পরীর চোখে ঘুম নেই। মন পুরুষ মনে দাঁগ কেঁটে গেছে।
পরী মনে মনে বলল,”তোমায় ছাড়া বাঁচবোনা আমি। ”
পরী কোলবালিশ জড়িয়ে আছে। বিয়ের আগে প্রত্যেক যুবতী নারীর প্রিয় কোলবালিশ। কোলবালিশ ছাড়া চোখে ঘুম আসেনা।
পরী আবার বিরবির করে বলল,”তুমি আমার চাঁদ। ”
জানালা দিয়ে ঝিঝি পোঁকা আলো জ্বেলে ঘরে ঢুকছে।
পরী বলল,”ওগো ধরা দাও এ বুকে। ”
একই খাঁটে ঘুমিয়েছিল চাচাত বোন ঝুমি। ঝুমি অনেক আগেই জাগা পেয়েছে।
তারা সম বয়সী।
পরীকে ঠেলা দিয়ে ঝুমি বলল,”পরী স্বপ্ন দেখছিস। ”
খিলখিল করে হেসে পরী বলল,”না স্বপ্নের মানুষকে দেখি। ”
ঝুমি বলল,”ও স্বপ্নের মানুষ তাইনা। ”
পরী ঝুমিকে জড়িয়ে ধরে বলল,” পুরুষ মানুষ খালি আমায় জ্বালায়। ”
ঝুমি বলল,”তার পরিচয় দে। ”
পরী বলল,”সকালে দেখিস। ”
তারা আর কথা বলেনা। অনেক রাত হয়েছে। ঘুম চোখে এসে গেল।
সবার প্রিয় ঘুৃম।
পাখি ডাকা সুন্দর একটি সকাল। হাসান কোচিং এ পড়ে। তাই রোজ সকালে পরীর বাড়ির রাস্তা দিয়ে যায়।গায়ের এক মাত্র রাস্তা। যা পরীদের বাড়ির পিছন দিয়ে গেছে। বলতে গেলে নদীর মত একেবেঁকে রাস্তাটি।
পরী জানালা খুললেই দেখতে পায়।
হাসান ছেলেটি খুব ভদ্র। বাবা স্কুল মাষ্টার। মা নেই। মারা গেছে। বাবা খুব আদরে হাসানকে মানুষ করেছে। পরী জানালা দিয়ে হাসানকে দেখছে।
পরী সত্যিই পরীর মতন।
ঝুমি বলল,”এটাই তোর স্বপ্ন পুরুষ তাই না।”
পরী বলল,”এটাই সে। ”
ঝুমি বলল,”সে জানে। ”
পরী মাথা ঝুকিয়ে বলল,”জানে তবে হা না কিছুই বলেনি। ”
ঝুমি বলল,”বলিস কি? সুন্দরীকে অপমান। ”
পরী বলল,”এতে অপমান কিসের। ”
ঝুমি হাত ধরে পরীকে বাহিরে নিয়ে এলো। রাস্তা ইট পারা। পাঁকা হয়নি।
গ্রামটি অনেক সুন্দর যেন পরীর মত।
হাসান বেশি দূর যায়নি। ধিরেধিরে হাটার অভ্যাস ওর। সবে মাত্র পরীদের ফুল বাগানের কাছে।
ঝুমি পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলল,”হাসান ভাইয়া,হাসান ভাইয়া। ”
হাসান পিছন ফিরে,দাঁড়িয়ে রইলো।
ঝুমি ও পরী হাসানের কাছে গেল।
ঝুমি বলল,”আমার আপুকে গ্রহন করছেন না কেন। “
তোতলাতে তোতলাতে হাসান বলল,”মানে। ”
ঝুমি বলল,”পরী জানতে চায় তাকে ভালোবাসেন কিনা। ”
হাসান বলল,”আমার সময় লাগবে। ”
ঝুমি বলল,”কয়দিন সময় নিবেন হাসান ভাইয়া। ”
হাসান বলল,”জানিনা। ”
ঝুমি বলল,”ঠিক আছে ভেবে বলুন,আমার আপু তো কালো নয়। “
হাসান বলল,”সুন্দরী। ”
ঝুমি বলল,”তাহলে রাজি হয়ে যান। ”
হাসান বলল “ভাবছি। ”
ঝুমি বলল,”ভাবুন। “
হাসান কিছু বলেনা। চলে যায়। ঝুমি একটু হাসে।
পরী বলল,”হাসলি কেন। ”
ঝুমি বলল,”আমার কি হাসা মানা,কাদবো নাকি। ”
তারা ঘরে ফিরে এলো।
হাসানের চিন্তা বেরে গেল। আবার তো পরী রাস্তার ধরবে। মানুষ দেখলে সুনাম কাঁটা পরবে।
তাই বন্ধুর কাছ থেকে সাইকেল নিল। পরীর বাড়ির কাছে এলেই সাইকেল জোড়ে টান দিবে।
হাসান সাইকেল চালায়। পরীর বাড়ি দ্রুতই পার হয়।
পরী রাগে বলল,”ঝুমি কি করা যায় কতো। ”
ঝুমি বলল,”চল হাসানদের বাড়িতে যাই। ”
পরী বলল,”তুই পাগল নাকি। ”
ঝুমি বলল,”মাষ্টার মশাই ভালো মানুষ,চল যাই। “
তারপর তারা একটি বই নিয়ে হাসানদের বাড়ির দিকে গেল। পরীর হাতে ইংরেজী বই। পরনে লাল ড্রেস।
যেন বিকেলের প্রকৃতি বলল,”পরী তুমি সত্যিই পরী। ”
তারা বাড়িতে এলো।
হাসানের বাবা বসে আছে। ঝুমি বলল,”স্যার হাসান ভাইয়া কোথায়,একটু পড়া জেনে নিতে এসেছি। ”
মাষ্টার মশাই বলল,”ঘরে আছে যাও মা। ”
সুন্দরীরা ঘরে যায়। হাসান চমকে উঠে।
হাসান বলল,”তোমরা। ”
পরী বলল,”হা আমরা। ”
হাসান বলল,”কেন এসেছ। ”
পরী বলল,”জানতে এসেছি। ”
হাসান একটা কাগজের টুকরো ধরিয়ে দিল।
ঝুমি বলল,”এটা কি। ”
হাসান বলল,”এখন যাও এতে সব লেখা আছে। ”
পরী বলল,”ও তাই। ”
পরী খুলতে যাবে,হাসান থামিয়ে দিয়ে বলল,”বাড়িতে গিয়ে পড়। ”
ঝুমি বলল,”লজ্জা,চল যাই। ”
সুন্দরীরা চলে গেল। বাড়ির বাহিরে মাষ্টার মশাই নাই।
তারা রাস্তাতেই পড়ে ফেলল।
পরী খুব খুশি। কেননা হাসানও তাকে ভালোবাসে।
পরী ঝুমিকে জড়িয়ে ধরে বলল,”হৃদয়টা শান্তি পেল রে।
ঝুমি বলল,”প্রেমটা স্বার্থক কর। ”
তারা বাড়িতে গেল। সুন্দর ভাবে কাঁটছে প্রেমের দিন গুলো।
মাঝে মাঝে পরী একাই যায় মাষ্টার বাড়ি। হাসানের সাথে দেখা করতে। মাষ্টার মশাইও কিছু বলেনা।
পুত্র বধূ হিসেবে পরী সত্যিই পরী। মাষ্টারের কানে দু এক কথা আসলেও মাষ্টার পাত্তা দেয়না।
সে মানুষকে বলল,”ছেলের পছন্দই আমার পছন্দ, তাছাড়া পরী তো অসুন্দর নয়। “
তাদের প্রেমের এক বছর কেঁটে গেল।
মাষ্টার মশাই ও পরীর বাবা দুজনা বিয়াই বানাতে রাজি। সামনের কোরবাণী ঈদেই তাদের বিয়ে ঠিক ঠাক। দু পরিবার গরুও কিনেছে।
ধূমধাম বড় করে করবে।
এর মধ্যেই পরী ও ঝুমি মাষ্টার বাড়িতে গেল।
মাষ্টার বলল,”কি মা। ”
পরী বলল,”বই। ”
মাষ্টার বলল,”দুদিন পর তুমিই তো আসবে আবার বই কেন মা। ”
পরী বলল,”জ্বি বাবা। “
সবাই হেসে উঠলো। হাসান বারান্দায় দাঁড়িয়ে। তার মুখ কালো হয়ে গেল।
মাষ্টার বলল,”যাও ঘরে নিয়ে গিয়ে মেহমানদের ভাজা বিস্কিট দাও। ”
তারপর পরীরা ঘরে গেল। ঝুমি কুটুম হয়ে গেল। আর পরী তো,তার কথা বলাই যায়না। পরী সে থেকে আর মাষ্টার বাড়ির বাহির হয়নি। চিরদিনের জন্য হাসানের গলায় ঝুলে আছে। যেন কাঁটা হয়ে,হাসান বলল,”পরী তুমি সত্যিই পরী।
পরীর হাসিতে সারা ঘর হেসে উঠে।