আল্লাহ পবিত্র, তিনি শুধু পবিত্র জিনিসই কবুল করেন। ইসলাম পবিত্র ধর্ম। পবিত্র বিশ্বাস এবং পবিত্র কর্মই ইবাদত। ইমানের প্রথম বাক্য হলো কালেমা তাইয়েবা, এর মানে হলো পবিত্র বাণী। যার মাধ্যমে মানুষ পবিত্র জীবনে প্রবেশ করে। সুতরাং একজন বিশ্বাসী অনুগত বান্দা সারা জীবন এই পবিত্রতা রক্ষা করে চলেন। পবিত্র বস্তু ছাড়া আল্লাহ কোনো কিছু গ্রহণ করেন না। (মুসলিম)। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হারাম দ্বারা পুষ্ট দেহ জান্নাতে যেতে পারবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ ও দারামি)।
মানুষ জীবনে যা যা ভোগ বা উপভোগ করে, সবই তার রিজিক। হালাল রিজিক ইবাদত কবুলের অন্যতম প্রধান শর্ত। রিজিক হালাল বা পবিত্র এবং বৈধ হওয়ার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে। প্রথমত, ব্যবহার্য, ভোগ্য বা উপভোগ্য বস্তু বা বিষয়টি হালাল তথা পবিত্র ও অনুমোদিত হতে হবে। দ্বিতীয়ত, তা প্রাপ্তি বা অর্জনের পথ বা মাধ্যম হালাল বা বৈধ হতে হবে। এ দুইয়ের কোনো একটির ব্যত্যয় ঘটলে ওই রিজিক হালাল বা পবিত্র হবে না।
নবী–রাসুলরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ, তাঁরা নিষ্পাপ। তবু আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা হালাল পবিত্র উত্তম রিজিক খাও আর সৎকর্ম করো।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১)। অতঃপর সকল বিশ্ববাসীর উদ্দেশে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা হালাল উত্তম রিজিক আহার করো, যা আমি তোমাদের দিয়েছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৭২)।
হালাল সম্পদকেও প্রতিবছর হিসাব করে জাকাত প্রদানের মাধ্যমে পবিত্র করতে হয়। সঠিকভাবে জাকাত আদায় না করলে বৈধ সম্পদও হারাম হয়ে যায়। অজু-গোসল বা পবিত্রতা ছাড়া যেমন নামাজ শুদ্ধ হয় না, ঠিক তেমনি হালাল জীবিকা ছাড়া কোনো ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না
হারাম বস্তু হালাল পন্থায় অর্জন করলেও তা যেমন হালাল হবে না, অনুরূপ হালাল বস্তু হারাম পন্থায় লাভ করলে তা–ও হালাল বা বৈধ হবে না।
হালাল উপার্জন অন্যতম ফরজ ইবাদত। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হালাল জীবিকা সন্ধান করা নির্ধারিত ফরজসমূহের পরে বিশেষ একটি ফরজ।’ (শুআবুল ইমান, বায়হাকি; কানযুল উম্মাল: ৯২০৩)। ‘সকল মুসলিম নারী ও পুরুষের ওপর হালাল উপার্জন ফরজ।’ (জামিউল আখবার: ১০৭৯)। ‘হালাল উপার্জন একটি জিহাদ।’ (কানযুল উম্মাল: ৯২০৫)।
হালাল ও সৎ উপার্জনের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বহস্তে উপার্জিত হালাল রিজিক আহার করল, সে বিদ্যুৎগতিতে পুলসিরাত পার হয়ে যাবে।’ (জামিউল আখবার: ৩৯০)। ‘যে ব্যক্তি স্বহস্তে পরিশ্রম করে জীবিকা উপার্জন করে জীবন ধারণ করে, আল্লাহ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান এবং তাকে কখনো শাস্তি দেবেন না।’ (জামিউল আখবার: ১০৮৫)। ‘যে ব্যক্তি স্বহস্তে পরিশ্রম করে হালাল রিজিক আহার করল, তার জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খোলা থাকবে, সে যেখান দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’ (জামিউল আখবার: ১০৮৭)। নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বহস্তে পরিশ্রম করে জীবিকা অর্জন করল, কিয়ামতের দিন সে নবীগণের সঙ্গে শামিল হবে এবং অনুরূপ পুণ্য লাভ করবে।’ (জামিউল আখবার: ১০৮৮)
হালাল রিজিক ও সৎ উপার্জনের সব প্রচেষ্টাই ইবাদত। জীবিকার জন্য প্রিয় নবীজি (সা.) চাকরি করেছেন, ব্যবসা করেছেন। শ্রমিক তাঁর মনিবকে ফাঁকি দিলে তাঁর উপার্জন হালাল হবে না। মনিব তাঁর শ্রমিককে ঠকালে, ন্যায্য পাওনা না দিলে তাঁর সম্পদ হালাল হবে না। কর্মচারী মালিকের সঙ্গে প্রতারণা করলে তাঁর উপার্জন হালাল হবে না, মালিক তাঁর কর্মচারীর প্রতি জুলুম ও অবিচার করলে তাঁর সম্পদ হালাল হবে না।
ব্যবসায়ী পণ্যে ভেজাল দিলে, ওজনে বা পরিমাণে কম দিলে, নকল পণ্য বিক্রি করলে; মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিলে তাঁর উপার্জন হালাল হবে না। ক্রেতাও যদি কোনোভাবে বিক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করে, তবে তাঁর রিজিকও হালাল হবে না। কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ওই সকল লোকের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ, যারা মানুষ থেকে গ্রহণ করার সময় ঠিকমতো নেয় এবং মানুষকে দেওয়ার সময় কম দেয়।’ (সুরা-৮৩ মুতাফ্ফিফিন, আয়াত: ১-২)।
সৎ ব্যবসায়ীদের প্রশংসায় প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক, শহীদদের সঙ্গে থাকবে।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজা)।
হালাল সম্পদকেও প্রতিবছর হিসাব করে জাকাত প্রদানের মাধ্যমে পবিত্র করতে হয়। সঠিকভাবে জাকাত আদায় না করলে বৈধ সম্পদও হারাম হয়ে যায়।
অজু-গোসল বা পবিত্রতা ছাড়া যেমন নামাজ শুদ্ধ হয় না, ঠিক তেমনি হালাল জীবিকা ছাড়া কোনো ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।