শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০১:০৭ অপরাহ্ন

ই-পেপার

কেমন আছে পয়লা গ্রামের মানুষ ; এইচ.মোরশেদ (রতন)

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: সোমবার, ৬ জুলাই, ২০২০, ১২:৫৮ অপরাহ্ণ

সিরাজগঞ্জ জেলাধীন চৌহালী উপজেলার ৪ নং উমারপুর ইউনিয়নের পয়লা গ্রাম। চৌহালী উপজেলার মধ্যে একটি আদর্শ গ্রাম হিসেবে খ্যাত এই পয়লা গ্রামটি ৮০’র দশকে ছিল জমজমাট । ৯০’র দশকে ব্যাপক ভাঙ্গনের ফলে অধিকাংশ লোকই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। কিছু লোক যমুনার পূর্ব পাড়ে বিভিন্ন গ্রামে জায়গা কিনে বা কট খাজনা করে পুনরায় বসতি স্থাপন করে । ইউনিয়ন পরিষদ (ভোট ঘর), ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, পয়লা সপ্রাবি, পয়লা উচ্চ বিদ্যালয়, বাকুলিয়া সপ্রাবি, পাকুটিয়া বেসপ্রাবি সহ হাট- বাজার ভেঙ্গে যায়। প্রতিষ্ঠানগুলো ৭ নং বাঘুটিয়া ইউনিয়ন এর চৌবাড়িয়া মৌজায় ৯৩/৯৪ সালে পুনরায় জমি কট কবলা, খাজনা নিয়ে স্থাপন করা হয়। নতুনভাবে কিছু প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা হয় যেমন- পয়লা দাখিল মাদ্রাসা, চৌবাড়িয়া বিএম কারিগরি কলেজ, চৌবাড়িয়া পশ্চিম পাড়া রেজিঃ বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ আরো কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়।

 

২০১৩-২০১৫ সালের মধ্যে ঐ এলাকাও নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে এবং সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে পয়লা দাখিল মাদ্রাসা, পয়লা সপ্রাবি,পয়লা উচ্চ বিদ্যালয়, চৌবাড়িয়া বিএম কারিগরি কলেজ, চৌবাড়িয়া পশ্চিম পাড়া রেজিঃ বেসপ্রাবি, পয়লা মোল্যা পাড়া মদিনা জামে মসজিদ, চৌবাড়িয়া শিকদার পাড়া জামে মসজিদ, চরসলিমাবাদ দক্ষিণ পাড়া মরহুম ময়নাল হক সরকার প্রতিষ্ঠিত কবরস্থানের আশেপাশে পুনঃস্থাপন করা হয়। বর্তমানে আবারও ভাঙ্গনের শিকার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা বিরাজ করছে। অর্থাৎ চৌহালী উপজেলার দক্ষিণের সর্বশেষ সীমানাও ভাঙ্গনের কবলে। আমি যা স্পষ্ট করতে চাচ্ছি তা হলো পয়লা গ্রামের মানুষ/ভোটার হয়েও অবস্থান টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর এর কাছে। ভোট কেন্দ্রও পয়লা দাখিল মাদ্রাসা (মেইন ল্যান্ড)।

 

উল্লেখ্য, যতবার নদীতে বসতবাড়ি ভেঙ্গেছে ততবারই কিছু কিছু লোক এলাকা ছেড়ে অন্য উপজেলা, জেলা বা বিভাগে চলে গেছে। পাশাপাশি এলাকায়, অন্যের বাড়িতে আশ্রয়, বাসা বাড়ি ভাড়া করে, রাস্তা/ বাধের উপর অথবা পার্শবর্তী উপজেলা় নাগরপুর, দৌলতপুরে আশ্রয় গ্রহন করেছে।

 

প্রিয় পাঠক, বলছিলাম পয়লা গ্রামের কথা। পয়লা গ্রামের যারা অন্যত্র যেতে পারেনি তারা পয়লা গ্রামের চরের মধ্যে (পয়লা মৌজা, যেখানে ভোট ঘর ছিল) অবস্থান করছে। অর্থাৎ পয়লা চরে বর্তমান একটি মসজিদ ও পয়লা কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। প্রতিবছরই চরে একপাশ ভাঙ্গে আরেকপাশ গড়ে। এছাড়াও বন্যার পানিতে হাবুডুবু খেতে হয় প্রতিবছর।

 

গরীব, অতিগরীব পরিবারের এই দুঃখ কষ্ট দেখার মত কেউ আছে বলে খুব একটা প্রতীয়মান হয়না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ওয়ার্ড মেম্বর সলিমাবাদ বসবাস করায় এবং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এর বিরাগভাজন হওয়ায় এই ওয়ার্ডের দুঃস্থ অসহায় লোকগুলো বরাবরই অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। অত্র ওয়ার্ডের দুই/চার জন লোক পয়লা চরে বসবাস না করেও পয়লা চরের গরীবের সরকারি অনুদান, প্রকল্পগুলো হতে লাভবান হচ্ছে ।

 

যাহোক, এবছর USAID (৯০%) ও বাংলাদেশ সরকারের (১০%) অর্থায়নে কেয়ার বাংলাদেশ’র কারিগরি সহযোগিতায় এনডিপি- সৌহার্দ্য III কর্মসূচি’র মাধ্যমে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বন্যা সহনশীল ২০টি বসতভিটা উঁচু করা হয়েছে। ফলে ঐ গ্রামের অন্য নিচু বাড়ির মানুষগুলোও তাদের গবাদি পশু-পাখি নিয়ে উঁচু বাড়িগুলোতে আশ্রয় নিতে পারছে। অন্যদিকে উঁচু বাড়িগুলোতে বর্ষাকালীন শাক-সবজি উৎপাদন, হাঁস – মুরগি, গরু-ছাগল পালন করতে পারছে। যে কারনে উক্ত চরে বসবাসকারী দরিদ্র জনগোষ্ঠী বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও ভালভাবে বসবাস করার সুযোগ পেয়েছে।

 

অত্র চৌহালী- বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ-৫) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আব্দুল মমিন মন্ডল সাহেবের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চর রক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারলে লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমি যেমন চাষাবাদের আওতায় আসত তেমনি পূর্ব পাড়ের ভেঙ্গে যাওয়া জনগোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানগুলোও খুঁজে পেত তাদের স্থায়ী ঠিকানা। বর্তমান বৈশ্বিক মহামারী কোভিট-১৯ করোনা ভাইরাস ও বন্যার কারনে শ্রমজীবি মানুষের কর্মহীন হয়ে নিথর বসে থাকার চেয়ে এলাকায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহের পথও সুগম হতো।

চর এলাকাকে প্রাণিসম্পদ ও কৃষি সম্পদে সমৃদ্ধ করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। তাই আসুন, সরকারি ও বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সারা চর এলাকাকে সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তুলি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর