নিজের আধিপত্য বিস্তারে সরোয়ারের প্রেসক্রিপশনে মাঠ ছাড়া হচ্ছে বিএনপি
নেতাদের বিভাজন ও স্বেচ্চাচারিতার কারনে সান্টুসহ বিভিন্ন এলাকায় নেতাদের চলছে গণপদত্যাগ
দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও সুসংহত করতে বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির গঠনের পরে যতই দিন অতিবাহিত হচ্ছে ততই বিএনপির কর্মী সমর্থকদের জন্য বুমেরাং হচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতারা। একে একে বেড়িয়ে আসছে তাদের বানিজ্যিক ও নিজস্ব আধিপত্য বিস্তারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। নেতারা একে অপরের বিরাগ ভাজন হয়ে পরস্পর পরস্পরের প্রতিদ্বন্দি হয়ে নিজেদের আধিপাত্য ও সাম্রাজ্য বিস্তারের উপেক্ষিত হচ্ছে সাধারণ নেতা কর্মীরা। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পরার পাশাপাশি বিএনপি’র শত্রু হিসেবে দাড়িয়েছে বিএনপি নিজেই। দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজী ও একে অপরকে দোষারোপের কারনে ক্রমেই সাংগঠনিকভাবে দূর্বল হয়ে পরেছে বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপি।
পছন্দমতো পদ দেয়ার লোভ দেখিয়ে দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজী, উপঢৌকন নেয়া ও একে অপরকে দোষারোপের কারণে ক্রমেই সাংগঠনিকভাবে দূর্বল হয়ে পরেছে বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপি। আবার অর্থের বিনিময়ে উপজেলা বিএনপির কার্যালয় থাকতেও নতুন কার্যালয় উদ্ভোধন করে গ্রুপিং করার নজির সৃষ্টি করছেন নেতারা।
বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির আহবায়ক এ্যাড. মুজিবুর রহমান নান্টুর বিরুদ্ধে সেচ্ছাচারিতার, খামখেয়ালিপনা ও অসাংগঠনিক কর্মকান্ডের অভিযোগে গত ৭ জুলাই আহবায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে ¯ে^চ্ছায় পদত্যাগ করেছেন বিএনপি নেতা এস. সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু, শাহ আলম মিঞা, মোঃ আহসান কবির নান্না হ্ওালাদার, মোঃ রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ, গোলাম মাহমুদ মাহাবুব মাষ্টার, মোঃ আব্দুস সালাম ও ডেইজি বেগম। পদত্যাগের বিষয়টি বিএনপির মহাসচিবসহ সাংগঠনিক নেতাদের কাছে প্রেরণ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ মৃধা।
এক সময়ের ডাক সাইটে নেতা সরোয়ার জেলা কমিটি থেকে বাদ পরায় তার নতুন প্রেসক্রিপশন ও কুট কৌশলে বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির বিতর্কিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহিন, আহবায়ক এ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান নান্টু ও সদস্য সচিব আকতার হোসেন মেহবুল নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারনে দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পরেছে। সরোয়ার ছাড়া বিএনপি অচল এমনটাই প্রমাণের জন্য দলের কমিটির আহŸায়ক বা সদস্য সচিব এমন একজনকে নিস্কৃয় করে রেখে কোন কার্যক্রম যেন সফলতার আলো না দেখে তার ব্যবস্থায় মরিয়া সরোয়ার।
বিএনপির দূর্গ খ্যাত বরিশালে বিএনপির ত্যাগী ও পরীক্ষিত কর্মীবান্ধব নেতা আলহাজ্ব এবায়েদুল হক চাঁনকে সভাপতি ও শাহীনকে সাধারণ সম্পাদক করে বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এই কমিটিকে ব্যর্থ প্রমান করতে জেলা দক্ষিণ বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে না পারে সে জন্য শাহীনকে বাগিয়ে নেয় সরোয়ার। সরোয়ারের প্রেসক্রিপশন শাহীন অনুসরণ করায় এবায়েদুল হক চাঁনের একার পক্ষে কোন ভাবেই কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
কেন্দ্রীয় নেতারা বরিশালে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের কোনো সভা সমাবেশ করতে পারতেন না শাহীনের প্রতিবন্ধকতার কারণে। এর নেপথ্যে হীন রাজনীতি করতেন মজিবর রহমান সরোয়ার। দলের এই ভঙ্গুর দশা থেকে উত্তরনে ও দলকে ঢেলে সাজাতে পদক্ষেপ নেয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সরোয়ারকে মাইনাস করে বরিশাল জেলা দক্ষিণ এবং মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন দলের হাইকমান্ড। এতে হাইকমান্ডের উপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয় সরোয়ার।
বিএনপির দুর্গ খ্যাত বরিশালে বিএনপির ত্যাগী, নির্যাতিত ও পরীক্ষিত নেতা আলহাজ্ব এবায়েদুল হক চাঁনকে সভাপতি ও শাহীনকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১৪ সালে বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। ঘরবন্দী থাকা দলের নেতাকর্মীরা তারেক রহমানের দেয়া নতুন আহবায়ক কমিটিকে সাধুবাদ জানিয়ে স্বতস্ফুর্তভাবে রাজপথে নেমে পরে।
এই কমিটি ২০২১ সাল পর্যন্ত বলবত থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে না পারে সে জন্য শাহীনকে কৌশলে বাগিয়ে নেয় সরোয়ার। একক আধিপত্য হাত ছাড়া হওয়ায় কোনো ভাবেই মেনে নিতে না পারায় বরিশাল জেলা দক্ষিণ ও মহানগর বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটি কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্ত করতে সরোয়ারের শুরু করেন নানা ক‚টকৌশলের অপতৎপরতা।
সরোয়ারের প্রেসক্রিপশন শাহীন অনুসরণ করায় এবায়েদুল হক চাঁনের একার পক্ষে কোনভাবেই কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কেন্দ্রীয় নেতারা বরিশালে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের কোনো সভা সমাবেশ করতে পারতেন না শাহীনের প্রতিবন্ধকতার কারণে। এর নেপথ্যে হীন রাজনীতি করতেন মজিবর রহমান সরোয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে সরোয়ারের অনুসারী বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বিতর্কিত সাধারণ সম্পাদক মাদক ব্যবসায়ী কথিত সর্বহারা নেতা অহিদুল ইসলাম প্রিন্সসহ সকল নেতাকর্মীরা এখন নতুন করে তরী ভিড়িয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনের দরবারে। এমনকি শিরিনের দ্বারস্থ হচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার নিজেও। শিরিন ও সরোয়ারসহ অন্যান্য নেতাদের মধ্যস্ততাকারী হিসেবে ভুমিকা পালন করছেন শিরিনের সহচর ছাত্রদলের নেতা মাসুম।
গত ৪ জুলাই জেলার বিতর্কিত নেতারা বানারীপাড়া গিয়ে বর্তমান কমিটির সাথে সুবিধাবাদী লোক দিয়ে গ্রæপিংয়ের চেষ্টার টের পেয়ে সেখান থেকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাদের প্রত্যাখ্যান করে বিতারিত করলে রাগে ক্ষোভে সেখানকার পৌর বিএনপির কমিটি ভেঙে দেয়। একইভাবে ৫ জুলাই উজিরপুরে প্রোগ্রামে ব্যার্থ হয়ে উজিরপুর পৌর বিএনপির কমিটিও ভেঙে দেন আহবায়ক মুজিবুর রহমান নান্টু ও সদস্য সচিব আকতার হোসেন মেহবুল।
উজিরপুর ও বানারীপাড়া পৌর বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা জানান, আহবায়ক কমিটি গঠন না করে উজিরপুর ও বানারীপাড়া পৌর বিএনপির কমিটি ভেঙে দেয়া নেতাদের হীন স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই নয়। অথচ বাকেরগঞ্জ পৌর বিএনপি কমিটির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে সেই কমিটি ভেঙে না দিয়ে আকষ্মিকভাবে বানারীপাড়া ও উজিরপুর পৌর কমিটি ভেঙে দিয়েছে। তারা বলেন, আটটি সাংগঠনিক সাব কমিটি গঠন করা হলেও তাদের তোয়াক্কা না করে আহবায়ক নান্টু, সদস্য সচিব মেহবুল ও আবুল কালাম শাহীন নিজেরাই সকল সিদ্ধান্ত দিয়ে আসছে। তারা আরও বলেন, সব কমিটি একত্রে আহবায়ক কমিটি গঠন করে দিবে। তা না করে স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের যারা আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী তাদের কাছে থেকে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নেয়ার জন্যই এভাবে সংগঠন পরিপন্থি কাজ করছেন বলে অভিযোগ করে আসছেন ওই এলাকার নেতা কর্মীরা।
তারা আরও বলেন, কমিটি ভাঙলে সব কমিটি একত্রে ভেঙে আহবায়ক কমিটি গঠন করে দিবে। তা না করে স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের যারা আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী তাদের কাছে থেকে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নেয়ার জন্যই এমনটা অভিযোগ করে আসছেন ওই এলাকার নেতা কর্মীরা।
দলীয় একাধিক সুত্র জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী কাউন্সিলে শাহীন সভাপতি ও মেহবুল সম্পাদক পদে প্রার্থী করে যে কোনো মূল্যে বিজয়ী করার সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে সরোয়ার তাদের মাঠে নামিয়ে বিতর্কিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহীনকে লেলিয়ে দিয়ে সদস্য সচিব আকতার হোসেন মেহবুলের সাথে জোট করেন।
এদিকে দলের নাম ভাঙিয়ে নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে আহবায়ক মজিবুর রহমান নান্টু ও সদস্য সচিব আকতার হোসেন মেহবুল এর বিরুদ্ধে। এই দুই নেতাকে আরও বিতর্কিত করতে নেপথ্যে কলকাঠী নাড়ছেন সরোয়ার অনুসারী শাহিন। এদিকে আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব হওয়ার পর পরই মেহবুলের দৈনন্দিন চলাফেরা ও গেটাপ পরিবর্তনের ছাপ রয়েছে সর্বত্র।
তৃণমূল কর্মীরা জানান, ঢাকা-বরিশাল লঞ্চের ডেকের যাত্রী মেহবুল এখন বিমানে যাতায়াত করেন। আগে নিজে মোটরসাইকেল ড্রাইভিং করলেও এখন রয়েছে তার ড্রাইভার। নেতাকর্মীদের প্রশ্ন কি পরিমাণ চাঁদাবাজি করলে রাতারাতি এমন পরিবর্তন হয়? উপঢৌকন নেয়া আইফোন হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ান তিনি। এক সময়ে আকতার হোসেন মেহবুল একটি ভাঙ্গা ফোন দেখিয়ে বলতেন আমাকে একটা নতুন ফোন কিনে দেয়ার ব্যবস্থা করা যায় ? কমিটি ঘোষণার কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই ভাঙ্গা ফোনের বদলে নতুন আই ফোন চলে আসে মেহবুলের হাতে। শুধু ফোন নিয়েই তৃপ্ত নন মেহবুল। মেহবুলের ঢাকা-বরিশাল বিমানের টিকিটসহ যাতায়াত খরচও বহন করতে হয় এক নেতাকে।
গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়ার কথা বলে বরিশাল জেলা দক্ষিন বিএনপির যতো সাংগঠনিক প্রোগ্রাম সম্পন্ন করার সিংহভাগ খরচই বহন করতে হয় তাকে। এভাবে কিছু সংখ্যক নেতাকে পদ পদবী দেয়ার আশ্বাস দিয়ে মেহবুল বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিলেও ভুক্তোভোগীরা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। বাকেরগঞ্জের মনির নামে এক বিএনপি নেতা বলেন, প্রতিটি প্রোগ্রামে চাঁদা কালেকশনের ৫০ হাজার টাকা তিনি একাই তুলে দেন। আহবায়ক নান্টু ও সদস্য সচিব মেহবুল তাকে এই টাকা উত্তোলনের দ্বায়িত্ব দেন বলে জানান লেখক মনির।
এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীর পদত্যাগের বিষয়ে তাকে কেউ কিছু জানায়নি। বিষয়টি সম্পর্কে ভাল বলতে পারবে বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
কেন্দ্রীয় বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন জানান, এটা সাংগঠনিক বিষয়। সাংগঠনিকভাবেই সমাধান করা হবে। এছাড়া অন্য কোন বিষয়ে স্বাক্ষাৎকার দিতে রাজি নয় তিনি।
বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক এ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান নান্টু বলেন, নেতাকর্মীদের পদত্যাগের কোন কাগজপত্র তিনি হাতে পাননি। তারেক রহমান এবং বিএনপির গঠণতন্ত্রের আলোকে সকল কার্যক্রম চলছে এবং দলীয়ভাবে চলবে। এখানে কারো মনগড়া কার্যক্রম করার সুযোগ নেই। প্রতিটি প্রোগ্রামে চাঁদা কালেকশনের বিষয়টি সত্য নয় জানিয়ে এমন কথা এই প্রথম শুনলেন বলে জানান তিনি। সরোয়ার ছাড়া বিএনপি অচল, এমনটাই প্রমাণ করতে চায় অধিকাংশ নেতা কর্মী। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে এটা সঠিক নয়। দুই এক জন সদস্য আছে তারা তাদের নিজের মত মতামত ব্যক্ত করতেছে। সঠিক হলঃ তারেক রহমান এবং বিএনপির গঠণতন্ত্রের নিয়মেই চলছে সংগঠনের সকল কার্যক্রম।
বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট আকতার হোসেন মেহবুল বলেন, নেতা-কর্মীর পদত্যাগের কোন কাগজপত্র সাংগঠনিকভাবে তিনি হাতে পাননি। লোকমুখে শুনেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখোর সত্যতা স্বীকার করেছেন।