয়েকবার তাকে আত্মগোপনেও যেতে হয়। প্রথমে ১৫ দল ও পরবর্তীতে বাম প্রগতিশীল দলসমূহের জোট ৫ দলেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৬ সালে গঠিত ১৭ কৃষক- খেতমজুর সংগঠনের জোটবদ্ধ আন্দোলনে তিনি নেতৃত্বদায়ী ভূমিকা পালন করেন। ’৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের তুঙ্গ মুহুর্তেও তিনি বিশেষ ভূমিকা নেন।
১৯৯২ সালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, কমিউনিস্ট লীগ ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (একাংশ) ঐক্যবদ্ধ হলে তিনি আবারও পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন এবং পার্টির গুরুত্বপূর্ণ দায়দায়িত্ব পালণ করেন। ১৯৯৫ সালে অনুষ্ঠিত পার্টির পঞ্চম কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য- কৃষক সংগঠনের পাশাপাশি আলাদাভাবে খেতমজুর সংগঠন-আন্দোলন অব্যাহত রাখার বিতর্কে নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট এর সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করেন। ২০০০ সালে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত ওয়ার্কার্স পার্টির ষষ্ঠ কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ মূল রাজনৈতিক প্রস্তাবনার দলিল তার প্রণীত; যে দলিলে পার্টির স্বতন্ত্র বিপ্লবী ধারার রাজনৈতিক লাইন তুলে ধরা হয়।
এই কংগ্রেসের পর পার্টির মূল নেতৃত্ব কংগ্রেস গৃহীত রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে পার্টি নেতৃত্বের দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে ২০০১ থেকেই তার নেতৃত্বে পার্টির অভ্যন্তরে মতাদর্শিক ও রাজনৈতিক সংগ্রাম পরিচালিত হয়। এই সংগ্রামের ফলশ্রুতিতেই (যখন আন্তঃপার্টি সংগ্রামের পথ ও সুযোগ অবরুদ্ধ করে দেয়া হয়) ২০০৪ সালে তাঁর নেতৃত্বে প্রয়াত কমরেড খন্দ্কার আলী আব্বাসসহ কেন্দ্রীয় কমিটির পাঁচ নেতা পার্টির অধঃপতিত নেতৃত্বকে প্রত্যাখান করে ‘পার্টির বিপ্লবী স্বত্ত্বাকে রক্ষা কর, পার্টি ও বিপ্লবী আন্দোলন পুনর্গঠন কর’ এই মূল প্রতিপাদ্যে তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিপক্ষে আলাদা অবস্থান গ্রহণ করেন এবং পার্টির পুনর্গঠনের ঐতিহাসিক কর্মযজ্ঞ শুরু করেন। তাকে আহ্বায়ক করে ‘বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি কেন্দ্রীয় পুনর্গঠন কমিটি ‘গঠন করা হয়। ২০০৫ সালে মহানগর নাট্যমঞ্চ মিলনায়তনে পার্টির ৭ম কংগ্রেসে কমরেড খন্দ্দকার রআলী আব্বাস সভাপতি ও তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১০ এর পার্টির ৮ম কংগ্রেস এবং ২০১৭ তে ইঞ্জিনিয়ারস ইন্সটিটিউটে অনুষ্ঠিত পার্টির নবম কংগ্রেসেও তিনি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুননির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে বিশেষ প্লেনামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পার্টির নাম ‘বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ‘ রাখা হয়।
সাইফুল হক ২০১৮ এর ১৮ জুলাই ঘোষিত বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রথম সমন্বয়কের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালে গঠিত বাম প্রগতিশীলদের যুক্ত মোর্চা গণমুক্তি আন্দোলন এবং ২০০৭ সালে গঠিত গণতান্ত্রিক বাম মোর্চারও তিনি অন্যতম উদ্যোক্তা এবং গত ক’বছরে একাধিকবার বাম মোর্চার সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। বাম মোর্চা ও সিপিবি বাসদ এর যুক্ত মোর্চারও তিনি অন্যতম উদ্যোক্তা।
গত প্রায় দুই দশক ধরে পরিচালিত তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রকষা জাতীয় কমিটির নেতৃত্বে পরিচালিত জাতীয় সম্পদ রক্ষা আন্দোলনেরও তিনি অন্যতম উদ্যোক্তা ও কেন্দ্রীয় সংগঠক। জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে কয়েকবার তিনি আহত হন।
গত সাড়ে চার দশক ধরে দেশে সাম্রাজ্যবাদ ও স্বৈরতন্ত্রবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলন, গণআদালত, শ্রেণী পেশার আন্দোলন, জাতীয় ও জনগুরুত্বপূর্ণ প্রায় প্রতিটি ইস্যুতে দেশ ও জনগণের পক্ষে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছেন।
আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনেও গত চার দশক ধরে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। এছাড়া সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়ন, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ, বিশ্বশান্তি, পারমানবিক নিরস্ত্রীকরণ, কৃষি ও ভূমি সংস্কার, খাদ্য নিরাপত্তা প্রভৃতি নানা ইস্যুতেও আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে তিনি দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে তিনি ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড-, হংকং, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, ইংল্যান্ড বেলজিয়াম, হল্যান্ড-, জার্মানী, অস্ট্রিয়া প্রভৃতি দেশ সফর করেন। নকশালবাড়ীর ৫০ বছর উদযাপন পরিষদের আহ্বানে ২০১৭ সালে তিনি ভারত সফর করেন এবং শিলিগুড়ির কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। সাম্যবাদের প্রধান প্রবক্তা কার্ল মার্কস এর দ্বি-শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।
সাইফুল হক পুলিশী নির্যাতন-নিগ্রহের শিকার হয়েছেন অনেকবার। গ্রেফতার হয়ে কারাঅন্তরীণও ছিলেন কয়েকবার। ২০১১ সালে জাতীয় কমিটির হরতালে পার্টির ২২ জন নেতাকর্মীর সাথে স্ত্রী ও সহকর্মী বহ্নিশিখা জামালী ও কন্যা মোশরেকা অদিতি হকসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন।
মাসিক জনগণতন্ত্র ও পাক্ষিক কালের দাবি পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। ‘৯০ দশকের শুরু থেকে জাতীয় দৈনিকে তিনি কলাম লেখা শুরু করেন।
বাংলাদেশের বিপ্লবী আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভাবাদর্শী ও একজন মৌলিক লেখক। বৈপ্লবিক রাজনৈতিক মতাদর্শ, রাজনৈতিক অর্থনীতি, সমসাময়িক রাজনৈতিক -অর্থনৈতিক বিষয়াদি বিশ্লেষণ এবং শ্রমিক,কৃষক, খেতমজুর আন্দোলন তার লেখালেখির প্রধান বিষয়। প্রকাশিত গ্রন্থ ও পুস্তিকার সংখ্যা ২২। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘সেনা আমলাতন্ত্র, সামরিকীকরণ ও আজকের রাজনীতি’, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক দশক ও বৈপ্লবিক প্রবণতা’, ‘তৃতীয় বিশ্ব ও বাংলাদেশের সংকট’, ‘আন্তর্জাতিক পুঁজি, কাঠামোগত পুনর্বিন্যাস কর্মসূচি ও বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি’, ‘ সাম্রাজ্যবাদ ও জনগণের খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্ন’, ‘মার্কস-এঙ্গেলস ও ভাবাদর্শ’, ‘রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী চরিত্র ও বাম আন্দোলনে বিলোপবাদী ঝোঁক’, ‘বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলন পুনর্গঠনের তাৎপর্য ও কর্তব্য প্রসঙ্গে’, ‘বামপন্থী আন্দোলন-ফিরে দেখা’, ‘রাষ্ট্র, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সংস্কার এজেন্ডা ও গণসংগ্রামের নতুন মাত্রা’ ‘লুটেরা গোষ্ঠির শাসনকেন্দ্রীক সংকট ও রাষ্ট্র-রাজনীতির নতুন পাঠ’ ‘ফ্যাসিবাদের বিপদ ও গণতন্ত্রের প্রশ্ন’ প্রভৃতি।
জনগণতন্ত্র পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলী কর্তৃক সংকলিত।