পাবনার আটঘরিয়া অঞ্চলে গরু ও মহিষের গাড়ির চাকা তৈরির কারিগরদের অবস্থা দিন দিন শোচনীয় হয়ে পড়েছে। সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ রাস্তা থেকে হারিয়ে গেছে জনপ্রিয় বাহন গরু ও মহিষের গাড়ি। ফলে আর গড়তে হচ্ছেনা এমন বাহনের চাকা। ফলে এর সঙ্গে জড়িত শত শত চাকা তৈরির কারিগর বেকার জীবন যাপন করছেন। অনেকেই আছেন মানবেতর জীবনে।
পাবনা, আটঘরিয়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, চলনবিল, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর ও নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে গঠিত। এক সময় এসব অঞ্চল গুলোতে বিলের ফসল পরিবহন, যাতায়াত, বিয়ে-শাদী ও নানা কাজে গরু-মহিষের গাড়ি জনপ্রিয় বাহন ছিল। ফলে প্রয়োজনের তাগিদেই শত শত কারিগর চাকা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এদিকে আটঘরিয়া উপজেলার আওতাধীন দেবোত্তর ইউনিয়নের পুস্তিগাছা গ্রামে অবস্থিত ছোট বাজারে স্বল্প পরিসরে এখনো চাকা তৈরি হচ্ছে। আটঘরিয়া অঞ্চলে চাকা তৈরির কারিগর চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শ্রীকবন উপজেলার ছতোরোচিয়া তামা গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম( ৬৫) পিতা: শের মোহাম্মদ আলী ও একই গ্রামের আব্দুল মালেক (৪৭) পিতা: নূরউদ্দিন এর সাথে সরোজমিনে কথা হয়।
তারা জানান, বছরে দুইবার কার্তিক থেকে অগ্রায়ণ ও ফাগুন থেকে বৈশাখ মাসে আমন ও বোরো ধান, রসুন, সরিষা, গম এবং নানা ফসল মাঠ থেকে বাড়িতে, এমনকি বিক্রির জন্য বিভিন্ন হাট-বাজারে নেওয়ার কাজে গরু ও মহিষের গাড়ি ব্যবহার হতো। সে কারণেই চাকা তৈরির পেশাটি জনপ্রিয় ছিল। অন্যদিকে মতিঝিল,গোড়রী,একদন্ত, লক্ষীপুর, চাঁন্দাই, মাজপাড়া, খিদিরপুর, দূর্গাপুরসহ প্রত্যন্ত অনেক গ্রামে এখনো মহিষের গাড়ির প্রচলন আছে। ফলে চাকা তৈরির প্রয়োজনীয়তা একেবারে ফুরায়নি।
চাকা তৈরির কারিগর আব্দুল মালেক জানান, প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে তিনি পাবনা বিলাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় চাকা তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করছেন। আর এখান থেকে উপার্জিত অর্থেই তার সংসার চলে। এ রকম শত শত কারিগর চাকা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে বর্তমানে চাকা তৈরির সঙ্গে জড়িত কারিগর বেকার হয়ে পড়েছেন। আবার অনেকেই প্রয়োজনের তাগিদে বাবদাদার পেশা পরিবর্তন করেছেন বলেও জানান তিনি। কাঠের গুড়ি থেকে পাওয়া শক্ত কাঠ দিয়ে তৈরি চাকা টেকসই। অন্য কাঠ চাকা তৈরিতে ব্যবহার হয় না। তবে বর্তমানে বাবলা কাঠ ক্রমশই দু®প্রাপ্য হয়ে ওঠায় এবং প্রয়োজনীয়তা কমে যাওয়ায় এর সঙ্গে জড়িত কারিগররা বর্তমানে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, চাকা তৈরির কাজটি পরিশ্রমের। এক জোড়া চাকা তৈরিতে ৫-৬ দিন সময় লাগে। যা ৮-১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। আর এক জোড়া চাকা তৈরি করলে একজন কারিগর ৭০০-৮০০ টাকা মজুরি পান। এতে সময় লাগে ৩-৪ দিন। কাজ কমে আসায় বেশির ভাগ কারিগরই পেশা বদল করেছেন। গ্রাম বাংলার এই পুরোনো পেশাকে ধরে রাখতে সরকারি ভাবে কোন অনুদান বা উৎসাহ পাচ্ছে না তারা।
#চলনবিলের আলো / আপন