মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:২৬ অপরাহ্ন

ই-পেপার

শিরোনাম :
শিরোনাম :
চাটমোহরে মানব সেবা অভিযানে গাছ বিতরণ ও অনুদান প্রদান রাণীনগরে সালিশে হাজির না হওয়ায় বাড়িতে হামলা: ভাঙচুর তালাবদ্ধ অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে প্রশংসায় ভাসছেন ইউএনও রিজু তামান্না ভূমিসেবা পেতে সরকারি খরচ ছাড়া অতিরিক্ত টাকা নিলে কঠোর ব্যবস্হা, হুশিয়ারি জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের সাতক্ষীরা টিটিসিতে মানবপাচারের বিরুদ্ধে সচেতনতা সেশন অনুষ্ঠিত রাণীনগরে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারীকে ধ*র্ষ*ণ*চেষ্টা: অভিযুক্ত অধরা পাকুন্দিয়ায় আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন ও র‍্যালি অনুষ্ঠিত অভয়নগরে ভয়াবহ মাদকের ছড়াছড়ি, বাড়ছে চুরি ছিনতাইসহ নানামুখী অপরাধ

আজ ২৭ নভেম্বর সাঁথিয়ার ধুলাউড়ি গণহত্যা দিবস

শামীম আহমেদ, সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২, ৬:০৮ অপরাহ্ণ

আজ ২৭ শে নভেম্বর সেই ভয়াল ধুলাউড়ি গণহত্যাযজ্ঞের দিন। সারাদেশে চলছে মুক্তিযুদ্ধ। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় দু’শ মুক্তিযোদ্ধা এসে অবস্থান নিয়েছেন সাঁথিয়া থানার ধুলাউড়ি গ্রামে। একই গ্রামে সকলের অবস্থান করা নিরাপদ নয় ভেবে মুক্তিযোদ্ধারা ভাগাভাগি করে পার্শবর্তী বিলসলঙ্গী,রামকান্তপুর,পাইকশা,নাড়িয়াগদাই প্রভৃতি গ্রামে রাতযাপনের ব্যবস্থা করেন। এদিকে দীর্ঘ কয়েক মাস দেশের বিভিন্নস্থানে একটানা যুদ্ধ করে সবাই ক্লান্ত-শ্রান্ত। সাঁথিয়া থানা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে জায়গাটি তাদের ধারণায় কিছুটা নিরাপদ মনে হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল রাত পোহালে পরবর্তী আক্রমনের জন্য সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতি নেবেন। এদিকে কিছুদিন আগে(১৯৭১, সেপ্টেম্বর মাসে) মুক্তিযোদ্ধারা সাঁথিয়া হাইস্কুলে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমন করে ৯ জন রাজাকারকে হত্যা করেন এবং অস্ত্রলুট করে নেন। মুক্তিযোদ্ধা কর্তৃক রাজাকার হত্যা ও অস্ত্রলুট হওয়ায় দালালরা খুবই তৎপর ছিল ও পাকসেনারাও সাঁথিয়ার ওপর নজর রাখছিল।
২৭ শে নভেম্বর। রাত আনুমানিক ৩ টা। চারদিকে গা ছমছম করা থমথমে ভাব, ভুতুড়ে নিরবতা। দূরে কুকুরের করুণ সুরের গোংড়ানি যেন অশুভ ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ গুলির শব্দ। দালালের সহায়তায় পাঁচ’শ পাকসেনা খুবই কৌশলে ধুলাউড়ি গ্রাম ঘিরে ফেলেছে। কথিত আছে, পার্শ্ববর্তী বেড়া থানার জোড়দহ গ্রামের আসাদ নামের জনৈক দালাল ছিল এই নির্মম হত্যাকান্ডের পথপ্রদর্শক । ডিউটিরত মুক্তিযোদ্ধারা সময়মতো তাদের সহযোদ্ধা বা গ্রামবাসীকে সতর্ক করার কোন সুযোগ পাননি। ভোররাত থেকে শুরু হয় পাকসেনাদের তান্ডবলীলা। একাধারে চলতে থাকে হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ ও অগ্নি সংযোগ। অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধারা ও ঘুমন্ত গ্রামবাসী হতবিহবল হয়ে প্রাণভয়ে দিকÑবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। পাকসেনারা বাড়ি বাড়ি থেকে যুবতী মেয়েদের ধরে একটি বড় আমগাছের নিচে নিয়ে এসে উপর্যুপরি ধর্ষণ ক’রে গা থেকে গহনাপত্র খুলে নিয়ে লাথি মেরে পার্শ¦বর্তী খালে ফেলে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা ও বহু গ্রামবাসীকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে ঘুমন্ত অবস্থায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে। রশি দিয়ে একত্রে বেঁধে ইছামতি নদীর পাড়ে নিয়ে এসে ব্রাশ ফায়ারে নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। ওইদিনের হত্যাকান্ডে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৯ জন গ্রামবাসীর লাশ সনাক্ত করা হয়েছিল। এরা হচ্ছেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা খবির উদ্দিন(পদ্মবিলা), আখতার হোসেন(ইসলামপুর ),দ্বারা হোসেন( রঘুনাথপুর), চাঁদ বিশ্বাস ( রঘুনাথপুর), মহসীন আলী (কাজিপুর), শাহজাহান আলী ( চরতাঁরাপুর), মকছেদ আলী (বামুনডাঙ্গা), মুসলিম উদ্দিন ( চরতাঁরাপুর)। হত্যার শিকার গ্রামবাসীরা হচ্ছেন আবুল কাশেম ফকির , ডাঃ আঃ আওয়াল, জহুরুল ইসলাম ফকির, আঃ রশিদ ফকির, আঃ গফুর, আঃ সামাদ , নইম উদ্দিন খলিফা, ওয়াজেদ আলী, কোবাদ বিশ্বাস, আখতার হোসেন তালুকদার  প্রমুখ।
সে দিন পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হওয়া ৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে তাদের গায়ের চাঁদর দিয়ে জড়িয়ে কোন মতে ধুলাউড়ি ফকিরপাড়া প্রাইমারী স্কুলের সামনে দাফন করা হয়। সেখানে আরও রাখা হয় ব্রাশ ফায়ারে নিহত ১০/১১জন গ্রামবাসীকে। সেটি এখন গণকবর হিসেবে পরিচিত। সে দিনের ব্রাশ ফায়ারে বেঁচে যাওয়া শাহজাহান(পাকসেনারা বেয়োনেট দিয়ে যার গলা কেটে দিয়েছিল) মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গলাকাটা শাহজাহান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ”৭১Ñএ ধুলাউড়ির সেই নির্মম হত্যাযজ্ঞ এখনো সাঁথিয়াবাসীর কাছে দুঃখ ও বেদনার স্মৃতি হয়ে আছে। বর্তমানে সেখানে শহীদদের স¥রণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও  দিবসটি যথাযথভাবে পালনের উদ্দেশ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর