মায়াবতী হাসপাতালের বেডে দয়াল কুমারের পাশে বসে শুধু হাচি দিয়ে যাচ্ছিল। দুদিন ধরে নদীর পানিতে ভিজে ভাসতে থাকায়, তার সর্দি কাশির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। চিকিৎসক তাকে বলে, রুমাল দিয়ে ঢেকে বা হাত দিয়ে আড়াল করে হাচি দেয়ার জন্য। কেননা দয়াল কুমার সদ্যমাত্র সুস্থ্য হয়ে উঠেছে। তার শরীরে হাঁচির মাধ্যমে অন্য কোন জীবানু প্রবেশ করিতে পারে। হাসপাতাল কতৃপক্ষ দয়াল কুমার কে ছাড় পত্র দিতে চায় । কিন্ত মায়াবতীর ঠান্ডাজনিত রোগের কারনে ও এখানে তার চিকিৎসার জন্য দয়াল কুমার হাসপাতালে আরো একদিন থাকার জন্য চিকিৎসকের কাছে অনুরোধ করে। তখন হাসপাতাল কতৃপক্ষ রাজি হয়, এবং মায়াবতীকে ঠান্ডাজনিত রোগের চিকিৎসা দেন। তারা দুজন হাসপাতালের বেডে বসে চিন্তা করতে থাকেন। তাদের নিয়ে মাসি না জানি কত চিন্তা করিতেছে? মাসি তো ঠিকই চিন্তা করছে।
মায়াবতীর চাচা গনেশ রেগে-মেগে চলে এসেছে। যার কারনে তাদের তো ঘুম নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। তারা হন্যে হয়ে পাগলের মত তাদের খুজে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে গনেশ নৌকার ভিতর শোয়া অবস্থায় রাত্রে প্রকৃতির ডাকে নৌকা হতে নেমে বাজারের কোন এক ঝোপের পাশে কার্য্য সারার সময়, বাজারে টহলরত কুকুর ঘেউ ঘেউ করে তাকে ঝাপটে ধরে। সে তো ভয়ে হাউমাউ করে কাদতে থাকে। তখন বাজারে কয়েকজন দোকানী বের হয়ে এসে দেখে এক অপরিচিত মানুষ সেখানে । তখন লোকজন তাকে চোর সন্দেহ করে কিছু উত্তম মাধ্যম দেয় । তখন সে বলে ভাই আমি চোর নই। বিশ্বাস করুন আমি বিপদে পড়ে এখানে নৌকার ভিতর আশ্রয় নিয়েছি। তখন এক বয়স্ক দোকানী বলে এই তোরা সব থাম। ঐ নৌকার মাঝিকে ডেকে আন। তার কাছে শুনি আসলে ব্যাপারটা কি? লোকটাকে তো সাদাসিদে মনে হয়। মনে হয়না সে চোর? তখন দুজন পাশের নৌকার মাঝিকে ডেকে নিয়ে আসে। তখন মাঝি বলে তুমি কি আমার সরলতা নিয়ে নৌকার ভিতর থাকার কথা বলে এ বাজারে চুরি করিতে এসেছো ।
মাঝি তাকে দু-একটা কিল ঘুষি দিয়ে বলে এ বেটা কার দোকানে চুরি করিতে ডুকেছে? তখন সবাই তাকে থামিয়ে বলে, আরে এ কোন দোকানে ঢুকেনি। কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে বের হয়ে দেখি এ বেচারা কাদছে। বলেছে সে নাকি তোকে বলে নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে। গনেশ তাকে বলে, প্রকৃতির কাজে বাইরে এসে কার্য্য সারা অবস্থায় কুকুর ঘেউ ঘেউ করায়, তারা আমাকে চোর ভেবে মেরেছে। তখন মাঝি তাদের বলে, ও বুঝেছি, তোমরা এমনি সন্দেহ করে ওনাকে জেরা করছো। উনি তো গতকাল আমাকে বলে আমার নৌকায় আশ্রয় নিয়েছে। সে আমার নৌাকায় তার আত্নীয় বাড়ীতে এসেছিল। দ্রুত তাড়া আছে বলে, আবার আমার নৌাকায় পরের দিন বাড়ী ফিরবে বলে এখানে রাত্রীযাপন করছে। তখন সবাই তাকে বলে, ভাই মনে কিছু নিবেননা। আপনি হাত পা পরিস্কার করে নৌকায় গিয়ে শুয়ে পড়ুন। তখন গনেশ নৌকায় যায় শুয়ে থাকার জন্য । কিন্ত তার আর ঘুম হয়না। একদিকে পিঠে মাইরের ব্যাথা আর অন্যদিকে দয়াল ভাতিজার নিখোজের চিন্তায় তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। সে ঘুম না পেরে বাকি রাত বসে জেগে জেগে পার করিল। সকালে ভোর হলে সে একটাকার একটি বিস্কুট খেয়ে নাস্তা করে। সকাল আটটার সময় নৌকা ছেড়ে দেয় । তখন গনেশের মনে একটু ভাল লাগে। ঐদিকে হাসপাতালে মায়াবতীর আরো প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দুজন পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে তারা হাসপাতালের বড় ডাক্তার বাবুকে জানায়, তারা চন্ডিপুর হতে এসেছিল। সেখানে তারা কিভাবে যাবে সে বিষয়ে জানতে চান। ডাক্তার বাবু তাদের কে চান্ডিপুর যাওয়ার রাস্তা পরিচয় করে দেন। তারপর তারা হাসপাতাল হতে বিদায় নেয়। মায়াবতী ও দয়াল কুমার রিক্সা যোগে নৌকা ঘাটে যায়।
সেখান হতে চন্ডিপুরের নৌাকাযোগে তারা মাসি বাড়ী যায়। মাসিবাড়ী গিয়ে দেখে বাড়ীতে কেউ নেই। তখন পাশের বাড়ীর এক মহিলা অর্থাৎ তার মাসির জা এসে মায়াবতীকে বলে এই সর্বনাশী তুই নাগর নিয়ে কোথায় পালাইছিল। নাগরের সাথে এতো পিরিত করিবি, বাড়ীতে গিয়ে করিতে পারিস না। তোদের জন্য আজ এ বাড়ীর সবার ঘুম খাওয়া দাওয়া একদম বন্ধ হয়ে পড়েছে। তোর চাচা তোদের নিতে এসেছিল। তার আগের দিন তোরা লাপাত্তা। যার কারনে তোর চাচা আমার দেবরকে কত না শাসাইয়া গেল। তখন মায়াবতী বলে আসল কথা তো তোমরা জানো না। খামো খা আমাকে দোষারোপ করছো? আমরা দুজন পাশের গ্রামের বেদে পল্লীতে ঘুরতে যাওয়ার সময় দয়ালকে সাপে কাটে। তারপর তাকে সেখানকার সাপুড়ে কবিরাজ অনেক ঝাড়ফুক দেয়ারপর ও সারেনি। শেষে দয়ালকে তারা ভেলায় ভাসিয়ে দেয়। তখন আমি কি আমার স্বামী ছাড়া থাকতে পারি। তখন আমি ও লাফিয়ে পড়ে ভেলা ধরে ভেসে চলে যাই। সে সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমরা একদল জেলেদের দিয়ে উদ্ধার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসায় সুস্থ্য হয়ে এখন আসলাম। তখন ঐ মহিলা বলে রাম রাম এতো কান্ড ঘটে গেছে মা আমরা তো জানিনা। তোমাকে তো অনেক গালমন্দ দিয়ে ফেললাম। তখন মায়াবতী আর দয়াল কুমার তাদের মাসি ও মেসো খুজতে খুজতে সেই বেদে পল্লীর কাছে ভাঙ্গা সড়কের কাছে তাদের দেখা মেলে। তখন মাসিতো মায়াবতীকে জড়িয়ে ধরে এগালে ওগালে চুমু খেতে খেতে বলে, হে রাম তুমি আমার বুনজিকে বেচে রেখেছো । তার জন্য আমি তোমার মন্দিরে একটি পাঠা বলি দিবো। তখন তারা একসাথে হাটতে হাটতে আবার মাসির বাড়ী চলে আসে। বাড়ীতে এসে মাসি বলে, তোর বাবা মা কিযে চিন্তাই না করিতেছে? তোর চাচা তোদের নিতে এসেছিল ।
এসেই তোদের নিখোজের ঘটনায় রাগারাগি করে চলে গিয়েছে। এদিকে গনেশে বাড়ীতে এসে পরেশ কাঠুরেকে ঘটনা জানালে, সে কান্নায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সে ভাবে রাজা মহাশয় তো তাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে। এখন তার ছেলের নিখোজের ঘটনায় না জানি কি কান্ড ঘটায়। এ নিয়ে সে গভীর চিন্তা করিতেছে। মায়াবতীর মা তো অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। এদিকে রাজার পেয়াদা এসেছে তাদের খোজ জানতে। তখন গনেশ রাজার পেয়াদাকে জানায় তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। পেয়াদা রাজদরবারে গিয়ে রাজাকে জানালে, রাজা ভীষন চিন্তায় পড়ে যান। সে ভাবতে থাকে ছেলে আমার কোথায় গেল? সে মন্তীকে বলে আশে পাশের সকল রাজ্যে ঘোষনা দিয়ে দাও । দয়াল কুমার কে উদ্ধার করে দিলে তাকে একশত স্বর্ণমুদ্রা দেয়া হবে। মন্ত্রী বলে রাজা মহাশয় ঐ কাঠুরে বেটার কোন কুমতলব না তো। আপনার কাছ থেকে কিছু মোটা সম্পদ পাওয়ার ধান্দায় নিজেই এ ধান্দা করে বসেনিতো? রাজা তখন ভাবতে থাকে সে তো ছোট লোক তাদের মধ্যে লোভ কাজ করতে পারে? যেই ভাবা সেই কাজ , সে একদল পেয়াদা কে ডেকে বলে ঐ পরেশ কাঠুরেকে পিঠমোরা করে বেধে রাজদরবারে নিয়ে আয়। তখন একদল পেয়াদা পরেশ কাঠুরে কে হাতমোরা করে বেধে নিয়ে আসে। রাজদরবারে রাজা পরেশকে বলে, আমার ছেলেকে তুই কোথায় লুকিয়ে রেখেছি বল? পরেশ বলে, রাজা মহাশয় সত্যিই বলছি, আমি কিছু জানি না। গনেশ এসে বলে তারা নাকি তার মাসির বাড়ী থেকে ঘুরতে গিয়ে নিখোজ হয়েছে। (চলবে)