রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু, ঝালকাঠি:
জনবল ও কিট সংকটের কারণে ঝালকাঠিতে করোন টেষ্ট করাতে আগ্রহীদের লম্বা সিরিয়ালের অভিযোগ।ভুক্তভোগী ও সরেজমিনে পরিদর্শনে জানা যায় যে, ঝালকাঠি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে প্রয়োজনীয় জনবল ও টেষ্টিং কিট সংকটের কারনে চলমান মহামারি করোনা ভাইরাস বা করোনা উপসর্গে আক্রান্তদের ল্যাবরেটরী টেষ্টের জন্য ৫/৭ দিনের লম্বা সিরিয়ালে পড়তে হচ্ছে। তার উপর ঝালকাঠি আধুনিক সদর হাসপাতাল নামধারী চিকিৎসা কেন্দ্রে নেই পিসিআর ল্যাব। ফলে পরীক্ষা করালেও বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল থেকে টেষ্ট রিপোর্ট পেতে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগছে। এ অবস্থায় করোনা নিশ্চিত হতে টেষ্ট স্যাম্পল প্রদান ও রিপোর্ট প্রাপ্তিতে দুই সপ্তাহ পেরিয়ে যাচ্ছে। আর এতে আক্রান্ত রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহনে বিলম্ব, এমন কি মৃত্যুর মুখে পতিত হতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে খোজ নিতে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে গেলে কথা হয় এক সপ্তাহ ধরে জ্বর ও বুকে ব্যাথায় আক্রান্ত শহরের মধ্য চাঁদকাঠি এলাকার মনির হোসেনের (৪০) সাথে। সে জানায় গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি করোনা উপসর্গে আক্রান্ত হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে তাঁর মা, বোন, ভগ্নিপতিরও জ্বরসহ একই উপসর্গ দেখা দেয়। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে চেষ্টা করেও তাদের পরিবারের চারজনের স্যাম্পল বা নমুনা দেওয়ার সিরিয়াল পায়নি। এ পরিস্থিতিতে তাঁরা জানতে পারছেন না করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কি-না। নিরুপায় হয়ে এবিষয়ে নিশ্চিত না হয়েই ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবন করছেন।
এ পরিবারের মতো গত শনি ও রবিবার সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা মেলে অপেক্ষমান আরো ১৫/২০ জনের। কথা বলে জানা যায়, তারাও করোনা উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষা করার স্যাম্পল দেয়ার জন্য হাসপাতালে আসলেও কিট সংকটের কারণে তাদের স্যাম্পল নেয়া হচ্ছেনা। একই ভাবে কয়েক দিন আগে করোনা উপসর্গ নিয়ে নলছিটির চানবরু নামে এক নারীর মৃত্যু হলে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগকে খবর দেয়া হলেও জনবল সংকট ও কিট না থাকায় স্যাম্পল সংগ্রহ করেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। তাই পরিবারের সদস্যরা স্যাম্পল না দিয়েই লাশ দাফন করছে বলে জানা গেছে।
ঝালকাঠি শহরের বান্ধাঘাটা এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্ধা জানায়, তিনিসহ তাদের পরিবারের তিনজনের জ্বর, সর্দি ও কাশি হয়। এরমধ্যে একজনের গলা ব্যথাও রয়েছে। হাসপাতালে যোগাযোগ করেও তাঁরা নমুনা দিতে পারেনি। তাদেরকে সিরিয়ালের জন্য হাসপাতালে যেতে বলা হচ্ছে। কিন্তু অসুস্থ থাকায় কেউই আর যেতে পারেনি হাসপাতালে। এখন বাড়িতে বসে নিজস্ব জ্ঞানে আইসোলেশনে থেকে ও অনলাইনে চিকিৎসকের সেবা নিয়ে ওষুধ সেবন করছেন। এ অবস্থা শুধু ঝালকাঠি সদরের নয় এটি, পুরো জেলার চিত্রই এরকম বলে জানাগেছে। করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তায় পড়েছে উপসর্গ থাকা জেলার বাসিন্ধারা।
ঝালকাঠিতে করোনা রোগীদের দাফন ও সৎকারের কাজে নিয়োজিত কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সূত্রে জানাগেছে, স্বাস্থ্য বিভাগের স্যাম্পল সংগ্রহ করে পাঠানোর পর রিপোর্ট আসার আগেই ৫জনের মৃত্যু হয়েছে ও এদের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে। তাছাড়া করোনা উপসর্গ নিয়ে এ পর্যন্ত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকর স্যাম্পলও রাখা হয়নি। আর নিয়মানুযায়ী এসব মৃতদের কোন তালিকা নেই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, জনবল সংকট ও পর্যাপ্ত কিট না থাকার কারণে নমুনা পরীক্ষার জন্য এখন থেকে (নাম নিবন্ধন) সিরিয়াল দিতে হবে। করোনা শুরুর দিকে পরীক্ষার জন্য তারা প্রতিদিন ১৪/১৫ জনের স্যাম্পল সংগ্রহ করতে পারতো। কিন্তু বর্তমানে সদর হাসপাতালে মাত্র একজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট নমুনা সংগ্রহ করায় প্রতিদিন ৪/৫ বেশি নমুনা সংগ্রহ করতে পারছেন না। একই অবস্থায় জেলার অপর ৩ উপজেলা নলছিটি, রাজাপুর ও কাঁঠালিয়াতে। এসব উপজেলায় যেখানে ১০টি করে নমুনা সংগ্রহ করতো, এখন সেখানে প্রতিদিন ৩/৪ জনের বেশি নমুনা নেওয়া হয় না।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠির ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আবুয়াল হাসান বলেন, আমাদের জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে পর্যাপ্ত টেষ্টিং কিট নেই, তার উপর রয়েছে জনবলের অভাব। সদরে হাসপাতালে মাত্র একজনে নমুনা নিচ্ছেন, ৩ উপজেলাতে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট না থাকায় অন্য বিভাগের লোক দিয়ে নমুনা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের দুজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের করোনা পজিটিভ হয়েছে। তাই আগের চেয়ে নমুনা সংগ্রহ কমে গেছে। এখানে জরুরী ভিত্তিতে একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত কিট ও জনবল প্রয়োজন। আমরা উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে লিখেছি, তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানানোর পাশাপাশি আমাদের স্থানীয় উৎস থেকেও কিট সংগ্রহেরচেষ্টা করার পরামর্শ দিয়েছেন।