‘পাকিস্তানের পতাকা হাতে নির্বাচনি প্রচারণায় রাজাকারপুত্র। নেত্রী রাজাকারের নাতিপুতি কাদের বলেছিল বুঝতে পেরেছেন?’ শীর্ষক ক্যাপশনে মীর আহমদ বিন কাসেমের (ব্যারিস্টার আরমান) একটি ছবি প্রচার করা হচ্ছে। ছবিটিতে ব্যারিস্টার আরমানের হাতে পাকিস্তানের পতাকা দেখা যায়। এদিকে পাকিস্তানের পতাকা হাতে সাদিক কায়েমের ছবিযুক্ত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাচনি প্রচারণায় ঢাকা-১৪ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ব্যারিস্টার আরমানের হাতে পাকিস্তানের পতাকা থাকার ছবিটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশের পতাকা হাতে থাকা তার প্রচারণার একটি ছবিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের মাধ্যমে সম্পাদনা করে পাকিস্তানের পতাকা ধরানো হয়েছে।
অনুসন্ধানে bdtoday.net নামক সংবাদ ভিত্তিক একটি ওয়েবসাইটে গত ২১ নভেম্বর ‘ঢাকা–১৪ আসনে আরমানের সমর্থনে গণমিছিল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড, ব্যারিস্টার আরমানের পোশাক, ব্যানার ও পেছনের মানুষের সাথে আলোচিত ছবিটির মিল রয়েছে।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২১ নভেম্বর সকালে ঢাকা-১৪ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ব্যারিস্টার আরমানের সমর্থনে নির্বাচনি গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত গণমিছিলের ছবি এটি।
উক্ত সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ইত্তেফাকের ফেসবুক পেজে গত ২১ নভেম্বরই ব্যারিস্টার আরমানের নির্বাচনি গণমিছিলের একটি লাইভ পাওয়া যায়। ইত্তেফাকের ০৯ মিনিট ১২ সেকেন্ডের পুরো লাইভটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, গণমিছিলে পাকিস্তানের পতাকা হাতে নয় বরং, তিনি বাংলাদেশ ও জামায়াতে ইসলামীর পতাকা হাতে তিনি মিছিল করেন।
বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যাচাইকারী ওয়েবসাইট ইমেজ হুইসপারারে পরীক্ষা করা হলে দেখা যায়, ছবিটি এআই ব্যবহার করে সম্পাদিত। পাকিস্তানের পতাকার অংশটিই পরিবর্তিত করা হয়েছে বলে ওয়েবসাইটটির বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, প্রচারিত ছবিটি এআই দিয়ে সম্পাদিত। সুতরাং, পাকিস্তানের পতাকা হাতে ব্যারিস্টার আরমানের আলোচিত ছবিটি সম্পাদিত।
এদিকে পাকিস্তানের পতাকা হাতে সাদিক কায়েমের ছবিযুক্ত একটি ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত পাকিস্তানের পতাকা হাতে ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েমের ছবিটি আসল নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২৬ নভেম্বর নিজ এলাকায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হাতে শো ডাউনের ছবিকে সম্পাদনার মাধ্যমে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে, সাদিক কায়েমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ২৬ নভেম্বর ‘আগামী দিন শুধু সম্ভাবনার’ প্রকাশিত পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টে সংযুক্ত প্রথম ছবিটির সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবির মিল রয়েছে। তবে মূল ছবিতে সাদিক কায়েমের হাতে বাংলাদেশের পতাকা ছিল, যা সম্পাদনা করে পাকিস্তানের পতাকা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
আরও অনুসন্ধানে দৈনিক ইত্তেফাকের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত একটি ভিডিওর ক্যাপশন থেকে জানা যায়, সেদিন খাগড়াছড়িতে নিজ এলাকায় জাতীয় পতাকা হাতে শোডাউন করেন সাদিক কায়েম।
গত ২৬ নভেম্বরে ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম বুধবার (২৬ নভেম্বর) প্রথমবারের মতো নিজ জেলা খাগড়াছড়িতে আসেন। বিকালে তার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সে তাকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে, এ সংক্রান্ত দাবিটির সূত্রপাত অনুসন্ধানে Anwar Tv নামের একটি ফেসবুক পেজে ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত এ সংক্রান্ত মূল ফটোকার্ডটির সন্ধান মেলে। তবে পোস্টে এ বিষয়ে কোনো সূত্র বা প্রমাণ উল্লেখ পাওয়া যায়নি। ‘Anwar Tv’ পেজটি পর্যবেক্ষণ করলে পেজের বায়োতে উল্লেখ পাওয়া যায়, ‘পেজটি শুধুমাত্র বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে দয়া করে কোনো পোস্ট সিরিয়াসলি নিবেন না, আমরা সবসময় সমসাময়িক নিউজগুলোকে সারকাজম আকারে প্রকাশ করি’ এছাড়াও, পেজটি পর্যবেক্ষণ করলে এরূপ আরও অনেক ব্যাঙ্গাত্মক/ভিত্তিহীন পোস্ট পাওয়া যায়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আলোচিত পোস্টটিও মূলত ব্যাঙ্গাত্মক/ভিত্তিহীন কনটেন্ট হিসেবেই তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, পাকিস্তানের পতাকা হাতে ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েমের ছবিটি সম্পাদিত।