বিশ্বজনীন শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবজাতির জন্য কল্যাণকামী একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা ‘ইসলাম’। এর অর্থ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে তাঁর নির্দেশ মান্য করার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জন। এ জন্য পৃথিবীতে সত্য-ন্যায়ের মাধ্যমে সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা ইসলামের দৃষ্টিতে অপরিহার্য কর্তব্য ও ইমানি দায়িত্ব। সুতরাং মানবসমাজে কোনো রকম অশান্তি সৃষ্টি, বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, উগ্রতা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ইসলামে নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছে, ‘তোমরা পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনের পর এতে বিপর্যয় সৃষ্টি কোরো না।’ (সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ৫৬) আরও বলা হয়েছে, ‘তারা (ইসলামের শত্রুরা) দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়, আর আল্লাহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা আল মায়িদা, আয়াত: ৬৪)
ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বকালে আরবদের জাতিগত হিংসা-বিদ্বেষ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধবিগ্রহের বীভৎস কর্মকাণ্ডে এবং বিভিন্ন জনপদে দুর্নীতি ও হানাহানিতে আড়ষ্ট হয়ে পড়েছিল পৃথিবী। ব্রহ্মাণ্ডকে এ চরম দুর্গতি থেকে উদ্ধার করার জন্য বিশ্বমানবতার মুক্তিদাতা ও শান্তির অগ্রদূত রূপে বিশ্বনবী (সা.) আবির্ভূত হন। তিনি মানবতার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের জন্য সমাজের প্রত্যেক সদস্যকে ইসলামের সুমহান আদর্শে শিক্ষিত করে গড়ে তোলেন। অনুসারীদের আত্মিক, নৈতিক, চারিত্রিক গুণে বলীয়ান করে শান্তি প্রতিষ্ঠার অতন্দ্রপ্রহরীতে পরিণত করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.)
দৃপ্ত ঘোষণা করেন, ‘সে-ই প্রকৃত মুসলমান, যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদে থাকে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
প্রাক-ইসলামি যুগে আরবের সামাজিক জীবনে সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া, ব্যভিচার, লুণ্ঠন, চুরি, ডাকাতি, অন্যায়, অত্যাচার ও দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল। বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব, কলহ, ঝগড়া-বিবাদ ও যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই থাকত। নবী করিম (সা.) সংলাপের মাধ্যমে গোত্রীয় যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেন এবং সামাজিক সংস্কারের অপূর্ব নিদর্শন রেখে গেলেন। তিনি চিন্তা করতেন, কীভাবে গরিব, অসহায়, দুর্বল ও নির্যাতিত জনতাকে অত্যাচারী ও সবল ব্যক্তিদের হাত থেকে রক্ষা করা যায়। এ জন্য নিঃস্বার্থ উৎসাহী যুবকদের নিয়ে তিনি একটি শান্তি কমিটি গঠন করেন, ইসলামের ইতিহাসে এটি ‘হিলফুল ফুজুল’ বা ‘শান্তি চুক্তি’ নামে পরিচিত। এ শান্তি সংঘ ৫৯৫ খ্রিষ্টাব্দে গঠিত হয়েছিল এবং প্রায় ৫০ বছর ধরে স্থায়ী হয়েছিল। এভাবে নবুয়ত লাভের আগেই তিনি মানুষের কল্যাণ ও নিরাপত্তার জন্য আত্মনিয়োগ করেন এবং সমাজে বিদ্যমান কলহ-বিবাদ, দ্বন্দ্ব ও সংঘাত দূর করে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) জনগণের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য করো, সে অত্যাচারী হোক অথবা অত্যাচারিত হোক! যদি সে অত্যাচারী হয়, তবে তাকে প্রতিরোধ করো, আর যদি সে অত্যাচারিত হয়, তবে তাকে সাহায্য (রক্ষা) করো।’ (দারেমি)