সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৮ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

করোনা মহামারিতেও রেমিট্যান্স রিজার্ভে রেকর্ড

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: শনিবার, ৪ জুলাই, ২০২০, ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনাভাইরাস মহামারির চলমান সংকটের মধ্যে আবার সুখবর দিল প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। একক মাস ও এক অর্থবছরে রেমিট্যান্সে যেমন রেকর্ড হয়েছে, তেমনই এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবার নতুন মাইলফলক অতিক্রম করলো রিজার্ভ। এবার রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ৩৬ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের মাইলফলক। আর একক মাস জুনে রেকর্ড ১৮৩ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩৯ শতাশ এবং আগের মাসের চেয়ে প্রায় ২২ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে একক মাসে এর আগে কখনো এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। সবমিলে সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। এক অর্থবছরে এটিও বাংলাদেশের ইতিহাসে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনাসহ সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান হিসেবেও বেশ কিছু পরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে রিজার্ভ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। গত বছরের ১ জুলাই থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। জানা যায়, প্রণোদনা দেওয়ার ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরু থেকে প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স বাড়তে থাকে এবং ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। তবে চীনের উহান প্রদেশ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনার প্রভাবে ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে রেমিট্যান্সের গতি নিম্নমুখি হয়ে পড়ে। তবে ঈদের মাস মে থেকে আবার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরে রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৪৫ কোটি ২২ লাখ ডলার। এর পরের মাস মার্চে তা কমে দাঁড়ায় ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার। আর এপ্রিলে তার আরো কমে নেমে আসে ১০৯ কোটি ২৬ লাখ ডলারে।

 

সবমিলে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। এতে করে অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ব্যাপকহারে কমে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছিল। তবে ঈদের মাস মনে থেকে রেমিট্যান্সে আশানুরূপ গতি ফেরায় অর্থবছর শেষে প্রায় ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রেকর্ড ১৮৩ কোটি ২০ লাখ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। সেখানে আগের অর্থবছরের জুন মাসে এসেছিল ১৩৭ কোটি ডলার। আর গত মে মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৫০ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। সবমিলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেকর্ড ১ হাজার ৮২০ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এটি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি ছিল। এর আগে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১৬ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রমের রেকর্ড ছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছিলেন। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি ছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৪৯৮ কোটি ১৬ লাখ ডলার। রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল।

 

এবারের বাজেটেও প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর ফলে আগামীতে রেমিট্যান্সে আরো গতি ফেরার আশা করা হচ্ছে। এদিকে, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের উপর ভর করে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবার রেমিট্যান্সে রেকর্ড হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রথমবার রিজার্ভ ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। দিনশেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০১ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। এর আগে গত সপ্তাহেই বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবার ৩৫ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে। তার তিন সপ্তাহ আগে রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থাকতে হয়। আমাদানি ব্যয়ের সম্প্রতিক গতিধারা বিবেচনায় নিলে এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর