করোনার প্রভাবে বিপর্যস্ত জনজীবন । শুভ্রা (কাল্পনিক নাম) নামক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েটি এখন ছোট-খাটো বিষয় নিয়েই পরিবারের সদস্যদের সাথে রাগারাগি করে । যেমন: তাকে সকালে ঘুম থেকে ডাকলে, খাবার পছন্দ না হলে, বিদ্যুৎ চলে গেলে, ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেলে বা চার্জ হতে দেরি হলে, কোথাও উচ্চস্বরে গান বাজলে ইত্যাদি ইত্যাদি । সত্য কথা বলতে শুভ্রা মোটেও এমন স্বভাবের মেয়ে নয় । কিন্তু চলমান পরিস্থিতির প্রভাবে তার আচরণের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে । তার বাবা বিষয়টি বুঝতে পেরে মেয়েকে অনলাইনে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন । সেবাদানকারি সংগঠনের এক বিশিষ্ট consultant psychologist শুভাকে counsel দেওয়ার সময় বললে , আপনি রাগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কয়েকটি কৌশল অবলম্বন করতে পারেন , তাহলেই আশা করা যাই আপনি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন ।
রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল সমূহ —
মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন, এক থেকে দশ পর্যন্ত উল্টো করে গুনতে পারেন , তাহলে মস্তিস্ককে কিছুটা অন্যদিকে ব্যস্ত রাখা যাবে।
হুট করে কোনো কথা বা কাজ করে বসবেন না , সময় নিন , প্রয়োজন হলে সেই মানুষটার সাথে কিছুক্ষণ কথা বন্ধ রাখুন অথবা রাগের কারণটি থেকে নিজের মনকে অন্যদিকে সরিয়ে নিন।
যখন আপনি শান্ত হয়ে গেলেন , এবার আপনার রাগের কারণগুলো তার সামনে তুলে ধরুন , ততক্ষণে অপরজনের মাথাও ঠান্ডা হয়ে যাবে, সে ভালোভাবে আপনার কথা বুঝতে পারবে।
শারীরিক ব্যায়াম করতে পারেন, হাঁটাহাঁটি অথবা ওয়েট লিফটিং করতে পারেন।
আপনি যখন রেগে আছেন স্বাভাবিকভাবেই আপনার মধ্যে নমনীয়তা কাজ করবে না , আর তাই হঠাৎ করে এমন কিছু কথা বলে ফেলতে পারেন যা অন্যের কষ্টের কারণ হতে পারে, তাই কোনো কথা না বলাই ভালো।
যেকোনো সমস্যার সমাধান অবশ্যই আছে, একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলেই সেটা বের করা যায়।
নিজেকে নিয়ে বেশি হিসাব করতে গেলে রাগ আরও বাড়বে তাই , তাৎক্ষণিক ব্যাপারটা মেনে নিলে সমস্যা অনেকটা কমে যায়।
টেনশনে সিগারেট জাতীয় কিছু খাওয়া ঠিক না , তাতে মনটা আরও বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।
টেনশন কমানোর জন্য খানিকটা হাসি ঠাট্টা করা যেতে পারে , তাতে মনটা হালকা হয়ে যায়।
সবথেকে ভালো উপায় হলো মেডিটেশন।
প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট প্রফেশনালের সাহায্য গ্রহণ করুন।
বেশ কিছুদিন কৌশলেগুলো অবলম্বন করে শুভ্রা আবারও তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পেরে এখন সে অনেক আনন্দিত।
লেখকঃ
মো: আব্দুল লতিব সম্রাট
বি.এস.সি. (অনার্স) , এম.এস
মনোবিজ্ঞান বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়