রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১৭ অপরাহ্ন

ই-পেপার

বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোর অনিয়মের শেষ কোথায়?

মোঃ কামাল হোসেন, অভয়নগর প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৩:৪২ অপরাহ্ণ

অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায় ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র গড়ে ওঠা একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চলছে টেস্ট বানিজ্য। তাছাড়া অনিয়মে ভরপুর প্রতিষ্ঠানগুলো। কয়েক বার কর্তৃপক্ষ ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করলেও আগের অবস্থানেই ফিরে আসে প্রতিষ্ঠানগুলো। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওইসব বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে গলাকাটা বানিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম হরহামেশাই চলমান থাকলেও অদৃশ্য কারণে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোন আইনগত পদক্ষেপ চোখে পড়েনা। ফলে দীর্ঘদিন ওই সব প্রতিষ্ঠান সাধারণ রোগীদের হয়রানিসহ নিয়ম বহির্ভূত কাজে জড়িয়ে পড়েছে। সূত্র জানায়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও স্থানীয় কথিত সাংবাদিকদের ম্যানেজ করেই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের এই কর্মকান্ড। সূত্রে আরো জানা গেছে, বিভিন্ন সময় ওই সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোন আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়াতে সাধারণ মানুষের মাঝে রয়েছে ক্ষোভ।
তথ্য  অনুসন্ধানে দেখা যায়, অনভিজ্ঞ নার্স, সেবিকা দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা ও সেবা করা হয়। বেসরকারি হাসপাতালের অনুমোদনের বাইরে তিনগুণ বেশি রোগীর বেড স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া ক্লিনিকে রয়েছে অনুমোদিত কেবিন। এ উপজেলায় শিশু বিশেষজ্ঞ নেই, কিন্তু নার্স ও ভূয়া অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে শিশুদের চিকিৎসা বা সেবা করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, টেস্ট বানিজ্যের নামে সাধারণ রোগীদের সাথে অভিনব প্রতারণা করা হচ্ছে। উপজেলাসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছুটে আসা অসহায় রোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে ওই সব স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর জুড়ি নেই। জানা গেছে, কোন সাংবাদিক ওই সব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অনিয়মের বিষয় প্রকাশ করলেই তার উপর নেমে আসে বিভিন্ন হুমকি। ফলে ভয়ে অনেক সাংবাদিক কোন সংবাদ প্রকাশ করে না। অন্যদিকে কিছু নামধারী সাংবাদিক পরিচয়দানকারীরা ওইসব স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে থাকেন বলে জানান কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার। তারা বলেন, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে অনিয়মের নিউজ প্রকাশের ভয় দেখানো হয়। ফলে মালিকপক্ষ পড়ে চরম বিপাকে। যে কারণে মাসিক টাকা দিতে হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংবাদিকসহ প্রভাবশালীদের ইন্দনে দীর্ঘদিন ওই সব স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছে গলাকাটা বানিজ্য ও সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বলেন, ভুল চিকিৎসার কারণে ক্লিনিক গুলোতে হরহামেশা রোগীর মৃত্যু হলেও বার বার মোটা অংকের টাকায় রফাদফায় সব অপকর্ম ধামাচাপা দেওয়া হয়। এবিষয়ে কখনো তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ চোখে পড়েনা। ওই সব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়োজিত দালাল চক্রের কাছে রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকার হয়। ক্লিনিকগুলোর মালিক পক্ষের ইন্ধনে রোগীর স্বজনদের সাথে দুর্ব্যবহার চরম আকার ধারণ করলেও ক্লিনিক মালিক বা কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই। ক্লিনিকে রোগীদের সুরক্ষা না থাকলেও অর্থ বানিজ্যের লোভে পড়ে সব অনিয়ম নিয়মে পরিণত করে দেদারছে করছে গলাকাটা বানিজ্য।
অন্যদিকে পরিস্কার-অপরিচ্ছন্ন ধারের কাছে নেই ওই সব ক্লিনিক। একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ওই সব স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান সরকারি নিয়ম-নীতিকে থোড়াই কেয়ার করেনা। নিজেদের খেয়াল খুশি মতো রোগীদের কাছ থেকে অর্থ হাতানোই যেন কর্তৃপক্ষের নেশাতে পরিণত হয়েছে। কে বাঁচল আর কে মারা গেলো এ বিষয়ে যেন কারো মাথা ব্যথা নেই। সূত্রে আরো জানা গেছে, ওইসব স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতন খুবই কম, যে কারণে সাধারণ রোগীদের সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। এবিষয়ে যশোর সিভিস সার্জন ডাঃ বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে, কোন অনিয়মকে ছাড় দেওয়া হবেনা। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর