বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করতে চাইলে তাদের চা খাওয়াবেন বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সরকারপ্রধান যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে আলোচনা বা সংলাপের ইঙ্গিত হিসেবেই দেখছেন দলটির নেতারা। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন বলেই চা খাওয়ানোর কথা বলে সংলাপ বা আলোচনায় বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা দেশি-বিদেশি শক্তির তৎপরতায় ভাটা পড়বে।
শনিবার (২৩ জুলাই) আওয়ামী লীগের এক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি তো বলে দিয়েছি তারা (বিএনপি) যদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করতে আসে, পুলিশ যেন বাধা না দেয়। বিশেষ করে বাংলামোটরে যে বাধা দেওয়া, সেটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছি। আসুক না হেঁটে হেঁটে, যতদূর আসতে পারে। কোনো আপত্তি নেই। আমি বসাব, চা খাওয়াব। কথা বলতে চাইলে শুনব।’
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা। চা খাওয়ানোর মন্তব্য মূলত প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সংলাপেরই আহ্বান বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা।
তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী এটা উদ্দেশ্য করেই বলেছেন। বিএনপি এখন কী করল, সেটা তাদের ব্যাপার। বিএনপির আন্দোলনের হুমকি-ধমকিতে নয়, মূলত নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের তৎপরতা আমলে নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সংলাপের পথ খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রকারন্তরে লাভ হবে আওয়ামী লীগের। প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের এই আহ্বান রাজনীতির মোড়ও ঘুরিয়ে দিতে পারে। তবে বিএনপির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া বলছে, তারা আপতত কোনো সংলাপে যাওয়ার বিষয়ে রাজি নয়।
রবিবার (২৪ জুলাই) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওনার কার্যালয়ে গেলে চা খাওয়াবেন। তার আগে বলে দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এনে দিচ্ছি। সেটা বলে দিন, তারপর চা-টা খাওয়া যাবে, অসুবিধা নেই। সবার আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নিন।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান অবশ্যই সংলাপে বসার আহ্বান। এটি সরকারপ্রধান রাখবেন বলেই বলেছেন। আলাপ-আলোচনা করে সমাধান চান বলেই আওয়ামী লীগ সভাপতি এই কথা বলেছেন। এখন বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানকে কীভাবে দেখবে, সেটা তাদের ব্যাপার। তবে যাদের মনে সন্দেহ কাজ করে তাদের বিষয়টা আলাদা। বিএনপি এই আহ্বানকে নেতিবাচক হিসেবে না দেখে আলোচনায় বসুক, সেটা আমরা চাই। প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান অবশ্যই সংলাপে বসার। আলাপ-আলোচনা করে সমাধান চান বলেই আওয়ামী লীগ সভাপতি এই কথা বলেছেন।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। গণতন্ত্র রক্ষায় যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আলোচনার দরজা সবসময় খোলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান চান।
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, বিএনপি আলোচনায় বিশ্বাস করে না। বিএনপি পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। ২০১৪ সালের নির্বাচন সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, এই এই মন্ত্রণালয় দিয়ে দেব। খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন, সেদিন খালেদা জিয়া বিরোধী দলের নেত্রী। উনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ করেছেন। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। গণতন্ত্র রক্ষায় যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আলোচনার দরজা সবসময় খোলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান চান।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের কথা তুলে ধরে হানিফ বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গণভবনে সৌহার্দপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা তো আলোচনার ভিত্তিতেই সবকিছু করতে চান। দেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হোক, গ্রহণযোগ্য হোক, নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করুক- এটা জননেত্রী শেখ হাসিনা চান। শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই এই কথা (চা খাওয়ানো) বলেছেন।