সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

মুসলিম জীবনে পবিত্র ইদুল ফিতরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য – মাওলানা: শামীম আহমেদ

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৩, ৪:৫৮ অপরাহ্ণ

সারা বিশ্বের মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর অনাবিল আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়। ‘ঈদ’ মুসলিম উম্মাহর জাতীয় উৎসব। ঈদুল ফিতরের দিন প্রতিটি মুসলমান নারী-পুরুষের জীবনে অশেষ তাৎপর্য ও মহিমায় অনন্য। ঈদুল ফিতর প্রতিবছর ধরণিতে এক অনন্য-বৈভব বিলাতে ফিরে আসে। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজানের সিয়াম সাধনার শেষে শাওয়ালের এক ফালি উদিত চাঁদ নিয়ে আসে পরম আনন্দ ও খুশির ঈদের আগমনী বার্তা। সিয়াম পালনের দ্বারা রোজাদার যে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার সৌকর্য দ্বারা অভিষিক্ত হন, ইসলামের যে আত্মশুদ্ধি, সংযম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, দানশীলতা, উদারতা, ক্ষমা, মহানুভবতা, সাম্যবাদিতা ও মনুষ্যত্বের গুণাবলি দ্বারা বিকশিত হন, এর গতিধারার প্রবাহ অক্ষুণ্ন রাখার শপথ গ্রহণের দিন হিসেবে ঈদুল ফিতর সমাগত হয়। এ দিন যে আনন্দধারা প্রবাহিত হয়, তা অফুরন্ত পুণ্যময়তা দ্বারা পরিপূর্ণ। শাওয়ালের চাঁদটি দেখামাত্র বেতার-টেলিভিশন ও পাড়া-মহল্লার মসজিদের মাইকে ঘোষিত হয় ঈদের আগমনী বার্তা।
সুদীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ প্রতিটি মুসলমানের ঘরে নিয়ে আসে আনন্দের সওগাত। ঈদগাহে কোলাকুলি সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভালোবাসার বন্ধনে সবাইকে নতুন করে আবদ্ধ করে। ঈদ এমন এক নির্মল আনন্দের আয়োজন, যেখানে মানুষ আত্মশুদ্ধির আনন্দে পরস্পরের মেলবন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং আনন্দ সমভাগাভাগি করে। মাহে রমজানের রোজার মাধ্যমে নিজেদের অতীত জীবনের সব পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হওয়ার অনুভূতি ধারণ করেই পরিপূর্ণতা লাভ করে ঈদের খুশি। ঈদুল ফিতর বা রোজা ভাঙার আনন্দ-উৎসব এমনই এক পরিচ্ছন্ন আনন্দ অনুভূতি জাগ্রত করে, যা মানবিক মূল্যবোধ সমুন্নত করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের পথপরিক্রমায় চলতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উদ্বুদ্ধ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) সানন্দে ঘোষণা করেন, ‘প্রতিটি জাতিরই আনন্দ-উৎসব রয়েছে, আমাদের আনন্দ-উৎসব হচ্ছে এই ঈদ।’ (বুখারি ও মুসলিম)
ঈদ ধনী-গরিব সব মানুষের মহামিলনের বার্তা বহন করে। এক কাতারে দাঁড়িয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের একসঙ্গে নামাজ পড়ার সুযোগ এনে দেয় ঈদ। ঈদের খুশির এক অন্যতম উপকরণ হচ্ছে ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে্য রোজা রাখার পর ঈদের নামাজ আদায়ের পর ঈদগাহ ময়দানে একে অপরের হাতে হাত, বুকে বুক রেখে আলিঙ্গন করলে মুসলমানরা সারা মাসের রোজার কারণে ক্ষুধা-তৃষ্ণার কষ্ট ভুলে যায়। সমাজের সর্বস্তরের মুসলিম জনতা ঈদের নামাজের বার্ষিক জামাতে সানন্দে উপস্থিত হয়। এ যেন একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ, কোলাকুলি ও কুশল বিনিময়ের এক অপূর্ব সুযোগ। তখন ছোট-বড়, ধনী-গরিব, আমির-ফকির, শিক্ষিত-অশিক্ষিতের মধ্যে কোনো রকম ভেদাভেদ বা বৈষম্য থাকে না।
ঈদের নামাজের অশেষ ফজিলত ও সম্মানজনক মর্যাদা সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘ঈদুল ফিতরের দিন ফেরেশতারা রাস্তার মুখে মুখে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন: হে মুসলিম! নেককাজের ক্ষমতাদাতা ও সওয়াবের আধিক্যদাতা আল্লাহর কাছে অতি শিগগির চলো। তোমাদের রাতে ইবাদত করার হুকুম করা হয়েছিল, তোমরা তা করেছ, দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তোমরা তা পালন করেছ। তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তাকে খাইয়েছ (অর্থাৎ গরিব-দুঃখীদের আহার দিয়েছ) আজ তার পুরস্কার গ্রহণ করো। অতঃপর মুসলমানরা যখন ঈদের নামাজ পড়ে তখন একজন ফেরেশতা উচ্চ স্বরে ঘোষণা করেন, তোমাদেরকে তোমাদের সৃষ্টিকর্তা ক্ষমা করে দিয়েছেন। এখন তোমরা তোমাদের পুণ্যময় দেহ-মন নিয়ে নিজ নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন কর।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর