সালাম শব্দের অর্থ শান্তি। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সুন্দর কথা, পরম শান্তিময়, সর্বোচ্চ সম্মানজনক অভ্যর্থনামূলক ইসলামী অভিবাদন। ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য, আন্তরিকতা, নিরাপত্তা ও অকৃত্রিম ভালোবাসার বিনম্র অভ্যর্থনার বহিঃপ্রকাশ। জান্নাতের সর্বোচ্চ নিয়ামত, আল্লাহর দিদার। জান্নাতিরা নিজ চর্মচোখে মহান রব্বুল আলামিনকে প্রাণভরে দেখবে ও নিজ কানে তাঁর পবিত্র কথা শুনবে। সব নবী-রসুল, সর্বস্তরের জান্নাতিকে তাদের প্রেমাস্পদের সঙ্গে সাক্ষাতের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেদিন নুরের পর্দা উঠিয়ে সর্বপ্রথম আল্লাহ স্বীয় রহমত ও বরকতময় ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে অভিবাদন করবেন। সুরা আহজাব আয়াত ৪৪। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ জান্নাতিদের সম্বোধন করে বলবেন, ‘তোমাদের প্রতি দয়াময় রবের পক্ষ থেকে চিরস্থায়ী সালাম।’ সুরা ইয়াসিন আয়াত ৫৮।
কিয়ামতের ময়দানে হিসাব-নিকাশ শেষে জান্নাতিরা জান্নাতে যাওয়ার পথে কোটি কোটি ফেরেশতা সালাম দিয়ে তাদের জান্নাতের দরজায় অভিবাদন করবেন। মানব সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই সালামের প্রচলন। আল্লাহ যখন হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করলেন তখনই তাঁকে সালামের শিক্ষা ও নির্দেশ দেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ হজরত আদম (আ.)-কে যখন সৃষ্টি করলেন তখন বললেন যাও সামনে অবস্থানরত ফেরেশতাদের বিশাল একটি জামাতকে সালাম কর আর তারা তোমার সালামের কী উত্তর দেয় তা শ্রবণ কর এবং তাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের সালামের পদ্ধতি। তখন হজরত আদম (আ.) সামনে এগিয়ে বললেন আসসালামু আলাইকুম, জবাবে ফেরেশতারা বললেন, আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ। [রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,] তারা ওয়া রহমাতুল্লাহ অংশটি বৃদ্ধি করে বলেছেন।’ বুখারি, মুসলিম। ছেলেসন্তান লাভের সুসংবাদ ও আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত কওমে লুতকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহর প্রেরিত ফেরেশতারা যখন হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে আগমন করলেন তারা বললেন ‘সালাম’, তিনি বললেন আপনাদের প্রতিও সালাম, আপনারা অপরিচিত। এমনিভাবে সব নবীর কাছে প্রেরিত ফেরেশতারা প্রথমেই নবীকে সালাম প্রদান করেন। হজরত আবুজর গিফারি (রা.) বলেন, ‘আমি একদা নবীজির কাছে গেলাম, তিনি আমাকে বললেন আসসালামু আলাইকুম। আমি বললাম ওয়া আলাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ। [আবুজর (রা.) বলেন,] সর্বপ্রথম আমিই ওই ব্যক্তি যাকে মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাম প্রদান করেছেন।’ নবীজি বলেন, ‘কথা বলার আগেই সালাম প্রদান কর।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে আগে সালাম দেয় সে অহংকারমুক্ত।’ সালাম একটি দোয়া ও ইবাদত। সালাম দেওয়া সুন্নত, উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। নবীজি বলেন, ‘যে ব্যক্তি সালাম দিতে কার্পণ্য করে সে কৃপণ বলে গণ্য হবে।’ আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কারও ঘরে প্রবেশ কোর না যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং ঘরবাসীকে সালাম দেবে, এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।’ সুরা নুর আয়াত ২৭। আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘তোমরা যখন কোনো ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা নিজেদের ওপর সালাম করবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতপূর্ণ ও পবিত্র অভিবাদন-স্বরূপ।’ সুরা নুর আয়াত ৬১। আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন তোমাদের সালাম দেওয়া হবে তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে, অথবা জবাবে তা-ই দেবে।’ সুরা নিসা আয়াত ৮৬। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো উত্তম আমল কী? তিনি বললেন, ‘মানুষকে খাবার খাওয়ানো এবং তুমি যাকে চেন আর যাকে চেন না সবাইকে সালাম দেওয়া।