মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:০৪ অপরাহ্ন

ই-পেপার

গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে মৌসুমী ফল কাঁঠাল

মোঃ মুন্না হুসাইন, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: রবিবার, ২০ মার্চ, ২০২২, ২:২৮ অপরাহ্ণ

গ্রীষ্ম মৌসুমের বেশ জনপ্রিয় একটি ফল হলো কাঁঠাল। সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, উপজেলার  সবকটি গ্রামে বিভিন্ন এলাকার গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে মিষ্টি রসালো জাতীয় ফল কাঁঠাল।

তবে স্থানীয় বাজার গুলোতে পুরোদমে কাঁঠাল না উঠলেও আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে কেনা-বেচার ঘুম পড়বে বলে জানিয়েছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা।

এ জেলার কাঁঠাল মিষ্টি-রসালো ও স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় বেশ চাহিদা ও জনপ্রিয়তা রয়েছে সারা দেশে। তাই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে এসব কাঁঠাল।

বর্তমান পরিস্থিতিতে নানা প্রতিক‚লতা উপেক্ষা করে স্থানীয় কৃষকরা পারিবারিক ও বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠালের চাষাবাদ করে অর্থনীতিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ফল বড় হতে না পারলেও এখন পর্যন্ত গাছে কাঁঠালের যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে ফলন ভাল হবে বলে মনে করছেন বাগান মালিকরা।

সরেজমিনে তাড়াশ উপজেলার,বিভিন্ন গ্রাম বা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে রাস্তার দুপাশ বাড়ির আঙ্গিনা জুড়ে ও ব্যক্তি মালিকা উদ্যোগে বাড়ির পাশে এবং বাণিজ্যিক উদ্দ্যেশ্যে পরিকল্পিতভাবে সৃজন করা হয়েছে জাতীয় ফল কাঁঠাল বাগান।

তাছাড়া বাড়তি আয়ের আশায় বাগানের ফাঁকে ফাঁকে লাগিয়েছেন আম ও লিচু সহ নানা রকমের ফলদ বাগান। গ্রামাঞ্চলের খালি জায়গা, রাস্তার পাশে ও বাড়ির আঙ্গিনায় রয়েছে অসংখ্য কাঁঠাল গাছ। প্রতিটি গাছের গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত শোভা পাচ্ছে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ জাতীয় ফল কাঁঠাল।

এক একটি গাছে ৩০-১৫০টির মতো কাঁঠাল ধরেছে। তাড়াশের কাঁঠাল বাগান গুলো যেন এক প্রকার প্রকৃতির রুপ দিয়ে সাঁজানো হয়েছে। যদিও এখনও পাঁকা কাঁঠাল বাজারে আসতে শুরু করেনি তারপরও এক মাস পরেই লোভনীয় কাঁঠাল ফলের গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠবে স্থানীয় হাট-বাজার গুলো।

ছোট বড় সব বয়সী মানুষই কাঁঠাল খেতে পছন্দ করে। পাঁকা খাওয়ার পাশাপাশি মানুষের কাছে এ ফল তরকারী হিসেবে যুগ যুগ ধরে কদর পেয়ে আসছে। কাঁঠালের বিচি (বীজ) প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং পুষ্টিকর। এর বিচি মাংস ও সবজির সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায়।

চিকিৎসকদের মতে, কাঁঠালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-ই, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড রয়েছে। টাটকা ফল পটাশিয়াম, ম্যাগনোশিয়াম এবং আয়রনের একটি ভাল উৎস। পাঁকা কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ আঁশ রয়েছে। ফলে পাঁকা কাঁঠাল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

তাড়াশ উপজেলার মহেশরৌ হালী এলাকার বাগান মালিক মো. শাবাজ জানান, বাড়ির সংলগ্ন খোলা জায়গায় তার প্রায় ৫০টি কাঁঠাল গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে ৫০- ১৫০টির কাঁঠাল এসেছে। গাছের কাঁঠাল যে পাঁকতে আরো প্রায় এক-দেড় মাস সময় লাগবে।

তবে অন্য বছরের চাইতে এবার গাছে অনেক কাঁঠাল কম এসেছে বৃষ্টির না হওয়ার কারণে।

তাড়াশ উপজেলার বিরল এলাকার রসুল দি জানান, গত বছরের তুলনায় এবার গাছে কাঁঠালের সাইজ একটু ছোট। তবে ফলন ভালো। কাঁঠালের মুচি আসার সময় আগাম গাছের ফল পাইকারদের কাছে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। তার সাথে কিছু টাকা মিলিয়ে কিনেছি একটি গাভি।

পংরৌহালীর জালাল জানান, বাড়ির আশপাশে ৫৫টি গাছ রয়েছে। গত বছরের চাইতে এবার কাঁঠাল তুলনামূলক কম আসলেও নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ভাল টাকা আয় হবে বলে আশা করছি। বর্তমানে বিক্রি করলে প্রায় ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারব পাইকারদের কাছে।

মহেশরৌহালীর মৌসুমী কাঁঠাল ব্যবসায়ী মো. রাশিদুল রহমান জানান, প্রতি বছরই বেশি লাভের আশায় অগ্রিম বাগান মালিক থেকে গাছে মুচি আসার পর পুরো বাগান কিনি। তাতে বেশ লাভ হয়। এবারও প্রায় ২০টিরও বেশি কাঁঠাল বাগান কিনেছি। আশা করছি ভালো ব্যবসা করতে পারব।

এছাড়াও কাঁঠাল বাগান পরিস্কার পরিচ্ছন ও পরিবহণ কাজে অসংখ্য লোক কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। পাশাপাশি বাগান মালিক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়জিত সকলেই এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

তাড়াশ উপজেলার কৃষি লুৎফুন্নাহার জানান, এ জেলায় প্রায় ২২০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের চাষাবাদ হয়। চাষের জন্যও বেশ উপযোগি। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় ফলন কিছুটা কম।

তবে এখানকার কাঁঠাল মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় কদর বেশি। এ ফল উৎপাদনে বাগান মালিকদের তেমন খরচ নেই বলেই চলে। নির্দিষ্ট একটা সময় আগাছা পরিস্কার এবং ফল আসার পর একটু দেখা-শুনা করলেই চলে। তাছাড়া কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষীদের সার্বিকভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।

 

 

#চলনবিলের আলো / আপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর