চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি:
মাত্র১৪ বছর বয়সে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে কবুতর ও বাসা-বাড়ি, গরু-মুরগির খামার থেকে বৈদ্যুতিক বাল্ব চুরি করা দিয়ে হাতে খড়ি রনির। বাদ দেয়নি আত্মীয়-স্বজনকেও। একসময় আপন মামার সিএনজি চালিত অটোরিকশা চুরি করে বিক্রি করে দেয়। এভাবেই বর্তমানে ভয়ঙ্কর মোটর সাইকেল চোরে পরিণত হয়েছে সে। যেকোনো জায়গায় চোখের নিমেষেই হাওয়া করে দিতে পারে মোটরসাইকেল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে তার বিশাল মোটরসাইকেল চোরের নেটওয়ার্ক। মোটরসাইকেল চুরিতে পারদর্শী এই তরুণের নাম রনি হোসেন (২৫)। পাবনার চাটমোহর পৌর সদরের দোলং মহল্লার বাসিন্দা রনি দীর্ঘদিন পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই অপকর্ম করে আসছিল। অবশেষে ধরা খেতে হলো ভয়ঙ্কর মোটরসাইকেল চোর রনিকে। আর তাকে ধরার পরেই সফলতা পেয়েছে চাটমোহর থানা পুলিশ। তার দেয়া জবানবন্দিতে একে একে উদ্ধার করা হয়েছে চুরি যাওয়া ৫ টি মোটর সাইকেল। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (০৯ জুলাই) রাতে পুলিশের একটি দল রনিকে টঙ্গি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
পরে তার দেয়া তথ্য মতে ঈশ্বরদীর রুপপুর এলাকা থেকে সহযোগী শাহীন এবং রুবেল নামে কুখ্যাত দুই চোরকেও আটক করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। জানা গেছে, ১৪ বছর বয়স থেকে চুরি জীবন শুরুর পর প্রথমেই একই এলাকার দোলং মহল্লার আকাশ হোসেনের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হয় রনি। সিঁধেল চুরি থেকে শুরু করে সবকিছুই করতো তারা দু’জনে মিলে। এরপর মোটরসাইকেল চুরি করা তাদের নেশায় পরিণত হয়। বাদ দেয়নি পুলিশ কর্মকর্তার মোটর সাইকেল চুরিও। শুধু চাটমোহর থেকেই প্রায় শতাধিক মোটর সাইকেল চুরি করে। দিনের আলোয় আত্মগোপনে থাকলেও রাতের বেলায় তারা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতো। বাসা-বাড়ির তালা ভেঙ্গে মোটরসাইকেল চুরি তাদের কাছে যেন বা হাতের খেলা। সময়ের ব্যবধানে ধীরে ধীরে পাবনা সদর, ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া, বরিশাল, ঢাকা, টঙ্গিসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে রনি। তবে আকাশ নামের ওই সহযোগীকে চুরি করার পারিশ্রমিক হিসেবে দিত মাত্র ৫০০-১০০০ টাকা। প্রতিটি মোটর সাইকেল রনি বিক্রি করতো ৫০ হাজার থেকে শুরু করে লাখ টাকায়। এখানেই শেষ নয়, টঙ্গিতে দুই স্ত্রীকে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো কুখ্যাত চোর রনি। গড়ে তুলেছিল বিশাল সাম্ররাজ্য। রনির চলাফেরা ছিল কোটিপতিদের মতো। ফুঁকতেন বেনসন সিগারেট। ব্যবহার করতেন দামি মোবাইল ফোন।
সবসময় নিজের কাছে রাখতেন দামি মোটরসাইকেল (চুরি করা)। তবে রনিকে গ্রেফতারের খবরে স্বস্তি ফিরেছে চাটমোহরবাসীর মধ্যে। চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, রনি মোটরসাইকেল চোর চক্রের মুলহোতা। তার বিরুদ্ধে থানায় বেশ কয়েক’টি চুরির মামলা রয়েছে। আটকের পর তার দেয়া তথ্যে মতে ৫টি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আদালতের কাছে রনিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। রিমান্ড পেলে আরও বেশকিছু মোটরসাইকেল উদ্ধার করা যাবে বলে জানান ওসি।