রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৭ অপরাহ্ন

ই-পেপার

ইসলামে গুজব রটানো শাস্তিযোগ্য – মাওলানা: শামীম আহমেদ 

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: রবিবার, ২০ আগস্ট, ২০২৩, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ

গুজব মানে মিথ্যা রটানো যার কোন ভিত্তি নেই । ইসলাম সত্যের ধর্ম । ইসলাম ধর্মে মিথ্যার কোন স্থান নেই।  মিথ্যাবাদীদের জন্য রয়েছে শাস্তির বিধান।
ইসলামের দৃষ্টিতে গুজব ও অপপ্রচার খুবই গর্হিত কাজ।  গুজব শব্দটি বাংলা যার অর্থ রটনা, মিথ্যা ছড়ানো, ভিত্তিহীন সংবাদ ছড়ানো। গুজব ছড়ানো ইসলামে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গুজব ছড়িয়ে যারা মানুষের সম্মানহানি করে, তাদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধানও রয়েছে ইসলামে। গুজব ছড়ানোটা যদি কারো উপর মিথ্যা অপবাদ হয় তাহলে তো ইসলামে তার জন্য কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে ।
সচ্ছরিত্রবান নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়ার পর, চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে না পারলে প্রত্যেককে ৮০টি করে বেত্রাঘাত করা হবে। কারো ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং তখন থেকে তাদের পরিচয় হবে ফাসিক।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা সৎ নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দিল, অথচ চারজন সাক্ষীর মাধ্যমে তা প্রমাণিত করতে পারেনি তাহলে তোমরা তাদের ৮০টি বেত্রাঘাত করো, কারো ব্যাপারে তাদের সাক্ষ্য আর কখনো গ্রহণ কোরো না এবং তারাই তো সত্যিকার ফাসিক। তবে যারা এরপর তাওবা করে নিজেদের সংশোধন করে নেয় (তারা সত্যিই অপরাধমুক্ত)। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা: নুর, আয়াত: ৪-৫)
গুজব ছড়ানো মুনাফিক এর কাজ। আর মুনাফিকের স্থান জাহান্নামে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি। যথা: ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, ২. যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে  ৩. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে (বুখারি, হাদিস নং- ২৬৮২)
আমাদের সমাজে বিভিন্ন বিষয়ে গুজব, অপপ্রচার মহামারির আকার ধারণ করেছে।  গুজব ছড়িয়ে দেওয়া যেন কিছু মানুষের রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যুগটাও চলছে এখন সোশ্যাল মিডিয়ার।
ভিত্তিহীন কথা মুহূর্তেই ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে এই গুজব ও মিথ্যার সয়লাব ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে । কিন্তু এই ব্যাপারে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই, যে একটি মিথ্যার  কারণে হাজার বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। আর বাস্তবেও তাই হচ্ছে । কখনো কখনো অতিরিক্ত আবেগের বশবর্তী হয়েও  ভিত্তিহীন কথা প্রচার করা হচ্ছে।
বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে গুজবনির্ভর কিছু ঘটনায় সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টসহ মানুষের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাস্তবিক পক্ষে একটি মিথ্যা তথ্য ও গুজব রটানো ব্যক্তি, সামাজিক বন্ধন ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ।
কোনো সংবাদ যাচাই-বাছাই করা ছাড়া তা বিশ্বাস করা অনুচিত। পবিত্র কোরআনে ভুল তথ্য অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তর, এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ৎ তলব করা হবে।’ (সুরা: বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)।
 ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে কোনো সংবাদ পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করে প্রচার করা।  পাওয়া মাত্রই যাচাই না করে প্রচার করা নিষেধ।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সব শোনা কথা প্রচার ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। (আবু দাউদ , হাদিস নং- ৪৯৯২)।
গুজব রটানোর পিছনে উদ্দেশ্য থাকে মানুষকে বিভ্রান্ত করা মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করা । আল্লাহপাক কুরআনে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করা মুনাফিকের গুণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা তোমাদের সাথে বের হলে তোমাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ছাড়া অন্য কিছু বৃদ্ধি করত না এবং তোমাদের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টির চেষ্টায় তোমাদের সারিসমূহের মধ্যে ছোটাছুটি করত। আর তোমাদের মধ্যে এমন লোক রয়েছে, যারা তাদের (মতলবের) কথা বেশ শুনে থাকে। (সুরা তাওবা: ৪৭)
মুসলমানের দায়িত্ব হলো, সমাজে কোনো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেই  তার প্রচার ও প্রসার না করা। বরং  এর বাস্তবতা যাচাই-বাছাই করে নিজে সতর্ক থাকা এবং অন্যকে সতর্ক করা।
কোনো তথ্য ভালোভাবে যাচাই না করে ছড়িয়ে দেওয়া একজন মুমিনের কাজ হতে পারে না। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে মিথ্যা গুজব রটানো থেকে হেফাজত করুন, আমীন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর