রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ অপরাহ্ন

ই-পেপার

রোমান্টিক প্রেমের গল্প মায়াবতীর প্রেমে দয়াল কুমার (১৩তম পর্ব) – মো: আলমগীর হোসেন

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: রবিবার, ২৮ জুন, ২০২০, ৯:৪১ অপরাহ্ণ

রাজদরবারে বিচার কার্য্য শুরু হয়েছে। বিচারের কাঠগড়ায় পরেশ কাঠুরে মাথানত হয়ে দন্ডায়মান । তার চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু গড়ে পড়ছে। আর চিন্তা করিতেছে হে ঠাকুর তুমি শেষ বারের জন্য আমার মান-সম্মান তুমি রক্ষা করো। তুমি ওদের কে বেঁচে রাখো এবং এখানে নিয়ে আসো ঠাকুর। পরেশ কাঠুরে কে দেখে রাজদরবারে অনেকে অট্রহাসি হেসে বলে, বেচারার সাদ দেখ রাজার বাড়ীর আত্নীয় হওয়ার। এ রাজদরবারের ঝাড়–দার হওয়ার যোগ্য নয়, সেকিনা রাজপুতের সাথে মেয়ে বিয়ে দেয়ার জন্য শেষে কিনা রাজপুতের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। এসব শুনে পরেশ এর যেন কান্নায় বুক ফেটে যাওয়ার উপক্রম। তারপরও সে মনের জোরে দাড়িয়ে রয়েছে। মায়াবতীর মা বুক আছড়িয়ে আছড়িয়ে কান্নায় রাজদরবার কাপিয়ে তুলছে। যার কারনে তাকে পেয়াদারা তাকে জোর করে টেনে হেচড়ে বাহিরে রেখে আসে। ঐদিকে মায়াবতীর মাসি বলে, আমার মনে কু ডাকছে রে মা তোর বাবার কি কোন বিপদ হলো কি না? চল আজকেই তোদের বাড়ীতে যাই। এই বলে তারা সামান্য একটু নাস্তা সেরে মায়াবতী ও দয়ালকে সাথে করে তার মাসি মায়াবতীতে বাড়ীতে যাওয়ার জন্য বের হয়।

 

তারা প্রথমে ঘোড়ার গাড়ীতে করে নৌকার ঘাটে যায়। সেখানে দেখে একটি নৌকা কিছুক্ষন আগে ছেড়ে গেছে। আর একটি নৌকা যেতে এক/দেড় ঘন্টা দেরী হবে। তখন মাসি বলে , চল ঐ নৌকার ভিতর বসে পড়ি বাপু। ঘোড়ার গাড়ির ঝাকুনীতে আমার মাজার ব্যাথা বেড়ে গেছে। তারা নির্দিষ্ট নৌকায় গিয়ে নৌকার ছাউনীর ভিতর বসে পড়ে। বাহিরে রোদ্রও প্রচুর। মায়াবতী বলে আমার জল পিপাসা লেগেছে। তখন মাসি বলে নদীর পানি একটু খেয়ে নেয় না বাপু। এই মাত্র বাড়ী হতে জল নাস্তা খেয়ে আসলি, এখনই আবার জল পিপাসা লাগে। দয়াল বলে মাসি মা আমার ও জল পিপাসা লেগেছে। আমরা বরং একটু নৌকা হতে নেমে গিয়ে জল খেয়ে আসি বলে তারা দুজন নেমে যায়। সেখানে এক অর্ধবয়স্ক লোক টম টম শব্দ বাজিয়ে আইসক্রীম বিক্রি করিতেছে । সেখানে গিয়ে তারা তিনটি পাইপ আইসক্রীম কিনে একটি নিয়ে তাদের মাসিকে দেয় আর দুটো দুজনে চুষতে চুষতে খায়। আইসক্রী আনা দেখে মাসি বলে, আমার জন্য আনলে কেন? আমি কি তোদের মত পোলাপান মানুষ নাকি? মায়াবতী বলে নাওনা তোমার ও জলপিপাসা লেগেছে, কিন্ত বলছো না । এটা খেয়ে একটু গলাটা ভিজিয়ে নাও। তখন মাসি বলে, এই আইসক্রীমে আমার গলা ভিজবে না রে।

 

তোদের জন্য বাড়ীতে না জানি কি হচ্ছে। সেই চিন্তাই আমার গলা একদম শুকিয়ে গেছে। তখন মায়াবতী বলে ঠাকুরের কৃপায় যেন কোন বিপদ না ঘটে। মায়াবতী আর দয়াল কুমার মাসিকে আইসক্রীম দিয়ে আবার নৌকা হতে নেমে পড়ে। নৌকা হতে নেমে দেখে সামান্য একটু দুরে কিছু মানুয়ের জটলা। তাদের সেখানে কি হচ্ছে দেখতে চায় । তারা সেখানে গিয়ে দেখে একটি বয়স্ক মানুষ তার তের বছরের মেয়েকে নিয়ে জাদু খেলা দেখাচ্ছে। মেয়েটি এক চাকাওয়ালা সাইকেলে উঠে দিব্যি ঘুরে দেখাচ্ছে। বয়স্ক লোকটি তাসের পাতা নিয়ে বিভিন্ন কালারের তাস এবং তাস দিয়ে টাকা বানানো দেখাচ্ছে। সেখানে জাদু খেলা দেখতে দেখতে নৌকা ছাড়ার সময় হয়ে যায়। নৌকার মাঝি এসে বলে ওপারে যাওয়ার নৌকা এখনই ছেড়ে দিবে। সবাই চলে আসুন। তখন দয়াল জাদুখেলার মেয়েটির হাতে একটি স্বর্নমুদ্রা ধরিয়ে দেয়। স্বর্নামুদ্রা দেয়ায় বয়স্কলোকটি এগিয়ে এসে বলে কে বাবা তুমি ? পেটের দায়ে এই জাদুখেলা করি। সারাদিন খেলা দেখিয়ে যা জুটে তা দিয়ে চাল ডাল কিনে বাড়ী গিয়ে একমুঠো ভাত খাই। অনেকেই খেলা দেখে একটি পয়সাও দেয়না। আর তুমি এই সামান্য খেলা দেখে তুমি স্বর্ণামুদ্রা দিলে। ঠাকুর যেন তোমার মঙ্গল করেন। মায়াবতী আর দয়াল কুমার জাদুখেলার ব্যাক্তির নিকট হতে দোয়া আশির্বাদ নিয়ে দুজন নৌকায় উঠে। তার পর তাদের নৌকা ছেড়ে যায়। মাসির কথা শুনে মায়াবতীর মনেও তার বাবা মার জন্য চিন্তা করিতে থাকে। যা হোক তাদের নৌকা দুদিন ধরে চলছে। রাস্তার ভিতর যাত্রীরা বেশির ভাগ শুধু শুকনো খাবারের নাস্তা করে। কেননা ভারী নাস্তা করিলে প্রেশ্বাব পায়খানার চাপ বাড়তে পারে। সে জন্য নৌকা কতৃপক্ষ নৌকার ভিতরে শুকনো খাবারের যথেষ্ট মজুদ করে থাকে । সেখান থেকে স্বল্পমুল্যে যাত্রীরা খাবার কিনে খেয়ে থাকে। দয়াল মায়াবতী ও নৌকার ভিতর দোকান হতে শুকনো খাবার কিনে তিন জনে নাস্তা সারে।ঐদিকে রাজদরবারে পরেশের বিচার কার্য্য চলছে। অনেকেই পরেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছে। বখাটে বনমালী ও তার বাবা পরেশের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে বলে পরেশ নিজে তার ভাইকে দিয়ে তার মেয়ে ও রাজপুতকে এরাজ্য হতে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।

 

এমন কি তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে রাজপুত্রকে গুম করে রাজার কাছে চাঁদা নিবে বলে জেনেছে। এসব শুনে রাজা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলে, হতভাগ্য পরেশ তোর আর নিস্তার নেই। বিচার শেষে রাজা পরেশের শুলে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আদেশ দেন। বিচারে বলা হয় আজ সুর্যাস্তের সাথে সাথে পরেশকে যেন শুলে চড়িয়ে মৃত্যু কার্য্যকর করা হয়। এ আদেশ শুনে পরেশ যেন নিথর পাথরের মতই দাড়িয়ে রয়েছে। তার পাশে মাটিতে বসে তার স্ত্রী ঠুকরিয়ে ঠুকরিয়ে কাদছে। পরেশের মুখে কোন কথা বের হচ্ছে না। সে মনে মনে চিন্তা করে এবার ঠাকুর তাকে আর বাঁচালো না। সে মনে মনে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করে বলে, হে ঠাকুর আমার শাস্তি দিয়ে হলেও ওদের তুমি সুখী রেখো। ওদের যেন এ জালিম রাজার কাছে নিয়ে এসো না। তাদেরকে দুরে কোথাও নিরাপদে সুখী পরিবার হিসেবে বেঁচে রেখো। সুর্যাস্তের আর মাত্র আধঘন্টা বাকী আছে। এরই মধ্যে মায়াবতী ও দয়াল কুমার দ্রুত নৌকা হতে নেমে মায়াবতীদের বাড়ীতে যায়। বাড়ীতে গিয়ে দেখে তার মা বাবা বাড়ীতে নেই, বুড়ো দিদিমা কান্না করিতে করিতে প্রায় অন্ধ হয়ে গেছে। দিদিমা জিগায় কেরে মায়াবতী নাকি? তোরা তাহলে ্এসেছিস রে, তোদের জন্য তোর বাবা আজ রাজদরবারে মৃত্যু দন্ডের আদেশ নিয়ে শুলে চড়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। দয়াল একথা শুনে মায়াবতীকে বলে চল তাহলে আগে রাজদরবারে যাই। বাবার এ অন্যায় আদেশ থামাতে হবে। আমাদের জন্য তোমার বাবার জীবন যাবে কেন? ভালবেসে যদি অন্যায় করে থাকি? তাহলে এর জন্য আমাকে শাস্তি দিতে হবে। রাজদরবারে জল্লাদ এইমাত্র শুলে চড়াচ্ছে এমন সময় দয়াল কুমার চিৎকার বলে, থামাও তোমাদের অন্যয়া অত্যাচার। দয়ালকে দেখে রাজার মনে যেন প্রশান্তির ছায়া প্রবেশ করিল। রাজা সঙ্গে সঙ্গে জল্লাদকে বলে পরেশকে শুলে চড়িয়ো না। (চলবে)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর