শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৩৭ অপরাহ্ন

ই-পেপার

চাটমোহরে স্বেচ্ছাশ্রমে ৫৫০ ফুটের বাঁশের সেতু বানালেন গ্রামবাসী জনপ্রতিনিধিদের ওপর ক্ষোভ

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: রবিবার, ১৯ জুলাই, ২০২০, ৬:৪৯ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিনিধি:

কেউ দিলেন বাঁশ, কেউ দিলেন বাঁশ কেনার টাকা।এগিয়ে এলেন পুরো গ্রামবাসী।দীর্ঘ প্রায় একমাসের স্বেচ্ছাশ্রমে নদীর ওপর তৈরি করলেন ৫৫০ ফুট দৈর্ঘ্যরে অস্থায়ী বাঁশের সেতু।

এই সেতু তৈরির ফলে দীর্ঘদিনের জনদুর্ভোগ লাঘব হলো প্রায় ১২টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের কাটাখালি পশ্চিমপাড়া এলাকায় চিকনাই নদীর ওপর নির্মিত এই বাঁশের সেতু তৈরি করে এখন প্রশংসায় ভাসছেন পুরো গ্রামবাসী।

তবে দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সেখানে একটি কংক্রিটের সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীদের মধ্যে।

সরেজমিন গিয়ে জানা জানা যায়, উপজেলার শেষ সীমানায় অবস্থিত কাটাখালি পশ্চিমপাড়া গ্রামটি।নদীর ওপারেই একই উপজেলার আরেকটি গ্রামের নাম ‘খৈরাশ’।

বর্ষাকাল এলেই খৈরাশ গ্রামটি উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।ওই গ্রামে প্রবেশের নেই কোনো পাকা সড়ক।

এই দুই গ্রামের আশেপাশেই ঘিরে রয়েছে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ও চান্দাই ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম। তাদের যোগাযোগ বেশিরভাগ চাটমোহর কেন্দ্রিক।

শুধু তাই নয়, ওই এলাকায় রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। পশ্চিমপাড়া (কাঠগড়া ব্রিজ) এলাকায় চিকনাই নদীর ওপর কোনো সেতু না থাকায় জনদুর্ভোগের শিকার হয়ে থাকেন লক্ষাধিক মানুষ। বর্ষাকাল এলেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিঙি নৌকায় নদী পারাপার হয়ে থাকেন সবাই।

এছাড়া ওই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই থাকেন কৃষক কাজে নিয়োজিত।যানবাহনের অভাবে মাঠ থেকে ফসল আনা-নেয়া করা বা কেউ অসুস্থ হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে পারেন না কেউ।

অসুস্থ রোগীদের পল্লী চিকিৎসকরাই একমাত্র ভরসা। জনপ্রতিনিধিদের কাছে দীর্ঘদিন এলাকাবাসী সেখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে এলেও শুধু আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি।

তাই, গত একমাস পূর্বে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে স্থানীয়রা বসে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন।স্বেচ্ছাশ্রমে এগিয়ে আসেন সরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।বাদ যাননি নারীরাও।তারাও সাধ্যমতো সহযোগিতা করেন সেতু নির্মাণ কাজে।

ক্ষোভের সুরে আবদুল লতিফ নামে কান্দিপাড়া গ্রামের এক কৃষক  জানান, ছোটবেলা থেকেই শুনেছিলাম কাঠগড়া এলাকায় ব্রিজ নির্মাণ হবে। আস্তে আস্তে বড় হয়েছি।

এমপি, চেয়ারম্যান-মেম্বার থেকে শুরু করে অনেকের কাছেই ধর্ণা দিয়েছি।কিন্তু সেতু নির্মাণ হয়নি! মাহমুদ আলী খলিফা নামে আরেক জন বলেন, এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে ৫৫০ ফুট দৈর্ঘ্যরে সেতু বানিয়েছে।এটা দেথে জনপ্রতিনিধিদের লজ্জা পাওয়া উচিত।

ডিবিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবীর উদ্দিন মোল্লা  বলেন, সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে বহুবার বিভিন্ন দফতরে গিয়েছি। আমিও আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাইনি। তবে এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলি মো. রাজু আহম্মেদ  বলেন, আমি ওই এলাকা পরিদর্শন করে সেখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছি।প্রকল্প অনুমোদন হলে খুব শিগগিরই সেখানে সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার মোহাম্মদ রায়হান  বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না।আমি এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে উর্ধ্বৃতন কর্তৃপক্ষকে জানাব এবং সেখানে যেন একটি সেতু নির্মাণ হয় সে ব্যাপারে আপ্রাণ চেষ্টা করবো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর