আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল :
হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরবরাহকৃত নিন্মমানের খাবার এর অভিযোগে শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগিরা অবাধে হাসপাতালের বাহিরে যাতায়াত করছেন। তারা বাহিরের দোকানে গিয়ে ওষুধ ও খাবার ক্রয় করছেন। এতে করে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন একাধিক রোগির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা হাসপাতালের বাহিরে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হচ্ছেনা।
এছাড়া হাসপাতালের খাবার অত্যন্ত নিন্মমানের। খাবার ও ওষুধ এনে দেওয়ার মতো হাসপাতাল কর্তৃপরে কোন লোকজন কিংবা তাদের নিজস্ব কোন স্বজন কাছে না থাকায় বাধ্য হয়েই তাদের বাহিরে যেতে হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডের এক ব্যবসায়ীর পরিবারের চার সদস্য করোনায় আক্রান্ত। গত ২১ জুন ঢাকার আইইডিসিআর থেকে করোনা পরীার পজেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই ওইদিন রাতে শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন ওই ব্যবসায়ী, তার স্ত্রী ও পুত্র। পরিবারের অপর সদস্য একমাত্র মেয়ের করোনা পজেটিভ হলেও কোন উপসর্গ না থাকায় তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মোবাইল ফোনে ওই পরিবারের গৃহকত্রী বলেন, আমার মেয়ের কোন উপসর্গ না থাকায় তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে অক্সিজেন সাপোর্ট পেলে আমরা তিনজনও হাসপাতালে আসতাম না। হাসপাতালে এসে আমরা চরম সমস্যায় পরেছি। হাসপাতালের খাবার মুখে নেওয়ার মতো নয়। এছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধও দেয়া হচ্ছেনা। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে পরেরদিন (২২ জুন) সকাল পর্যন্ত কোন আহার আমাদের পেটে যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপরেও এমন কোন লোক নেই যাদের বাহিরে পাঠিয়ে খাবার ও ওষুধ আনাবেন। তাই বাধ্য হয়েই ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে আমার করোনা আক্রান্ত ছেলেকে বাহিরে পাঠিয়ে খাবার এবং ওষুধ আনানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, খবর পেয়ে পরবর্তীতে ডাঃ মনিষা চক্রবর্তী তাদের জন্য কিছু খাবার পাঠিয়েছেন। শেবাচিমের করোনা ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসায় সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফেরা বাকেরগঞ্জের এক রোগীর স্বজন দানিসুর রহমান জানান, তার স্বজন করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকাকালে খাবার এবং ওষুধ নিয়ে চরম সমস্যায় পরেছেন। কর্তৃপরে খাবার অপ্রতুল ও নিন্মমানের। প্রয়োজনীয় অনেক ওষুধও হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়না। তাই করোনা আক্রান্ত হয়েও তার স্বজনকে ওয়ার্ডের বাহিরের বিভিন্ন দোকানে গিয়ে খাবার ও ওষুধ কিনতে হয়েছে। শেবাচিমের সামনের একাধিক ব্যবসায়ীরা বলেন, তাদের দোকানে আসা ক্রেতাদের মধ্যে কে করোনায় আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত নয়, তা তাদের পে বোঝা সম্ভব নয়। তারা সবার কাছে পন্য বিক্রি করেন। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত কেউ দোকানে আসলে তার সংস্পর্শে আরও অনেকে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীরা যাতে ওয়ার্ডের বাহিরে যেতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে কঠোর নজরদারী বৃদ্ধি করা উচিত। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, এভাবে করোনা আক্রান্ত রোগিরা ওয়ার্ডের বাহিরের বিভিন্ন দোকানে অবাধে চলাফেরা করার মাধ্যমে করোনা ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
কারণ করোনা ওয়ার্ডের অনেক রোগিরা ওষুধ এবং খাবার কিনতে বিভিন্ন দোকানে যাওয়ার মাধ্যমে তারা যেসব জায়গায় যায় সেখানে করোনা সংক্রামনের আশংকা রয়েছে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ বাকির হোসেন বলেন, করোনা ওয়ার্ডের রোগি পাহারা দেওয়ার মতো আমাদের পর্যাপ্ত চতুর্থ শ্রেনীর জনবল নেই। তাই করোনা ওয়ার্ড পাহারা দেওয়ার জন্য পুলিশকে একাধিকবার অনুরোধ করা হলেও তারা এ ব্যাপারে কোন পদপে নিচ্ছেন না। ডাক্তারদের পওে রোগিদের পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মো. নুরুল ইসলাম পিপিএম বলেন, করোনা ওয়ার্ডের রোগিদের খাবার ও ওষুধ এনে দেয়ার লোক দরকার হলে তা হাসপাতাল কর্তৃপ ব্যবস্থা করবে। বাংলাদেশের কোন হাসপাতালের রোগি পুলিশ পাহাড়া দেয়ার নজির নেই। শেবাচিম কর্তৃপ তাদের লোক দিয়ে করোনা ওয়ার্ড পাহারা দিতে পারে। প্রয়োজনে করোনা ওয়ার্ডের গেট তালাবদ্ধ করে রাখতে পারে। হাসপাতালের রোগি পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের নয়।