ডারবানের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল হাসান জয় শূন্য রানে ফেরার পর খেলার হাল ধরেন তামিম ইকবাল-নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরু থেকে তামিম দারুণ সব শটে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে চাপ কমানোর চেষ্টা করেন। অন্য প্রান্তে থাকা শান্তও দারুণভাবে সঙ্গ দেন তামিমকে। দুজনের যুগলবন্দী লড়াইয়ে টাইগাররা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
দক্ষিণ আফ্রিকা : ৪৫৩/১০ (১৩৬.২ ওভার)
বাংলাদেশ : ৮৫/৩ (২৩ ওভার)
ইনিংসের প্রথম ওভারেই শূন্য রানে ফিরলেন মাহমুদুল হাসান জয়। অলিভিয়ের লেন্থ বলে পরাস্ত হন তিনি। পুশ করতে যেয়ে খোঁচা দিয়ে বসেন। প্রথম স্লিপে সহজে ক্যাচ ধরেন আরউই। প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করা জয় ২ বল খেলে ফেরেন খালি হাতেই। বাংলাদেশেরও ভালো শুরু হলো না। ক্রিজে তামিম ইকবালের সঙ্গী নাজমুল হোসেন শান্ত।
প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৫৩ রানে অলআউট হয়েছে। প্রথম দিন তিন সেশন ও আজ দ্বিতীয় দিন দেড় সেশন ব্যাটিং করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সর্বোচ্চ ৮৪ রান করেন কেশব মহারাজ। কম সময়ে তিনি দ্রুত রান নিয়েছেন। এ ছাড়া ৭০ রান করেন এলগার, ৬৪ রান করেন পিটারসেন। ভুগিয়েছেন লেজের ব্যাটসম্যানরাও।অষ্টম ও নবম উইকেটের জুটিতে দলটি যোগ করে ৭৩ রান। বাংলাদেশের হয়ে তাইজুল একাই নিয়েছেন ৬ উইকেট। এর মাধ্যমে তিনি টেস্ট ক্রিকেটে দেড়শ উইকেটের মাইলফলকে নাম লেখান। এ ছাড়া খালেদ আহমেদ ৩ ও মিরাজ নেন ১ উইকেট।
তাইজুলের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়েছেন সিমন হার্মার। অবশ্য অবদান কম নয় লিটন দাসের। দ্রুত স্ট্যাম্পিং করেছেন তিনি। ৫৯ বলে ২৯ রান করেন হার্মার। এই ইনিংসে তাইজুলের এটি ষষ্ঠ উইকেট। এর মাধ্যমে তিনি টেস্ট ক্রিকেটে দেড়শ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন।
ডারবানের মতো পোর্ট এলিজাবেথেও লেজের ব্যাটসম্যানরা ভোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। মহারাজ আউটের পর জুটি গড়েছেন সিমন হার্মার-উইলিয়ামস। দুজনে ইতিমধ্যে ৬৯ বলে ৩৫ রান যোগ করেন। ১৩৪ ওভারে দলীয় সংগ্রহ ৪৫০ রান পূর্ণ করেন দুজনে।
অবশেষে মহারাজকে থামালেন তাইজুল ইসলাম। ভেরিয়েন্নের আউটের পর ক্রিজে এসে দ্রুতগতিতে ব্যাটিং করতে থাকেন। মাত্র ৫০ বলে ফিফটির পর সেঞ্চুরির পথে। অবশেষে তাকে থামালেন শতকের আগেই। সুইপ করতে চেয়েছিলেন মহারাজ। কিন্তু বল ব্যাট ফাঁকি দিয়ে ভেঙে দেয় উইকেট। ৯৫ বলে ৯ চার ৩ ছয়ে ৮৪ রান করেন মহারাজ। তাকে ফিরিয়ে ৫ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব অর্জন করলেন তাইজুল।
লাঞ্চ থেকে ফেরার পর ইবাদতের বলে জীবন পান মহারাজ। ব্যাটে লেগে ওয়াইড স্লিপে ক্যাচ উঠেছিল, একটু ঝাঁপিয়ে চেষ্টাও করেছিলেন ইয়াসির আলী। তবে নাগালা না পাওয়ায় তালুবন্দি করতে পারেননি। চার হয়ে যায়। পরের বলেই আবার চার হাঁকান মহারাজ। এরপর এক বল ডট দিয়ে সিঙ্গেল নেন তিনি। ১১৮.৪ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা পৌঁছে যায় ৪০০ রানে।
বাংলাদেশ ২ উইকেট নিলেও প্রথম সেশনে রাজত্ব করেছে স্বাগতিক দল। মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে তারা ১০৬ রান করে দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে। আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান ভেরিয়েন্নে শুরুর দিকে ফিরলেও মুল্ডার ফেরেন শেষের দিকে। মুল্ডার-মহারাজ জুটি থেকে ১০০ বলে ৮০ রান আসে। ক্রিজে এসেই দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করে সফল হন মহারাজ। ফিফটি করে তিনি ক্রিজে আছেন। তার সঙ্গে আছেন সিমন হার্মার। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ৭ উইকেটে ৩৮৪। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রানও বাড়ছে তাদের।
মুল্ডারকে বোল্ড করে জুটি ভেঙেছেন তাইজুল ইসলাম। ৭৭ বলে ৩৩ রান করেন তিনি। ভেরিয়েন্নের সঙ্গে ০ রানে অপরাজিত থেকে দিন শুরু করেছিলেন। ভেরিয়েন্নে ফিরলেও মুল্ডার ছিলেন অবিচল। নতুন ব্যাটসম্যান কেশব মহারাজকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন এক প্রান্ত থেকে। মাত্র ১০০ বলে দুজনের জুটি থেকে আসে ৮০ রান। অবশেষে মুল্ডারকে আউট করে সেই জুটিকে আর এগোতে দেননি তাইজুল।
মিরাজকে লং অনে চার মেরে ৫০ বলে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান কেশব মহারাজ। ব্যাটিংয়ে এসে শুরু থেকেই তিনি দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় আছেন। তাতে সফল এই অলরাউন্ডার। দ্রুত তুলে নেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি। তার সঙ্গে ক্রিজে আছেন মুল্ডার। যদিও তিনি ধীরে ধীরে খেলার চেষ্টা করছেন। দুজনের ব্যাটে ভর করে বড় রানের দিকে ছুটছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
ভেরিয়ন্নে আউট হলেও সেটি টের পেতেই দেননি নতুন ব্যাটসম্যান কেশব মহারাজ। একশর বেশি স্ট্রাইকরেটে খেলছেন তিনি। ছয়-মেরে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দলীয় সংগ্রহ এক লাফেই নিয়ে যান সাড়ে তিনশতে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৩ চার ও ২ ছয়ে ৩৬ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন মহারাজ। তার সঙ্গে ৬৩ বলে ২৩ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন ভিয়ান মুল্ডার।
কাইল ভেরিয়েন্নেকে বোল্ড করে সাজঘরে পাঠালেন খালেদ আহমেদ। একটু আগেই উত্তেজনা ছড়িয়েছেল খালেদ-ভেরিয়েন্নের ব্যক্তিগত দ্বৈরথ। তাতে জিতলেন খালেদই। ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন ভেরিয়েন্নে, কিন্তু বল ব্যাট-প্যাড সব মিস করে ভেঙে দেয় উইকেট। গর্জে ওঠেন খালেদ। ৪৮ বলে ২২ রান আসে ভেরিয়েন্নের ব্যাট থেকে।
তিনশ থেকে ২২ রান দূরে থেকে দিন শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। কোনো ধরনের বিপদ ছাড়াই দলটি তিনশ স্পর্শ করে। ৯৬.২ ওভারে খালেদকে চার মেরে ভেরিয়েন্নে দলীয় স্কোর তিনশ পার করেন।
খালেদ আহমেদ-কাইল ভেরিয়েন্নের মধ্যে দ্বৈরথ। বল ডিফেন্স করে রান না নেওয়ার চেষ্টা করে দাঁড়িয়েছিলেন ভেরিয়েন্নে। তবুও বল ছুঁড়ে মারেন খালেদ। গ্লাভসে লাগে ভেরিয়েন্নের। একটু উত্তেজনা ছড়ায় তখন। খালেদ দুঃখ প্রকাশ করলেও ভেরিয়েন্নে মানতে নারাজ। ইয়াসির আলী এসে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এরপর আম্পায়ারকে দেখা যায় মুমিনুল হকের সঙ্গে কথা বলতে।
দিনের শুরুতেই ভুল!খালেদকে দিয়ে বাংলাদেশ শুরু কর। ভালোভাবেই শুরু করেন খালেদ। ওভারের শেষ বল পায়ে লাগে ভেরিয়েন্নের। হাঁটুর একটু উপরে লাগলেও বল লেগ স্ট্যাম্প মিস করে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। কিন্তু খালেদের সায় পেয়ে রিভিউ নেন মুমিনুল। কিন্তু বল বাইরে যাওয়াতে বাংলাদেশের পক্ষে আসেনি। গতকাল দিনের শুরুতে নিশ্চিত রিভিউ না নিয়ে ভুল করেছিল, আর আজ নিয়ে।
পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের দ্বিতীয় দিন শনিবার (৯ এপ্রিল) মাঠে নেমছে দক্ষিণ আফ্রিকা-বাংলাদেশ। হাতে ৫ উইকেট ও স্কোরবোর্ডে ২৭৮ রান নিয়ে দিন শুরু করেছে প্রোটিয়ারা। ভেরিয়েন্নে ১০ ও মুডলার ০ রানে শুরু করেন। বাংলাদেশের লক্ষ্য একটাই, স্বাগতিকদের দ্রুত অলআউট করে কম রানে আটকে দেওয়া।
#চলনবিলের আলো / আপন