সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

করোনা মহামারীতে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ কোন কাজেই আসলোনা

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০, ১১:১১ অপরাহ্ণ

নির্মল বড়ুয়া মিলন, রাঙামাটি :

পার্বত্য রাঙামাটিবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার রাঙামাটি সরকারী মেডিকেল কলেজ নানা ঘাত প্রতিঘাত, পক্ষ প্রতিপক্ষের সংঘষর্, প্রাণহানীর পর চালু হয় ২০১৫ সালে। দীর্ঘ ৫ বছর অতিবাহিত হয়ে এমবিবিএস ডাক্তার হয়ে প্রথম ব্যাচের ছাত্রছাত্রীরা ডাক্তার ডিগ্রি নিয়েছেন। কিন্তু বৈশি^ক মহামারী করোনা ভাইরাসের তান্ডবে রাঙামাটি জেলার জনজীবন যখন বিপর্যস্ত, দিশাহীন তখন জেলাবাসী বুঝলো প্রাণের বিনিময়ে স্থাপিত রাঙামাটি সরকারী মেডিকেল কলেজটি কোন কাজেই আসছেনা জেলাবাসীর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষনার সাথে সাথে কলেজের সমস্ত দরজা বন্ধ হয়ে গেল। কোন উপকারে আসলোনা মহামারী করোনা মোকাবিলায়। দেশের অন্যান্য মেডিকেল কলেজগুলি মহামারী মোকাবেলায় যেখানে কোন টা করোনা ইউনিট আবার কোনটা আইসোলেশন সেন্টার অথবা কোন টা পুরোপুরি করোনা হাসপাতালে পরিনত হচ্ছে তেমন পরিস্থিতিতে রাঙামাটি সরকারি মেডিকেল কলেজ একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বা সরকারি কলেজের ভুমিকা রাখতে সক্ষম হলোনা।

 

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজটি কেবলমাত্র রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে রুপ নিয়েছে। কথাগুলো বলছিলেন হাসপাতাল এলাকারই নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্থানীয় জনৈক ব্যাক্তি। জনৈক ব্যাক্তির এমন বক্তব্য শুনে খোঁজ নিয়ে জানা গেল রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের নেই কোন ল্যাব, নেই বিভাগ ওয়ারী পরীক্ষা নিরীক্ষার সরঞ্জাম, নেই কোন বিশেষজ্ঞ, নেই পর্যাপ্ত জনবল, নেই লাইব্রেরী, নেই ডাইনিং, নেই পর্যাপ্ত হোস্টেল সুবিধা, নেই ছাত্রছাত্রীদের খেলাধূলা-বিনোদন সুবিধা। নাম সর্বচ্ছ রাঙামাটি সরকারি মেডিকেল কলেজে মাত্র তিনটি কক্ষে গাদাগাদি করে ২৫০জন ছাত্রছাত্রী ক্লাশ করে। একটি পরিপূর্ণ মেডিকেল কলেজ ৫ বছরেও বাস্তবায়ন না হওয়ার পিছনে অনিয়ম আর দলীয়করণ প্রধান অন্তরায় বলে রাঙামাটি জেলাবাসী মত দিয়েছেন। অন্য দিকে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকমন্ডলী প্রতিদিন চট্টগ্রাম করোনার রেডজোন থেকে যাতায়াত করে রাঙামাটিবাসীকে করোনা ঝুঁকিতে রাখার বিষয়টি জেলা আইন শৃক্সখলা কমিটি পর্যন্ত গড়িয়েছে। ইতোমধ্যে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে ঢাকাসহ অন্যজেলা থেকে এসে ছাত্রছাত্রীরা এবং তাদের অভিবাবকবৃন্দ অবস্থান করছে।

 

প্রতিনিয়ত লক্সিঘত হচ্ছে সরকারী নির্দেশনা। রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ ন্যূনতম একটি ক্লিনিকের ও সক্ষমতা অর্জন করেনি বলে স্থানীয়রা মত দেন। রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের ভবিষ্যত কি ? তারপরও আশার কথা হলো করোনা ভাইরাস দ্রুত সংক্রমন রোধে রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগ ও রাঙামাটি জেলার স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাপনা, ত্রান কার্যক্রম তদারকি ও পরিবীক্ষণ সমন্ময়ক, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্ব্হাী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী (সচিব) এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বসুন্ধরা গ্রুপের সৌজন্যে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে রাঙামাটি জেলাবাসী। শীঘ্রই স্থাপন হচ্ছে করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব। গতকাল ২৬ জুন শুক্রবার রাঙামাটি জেলার স্বাস্থ্য ব্যাবস্থাপনা, ত্রান কার্যক্রম পরিচালনার কাজ তত্তাবধান ও পরিবীক্ষণ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্ব্হাী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী (সচিব) জেলার সংসদ সদস্য, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমাণ্য ব্যক্তি, জেলা উপজেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় মহামারী করোনা মোকাবেলায় করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জনের কাছে ৭০ লক্ষ টাকা হস্তান্তর করেন।

 

রাঙামাটি সিভিল সার্জন অফিসের জেলা করোনা ফোকাল পার্সন ডা. মোস্তফা কামাল এবিষয়ে সিএইচটি মিডিয়াকে জানিয়েছেন পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য ৭০ লক্ষ টাকা পর্যাপ্ত এবং অতি শীঘ্যই ল্যাব স্থাপনের কাজ শুরু হবে। যদিও রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের বর্জ্যব্যবস্থাপনা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জেলাবাসী তারপরও পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য সর্বমহল দাবি জানিয়েছেন।

এরই মধ্যে রাঙামাটিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন মাত্র দেড় মাসে শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে ২৩১ জনে। প্রাণ গেছে ৬ জনের। জেলার ১০ উপজেলা সংক্রমিত। তারমধ্যে রাঙামাটি জেলা সদর ১৩৮ জন, বাঘাইছড়ি ৯জন, লংগদু ৬ জন, বরকল ১ জন, জুরাছড়ি ৬ জন, বিলাইছড়ি ২ জন, রাজস্থলী ৪জন, কাপ্তাই ৪৬ জন, কাউখালী ১৭ জন এবং নানিয়ারচর ২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়।

জেলায় মোট কোয়ারেন্টাইনে ৩২৪৪ জন। হোম কোরেন্টাইনে ২১৩২ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ১১১২ জন। এর মধ্যে কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন করেছেন ৩১৩৭ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১০৭ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ১১ জন। সুস্থ হয়েছেন ১০৩ জন।

এ পর্যন্ত ১৯৯২ জনের নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ইন্সষ্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকসাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ফলাফল পাওয়া গেছে ১৭২৭ জনের, রিপোর্ট অপেক্ষমান আছে ২৬৫ জনের। তথ্যটি সিএইচটি মিডিয়াকে নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা ফোকাল পারসন ডা. মোস্তফা কামাল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর