রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৯ অপরাহ্ন

ই-পেপার

সোরিয়াসিসঃকারন,লক্ষণ ও হোমিওপ্যাথিক মতে চিকিৎসা

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২, ৬:০৫ অপরাহ্ণ

সোরিয়াসিস ত্বকের একটি প্রদাহজনিত রোগ। এটি একটি জটিল রোগ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কোনো বয়সীরা এ রোগে আক্তান্ত হতে পারে। তবে ত্রিশোর্ধ্বরা বেশি আক্রান্ত হয়। এটি সংক্রামক রোগ নয়, কাজেই সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় না। মানুষের ত্বকের কোষস্তর প্রতিনিয়ত মারা যায় এবং নতুন করে তৈরি হয়। সোরিয়াসিসে এই কোষ বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। যেমন ত্বকের সবচেয়ে গভীরের স্তর থেকে নতুন কেরাটিনোসাইট কোষ ওপরের স্তরে আসতে স্বাভাবিকভাবে সময় নেয় ২৮ দিন, আর এ ক্ষেত্রে তা পাঁচ থেকে সাত দিন। কয়েক মিলিমিটার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার জায়গাজুড়ে এই সমস্যা দেখা দেয়। পৃথিবীতে ১ থেকে ২ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।
সোরাইয়াসিসের কারণঃ
বংশগত কারণ ছাড়া সোরিয়াসিস রোগের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নির্ণয় করা দুরূহ। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে দ্রুত বৃদ্ধি হতে পারে, যেমন কোন ধরনের সংক্রমণ, ত্বকে আঘাত জনিত কারণে, আবহাওয়াজনিত শীতে বেশি এবং কিছু ওষুধ সেবনের কারণে। এছাড়াও আরও লক্ষণ আছে-
১) জীবাণু সংক্রমণ, ২) লিভার ক্রিয়ায় গোলযোগ থাকলে, ৩) হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিকোন থেকে সোরা ধাতু দোষই হলো মূল কারণ, ৪) শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব, ৫) খাদ্যাখাদ্য, ৬) পুষ্টির অভাব, ৭) শীতপ্রধান অঞ্চল, ৮) কালো লোকদের তুলনায় সাদা/ফর্সা লোকদের বেশি হয়।
সোরাইয়াসিসের লক্ষণঃ
ত্বকের ওপর লাল লাল দাগ যা ঢাকা থাকে মোটা রুপোলি আঁশ দিয়ে।
এই স্পটগুলিতে খুব চুলকানি হয় এবং জ্বালা এবং যন্ত্রণাদায়ক ক্ষত হয়।
কোনও কোনও সময়ে অতিরিক্ত শুকনো হয়ে যাওয়ার দরুন বা চুলকানির জন্য ত্বক থেকে রক্ত ঝরে।বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে মাথার ওপরের অংশ, কনুই, এবং উপরের অংশে।নখের সোরাইয়াসিস হলে নখ মোটা হয়ে যায়, নখে ক্ষত হয় এবং নখের রং পাল্টে যায়। কখনও কখনও চামড়া থেকে নখ আলগা হয়ে যায়।
পাসচিউলার সোরাইয়াসিস হলে আঁশটে লাল রং হয়, ত্বক ফেটে যায় এবং হাত-পায়ের ওপর পুঁজ-ভর্তি ছোট ছোট ফোড়া দেখা যায়।
সংক্রমণের স্থানঃ
সোরিয়াসিস কেবল ত্বক নয়, আক্রমণ করতে পারে শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও। সাধারণত কনুই, হাঁটু, মাথা, হাত ও পায়ের নখ আক্রান্ত হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে মাথার ত্বক আক্রান্ত হতে পারে এবং হাতের নখের রঙ নষ্ট হয়ে যায় এবং গর্ত হয়ে যায়।
ক্ষতিকারক দিকঃ
সরাসরি সূর্যালোক ও শুষ্ক ত্বক সোরিয়াসিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর। তাই সরাসরি রোদে অনেকক্ষণ থাকা যাবে না। ত্বক আর্দ্র রাখতে নিয়মিত অলিভ ওয়েল, নারকেল তেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যায়।
খাদ্যাভ্যাস ও প্রভাবঃ
সোরিয়াসিস রোগের ক্ষেত্রে খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাসের কোনো সরাসরি প্রভাব নেই। ডায়াবেটিসের মতো এই রোগে দীর্ঘমেয়াদে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ওপর প্রভাব আছে; যেমন আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, লিভারের রোগ, রক্তে স্নেহজাতীয় পদার্থের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি। রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এই রোগের মারাত্মক প্রভাব রয়েছে।
হোমিও মতে চিকিৎসাঃ
 রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়। এই জন্য অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক রোগীর পুরা লক্ষণ নির্বাচন করে, সোরিয়াসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ম্যাজমেটিক চিকিৎসা দিতে পারলে এসব রোগীকে চিকিৎসা দেয়া আল্লাহর রহমতে হোমিওতে সম্ভব। প্রাথমিকভাবে যেসব ওষুধ লক্ষণের ওপর আসতে পারে— সালফার, সোরিনাম, আর্সেনিক আয়োড, আর্সেনিক এলবাম, ক্যালকেরিয়া কার্ব, এমন কার্ব, গ্রাফাইটিস, নাইট্রিক এসিড, থুজা, ব্যাসিলিনাম, সাইকিডটা, আইরিশ, সাইলেসিয়া, মেজিরিনামসহ আরও অনেক ওষুধ লক্ষণের ওপর আসতে পারে। চিকিৎসক ছাড়া ওষুধ নিজে নিজে ব্যবহার করলে রোগ আরও জটিল আকারে পৌঁছতে পারে।
রোগীর ঘরোয়া যত্ন:
রোগের প্রকোপ যাতে না বাড়ে, সে জন্য বেশি গোসল, সাবান ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। তৈলাক্ত জিনিস ঘন ঘন ব্যবহার করা যেতে পারে। নারকেল তেল, অলিভ অয়েল বা ভেসলিন ব্যবহার করা যায়। এগুলো ব্যবহার করলে এই রোগ খুব বাড়বে না।
সোরিয়াসিসের রোগীর খাবারঃ
  বাদাম, সামুদ্রিক মাছ ও মাছের তেল (ওমেগা–৩), সবুজ পাতাওয়ালা সবজি, শাক ইত্যাদি। সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি আছে যা উপকারী, তাই কিছুক্ষণ রোদে কাটানো ভালো।
রোগীর জন্য উপদেশ:
শুস্ক ত্বকে সোরিয়াসিস বৃদ্ধি পায়, ত্বক কে আদ্র রাখতে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।মাত্রাতিরিক্ত সূর্যালোক হতে সাবধান থাকবেন, তবে স্বল্প সময়ের জন্য সোরিয়াসিস আক্রান্ত ত্বক সূর্যালোকে রাখলে উপকার পাওয়া যায়।গোসলের সময় ত্বক বেশি ঘসাঘসি করবেন না।দুশ্চিন্তা, রাগ, মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন।প্রেসক্রিপশন অনুসারে নিয়মিত ঔষধ সেবন করবেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ঔষধ বন্ধ করবেন না। কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখকঃ
ডা.এম.এ.মান্নান 
(লেখক,গবেষক, শিক্ষক ও চিকিৎসক)
প্রতিষ্ঠাতা ম্যানেজিং ডিরেক্টর 
মুকতাদির হোমিও চিকিৎসা কেন্দ্র
নাগরপুর,টাংগাইল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর