পাবনার ফরিদপুরে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে অনৈতিক কার্যকলাপ ও ভবনের মূল নকশার ওয়াল ভেঙ্গে জানালা নির্মাণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় গত (২২ জুন) বুধবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক বরাবর উপজেলাবাসীর পক্ষে হাফিজ সরকার নামের এক ব্যক্তি একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ফরিদপুর উপজেলার তেঁতুল তলায় নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলাটি বে-সরকারি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের নিকট ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ক্লিনিকের সুবিধার জন্য ভবনের মূল দেয়াল ভেঙ্গে নতুন করে জানালা নির্মাণ করা হচ্ছে। যা ভাড়া দেওয়া চুক্তিপত্র বর্হিভুত কাজ এবং মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের নীতিমালার পরিপস্থি। কমপ্লেক্সটির প্রথম ফ্লোর ও দ্বিতীয় ফ্লোর ভাড়া দেওয়া হলেও ক্লিনিক মালিকগণ ভবনের তৃতীয় তলাও তাদের ইচ্ছেমত ব্যবহার করছেন। সেখানে অন্যান্য স্টাফদের সাথে মালিকপক্ষ রাত্রি যাপন করছে এবং অনৈতিক কার্যকলাপ চলছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। বিষয়গুলো ফরিদপুর নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এর প্রতিকার চেয়েছেন অভিযোগকারী। নীতিমালা অনুযায়ী ভবনের দোকানগুলো বীর মুক্তিযোদ্ধা কিংবা তার সন্তানদের ভাড়া দেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। ভাড়া দেওয়া হয়েছে একটি বে-সরকারি ক্লিনিককে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে কমপ্লেক্স ভবনটি উদ্বোধন করা হয়। সরেজমিন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, চুক্তি মোতাবেক “আল-মদিনা ল্যাব এন্ড হসপিটাল” কর্তৃপক্ষ মাসিক ৩০হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ভাড়ার চুক্তিপত্র অনুয়ায়ী মূল ভবনের নকশা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই বলে জানা গেছে। অথচ দ্বিতীয় তলার পশ্চিম পাশের তিনটি কক্ষের দেয়ালের ইট খুলে ফেলা হয়েছে। তৃতীয় তলায় ক্লিনিকের মালিক ও নার্সদের বসবাসের জন্য আবাসিক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের অর্নার বোডটিও ময়লাযুক্ত অবস্থায় এক পাশে পড়ে আছে। ফ্লোরের উত্তর পাশে ব্যবহারিত বিভিন্ন ঔষধের কভার ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে রিতিমত ভাগারে পরিণত হয়েছে। যেখানে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বসে সভা সেমিনার করার কথা। কিন্তু সেই স্থানে এমন অবস্থা দেখে যে কোন সচেতন মানুষের মনে জন্মাবে হতাশা ও ক্ষোভ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের নিচতলার কক্ষগুলো দোকান হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের মধ্যে ভাড়া দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। কমপ্লেক্সটি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের নিকট ভাড়া দেয়ায় ভবনের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। তাই অবিলম্ভে ক্লিনিকটি সড়িয়ে নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
স্থানীয়রা জানায়, যাদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, সেই কমপ্লেক্সে বসতে পাড়েন না মুক্তিযোদ্ধারা। অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে ভবনের বিভিন্ন আসবাবপত্র। জাতির পিতার প্রতিকৃতিটিতেও ধূলা জমে থাকে।
মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের তৃতীয়তলা ব্যবহারের কথা স্বীকার করে ক্লিনিক মালিক রওশন আলী বলেন, মূল ভবনের নকশা পরিবর্তনের তাদের এখতিয়ার নেই। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের নির্দেশে দেয়ালের ইট খুলে তিনটি জানালা লাগানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (সাবেক) মুনজুর মোরশেদ সেলিম বলেন, ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ-আলোচনা করেই ক্লিনিক মালিকের সুবিধার্থে কাজটি করা হয়েছে। তবে তৃতীয় তলা তাদের ভাড়া দেয়া হয়নি বলে তিনি জানান।
উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন গোলাপ এর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি জানতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ জেসমীন আরার অফিস কক্ষে গিয়ে তাকে না পেয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
#CBALO / আপন ইসলাম