সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

কোরআন হাদীসের আলোকে ঋণ পরিশোধ না করার ভয়াবহ শাস্তি – মাওলানা: শামীম আহমেদ।

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩, ৭:৪১ অপরাহ্ণ

মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের আশায়, সওয়াবের নিয়তে বিনা শর্তে কাউকে কোনো কিছু ঋণ দিলে তাকে ‘কর্জে হাসানা’ বা উত্তম ঋণ বলে। ইসলামী আর্থসামাজিক ব্যবস্থায় কর্জে হাসানার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।
কর্জে অর্থ ঋণ, ধার বা কর্জ; আর হাসানা অর্থ উত্তম। উভয়ে মিলে ‘কর্জে হাসানা’ বা উত্তম ঋণ।
মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে মানুষকে উত্তম ঋণ প্রদানের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। উত্তম ঋণের বহুগুণ বিনিময় ঘোষণা করেছেন। যাতে মানুষ পরস্পরের বিপদে এগিয়ে আসে।
এই আর্থিক ইবাদতের মধ্যে আজ আমাদের আলোচ্য বিষয় হল ‘করজে হাসানা’ তথা উত্তম ঋণ। করজে হাসানা বা উত্তম ঋণ প্রদান প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘কখনও তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু (আল্লাহ তাআলার রাস্তায়) ব্যয় না করবে।’
(সূরা আল ইমরান : ৯২)
‘কে সেই ব্যক্তি? যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করবে, ফলে আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ, বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আর আল্লাহই রিজিক সংকুচিত করেন এবং বৃদ্ধি করেন আর তোমাদেরকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৪৫)
করজে হাসানা বা উত্তম ঋণ আদান-প্রদানে রয়েছে অনেক ফজিলত। এ কথা যেমন ঠিক আবার ঋণ নিয়ে যদি তা পরিশোধ করা না হয় সে সম্পর্কেও রয়েছে কঠিন সতর্কতা। এ সম্পর্কেও পবিত্র কোরআন হাদিসে রয়েছে আরো সুস্পষ্ট নির্দেশনা-
– ঋণ গ্রহণ সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বনে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে মুমিনগণ! তোমরা যখন পরস্পরে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণের আদান-প্রদান কর, তখন তা লিখে নাও।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৮২)
– আবার যদি কেউ ঋণ গ্রহণ করার পর তা দিতে অপারগ হয় বা কষ্টে পতিত হয়, সে সময় ঋণদাতার করণীয়ও আল্লাহ ঘোষণা করেছেন,
‘আর ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি যদি অভাবী হয়, তাহলে তাকে স্বচ্ছল হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও। আর যদি ঋণ মাফ করে দাও, তাহলে সেটা তোমাদের জন্য আরো উত্তম, যদি তোমরা তা জানতে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৮০)
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে তাদের ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে অনেক সতর্ক করেছেন। ঋণ পরিশোধের গুরুত্ব সম্পর্কে রয়েছে প্রিয় নবীর অসংখ্য হাদিস। যার কিছু তুলে ধরা হলো-
– হযরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন ‘কোনো ব্যক্তি ঋণ রেখে মারা গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই ব্যক্তির জানাযা পড়াতেন না বরং অন্যকে পড়াতে নির্দেশ দিতেন।
(দারাকুতনি, তারগিব-তারহিব)
– বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কারো কাছে কর্জ নেয় এবং তা আদায় করার নিয়ত রাখে না, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেবেন।’
– হযরত ছোহায়েব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করেছে কিন্তু তা পরিশোধ করার ইচ্ছা পোষণ করেনি সে ব্যক্তি চোর সাব্যস্ত হয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে।’ (ইবনে মাজাহ, তারগিব)
– হযরত বারা ইবনে আজে রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘ঋণী ব্যক্তি ঋণের কারণে নিঃসঙ্গ বন্দী জীবন-যাপন করবে এবং তা অশান্তি থেকে মুক্তি পাবার জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতে থাকবে। (তাবারানি, তারগিব-তারহিব)
– হযরত মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর খাদেম হযরত আবুল কাসেম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি ঋণ গ্রহণ করে কিন্তু সে ঋণ পরিশোধ করার ইচ্ছা পোষণ করে না, পরিশোধের জন্য তৎপর হয় না; তার নেকিসমূহ ঋণদাতার নেকির সঙ্গে মিশানো হবে, (ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির) নেকি না থাকলে ঋণদাতার গোনাহসমূহ ঋণী ব্যক্তির ওপর চাপানো হবে।’ (বাইহাকি, তারগিব, তারহিব)
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য ঋণ পরিশোধ করা অত্যন্ত জরুরি। এ কারণেই কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর যদি সে ঋণগ্রস্ত থাকে তবে তার সম্পদ থেকে প্রথমে ঋণ পরিশোধ করা জরুরি অতঃপর বাকি সম্পদ অংশীদারদের জন্য প্রযোজ্য।
ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি ইসলামের জন্য শাহাদাতকারীও হয় তবুও তাকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এ সম্পর্কে প্রিয় নবী (সা.) একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেন-
– হযরত কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকদের সমাবেশে দাঁড়ালেন এবং এই আলোচনা করলেন যে, আল্লাহর দ্বীনের জন্য জেহাদ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান সর্বোত্তম আমল বটে। এক বক্তি জিজ্হাসা করলেন, আমি আল্লাহর দ্বীনের জন্য জেহাদে যদি নিহত হই, তবে আল্লাহ আমার জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন কি?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (এবার সংশোধনের সঙ্গে উত্তর দিলেন) বললেন, ‘হ্যাঁ’, যদি তুমি রণাঙ্গনে স্থিতিশীল থাক, সাওয়াব লাভের নিয়ত করে থাক, সম্মুখ দিকে থাক, পলায়নের দিকে না থাক; কিন্তু ঋণ ব্যতিত। (ইসলামের জন্য শহিদ হওয়ার দ্বারা ঋণ মাফ হবে না।) এই মাত্র জিবরিল আমাকে একথা বললেন।’ (মুসলিম)
– তবে অন্য বর্ণনা হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা নৌযুদ্ধে শহিদদের সব গোনাহ এবং ঋণও মাফ করেন।’ (ইবনে মাজাহ)
সুতরাং কোনোভাবে ঋণগ্রস্ত হলে সে ঋণ আদায়ে যথাসম্ভব চেষ্টা করা উচিত। ঋণ আদায়ের সামর্থ না থাকলেও ঋণ আদায়ের প্রবল ইচ্ছা পোষণ ও চেষ্টা করা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উত্তম ঋণ গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আবার সে ঋণ যথা সময়ে যথাযথভাবে আদায় করারও তাওফিক দান করুন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর