বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এটিকে ঘিরে আনন্দণ্ডউচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা দেশবাসী। পদ্মা সেতু শুধু একটি স্থাপনা নয়, এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বাঙালির আবেগ ও অনুভূতিময় ভালোবাসা। নিজের টাকায় নির্মিত পদ্মা সেতু আমাদের অহংকারের মাত্রাকে পৌঁছে দিয়েছে অন্য এক উচ্চতায়। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পদ্মা সেতুকে হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাবে দলটি। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় পদ্মা সেতুকেই দলটির সফলতা হিসেবে তুলে ধরা হবে দেশবাসীর কাছে। ফলে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের সেতুটি আগামী নির্বাচনে হতে পারে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক।
বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রায় ৭৬টি সংসদীয় আসনের মানুষের সঙ্গে সেতুবন্ধন এই পদ্মা সেতু। জেলাগুলোর আসনের মধ্যে রয়েছে হচ্ছে- খুলনা বিভাগের খুলনা-৬, বাগেরহাট-৪, যশোর-৬, সাতক্ষীরা-৪, নড়াইল-২, কুষ্টিয়া-৪, মেহেরপুর-২, চুয়াডাঙ্গা-২, ঝিনাইদহ-৪ ও মাগুরা-২। বরিশাল বিভাগের বরিশাল-৬, পিরোজপুর-৩, ভোলা-৪, পটুয়াখালী-৪, বরগুনা-২ ও ঝালকাঠি-২। ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ-৩, ফরিদপুর-৪, মাদারীপুর-৩০, শরীয়তপুর-৩ ও রাজবাড়ী-২। আসনগুলোর মানুষ পদ্মাসেতুর সরাসরি সুবিধা পাবে। সরকারের এ উন্নয়নের প্রতিদান হিসেবে অত্র অঞ্চলের জনগণ আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিবে বলে মনে করেন দলের শীর্ষ নেতারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে পদ্মা সেতু। এই সেতু ঘিরেই সোনালি ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছেন এই অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চল ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরো মনোযোগ কাড়বে; গড়ে উঠবে এসব জেলায় নতুন নতুন শিল্প কারখানা। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় এরই মধ্যে শিল্পায়নের কাজ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মোংলা বন্দরে পদ্মা সেতুর সুফল এখনই পাওয়া যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি এরই মধ্যে চালু হয়ে গেছে। গার্মেন্টসহ রপ্তানিমুখী নানা ধরনের শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে। এর সুবিধা পাওয়া এই এলাকার মানুষ বর্তমান সরকারের পক্ষে আগামী নির্বাচনে ভোটের রায় দিবে। এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে। এতে করে দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করবে এই সেতুটি। রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে বিচক্ষণ ও দূরদর্শিতা রয়েছে- পদ্মা সেতু তারই বহির্প্রকাশ।’
তিনি বলেন, ‘এ সেতুর মাধ্যমে দেশের মানুষের বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে। বহু মানুষের ভাগ্যের চাকাও ঘুরবে এর মাধ্যমে। এই সেতু দৃশ্যমানের ফলে বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পারে অসম্ভবকে সম্ভব করতে। আগামী নির্বাচনে নিশ্চয় বাংলার জনগণ এর পুরস্কার নেত্রী শেখ হাসিনাকে দিবে।’
এদিকে খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু নির্মাণের পর পায়রা বন্দরের গুরুত্বও বাড়বে। প্রয়োজনীয় আধুনিকায়ন করা হলে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে এই বন্দরও এক বৃহত্তম বন্দরে রূপান্তরিত হবে। এমনকি ভুটান, পূর্ব নেপাল ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব প্রদেশের জন্য পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় মূল হাতিয়ার হবে পদ্মা সেতু। পাশাপশি এ সরকারের বিগত ১৩ বছরের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে। এজন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। পদ্মা সেতুর উন্নয়ন নিয়ে প্রচার-প্রচারণায় কমতি রাখবে না আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে জনগণের এসব সুবিধার কথা তুলে ধরছে দলটি। সারা দেশে বিশেষ করে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে, জনবহুল এলাকায়, বাস-লঞ্চ স্টেশনের মতো স্থানে পদ্মা সেতুর উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হবে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চালানো হবে প্রচারণা। পদ্মা সেতু নিয়ে সব গুজব ঠেকিয়ে এর সুবিধা সারা দেশে একযোগে প্রচারের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলের উপসম্পাদক প্রচার ও প্রকাশনা আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ‘আগামী ২১ জুন এ বিষয়ে একটি সেমিনার করা হবে। বাংলাদেশে পদ্মা সেতুর প্রভাব তুলে ধরা হবে সেমিনারে। পদ্মা সেতুর মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন এনে দিতে পারে; তা আমরা সারা দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে তুলে ধরা হবে।’
আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর কাঁঠালবাড়িতে অনুষ্ঠেয় জনসভায় ১০ লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতি প্রত্যাশা করছে আওয়ামী লীগ। জানতে চাইলে মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আগামী ২৫ জুন আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু নিয়ে দেশের মানুষের স্বপ্নের কোনো শেষ নেই। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনকে ঘিরে সারা দেশে মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ব্যাপক। এটি কীভাবে উদযাপিত হবে সেটি নিয়ে আমরা আজকের বৈঠকে প্রাথমিক পরিকল্পনা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর আমাদের জনসভা হওয়ার কথা রয়েছে। সেটি বেলা ১১টায় শুরু হবে পদ্মার পাড়ে কাঁঠালবাড়ি ফেরি ঘাটে। আমরা এই জনসভা সফল করতে চাই। এই জনসভাকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলা ও ঢাকার আশপাশের মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি হবে। এই জনসভা সফল করতে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করছি, পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আমাদের নেত্রীর যে জনসভাটি হবে, সেখানে লাখো মানুষের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে একটি বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হবে। এই জনসমুদ্র হবে উৎসবের জনসমুদ্র।’
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে খুবই জমকালো। মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ৬৪টি জেলাতেও দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে।
#CBALO / আপন ইসলাম