দয়াল-মায়াবতী বাড়ীতে না আসার কারনে মায়াবতীর মাসি ও মেসো চিন্তায় পড়ে যায়। রাত্রী হয়ে যায় তার পরেও তাদের কোন খোজ খবর না পাওয়ায় তারা রাস্তায় খুজতে বের হন। দুজন দিকে হন্যে হয়ে দয়াল আর মায়াবতীকে খুজতে থাকে। তারা চিন্তা করে যে ওরা আবার বুবলিদের বাড়ীতে গেল কিনা? সে জন্য বুবলি ও তাদের আশে-পাশের আত্নীয় বাড়ীতে খোজ করেন। কোথাও তাদের সন্ধান পায় না। মাসি আর মেসো তাদের নিয়ে মহা টেনশন করতে থাকে যে, মায়াবতীর পিতা-মাতা কে তারা কি জবাব দিবেন। তাদের উপর ভরসা করে তাদের বাড়ীতে পাঠিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি চিন্তা করিতে থাকে। অন্যদিকে রাজার রানীর তরফ হতে খুশির সংবাদ নিয়ে মায়াবতীর চাচা তাদের নিতে চন্ডিপুর আসিতেছে। রাত্রী পেরিয়ে ভোর হলেও তাদের কোন খোজ-খবর না পাওয়ায় মায়াবতীর মাসি ও মেসো খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। দুইদিন পর ও তাদের কোন খোজ-খবর পাওয়া গেল না। এদিকে দয়ালের ভেলার সাথে মায়াবতীর পানির ঢেউএর সাথে লড়াই করে এখনও টিকে আছে। তার কোন খাওয়া-দাওয়া নেই। তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার পর ও ভেলা থেকে হাত ছুটে যায়নি। তাদের ভেলা ভাসতে ভাসতে নদীর ওপারে শহরের দিকে ভিড়তে থাকে। তখন তাদের ভেলা চোখে পড়ে একটি জেলে নৌকার । নৌকা দেখে মায়াবতী আসতে আসতে এক হাত দিয়ে ভেলা ধরে আর অন্য হাত দিয়ে তাদের ইশারা করে তাদের কাছে যাওয়ার জন্য। জেলেরা প্রথমে ভয় পেয়েছিল।
সেখানে কোন জলদানব বা মৎস্যকন্যা তাদের অনিষ্ট করার জন্য আহবান করছে কিনা? তার পর ভেলা যখন অতি নিকটে আসে, তখন দেখে একটি মেয়ে ভেলা ধরে আছে, ভেলায় একটি মানুষ শুয়ে আছে। তখন জেলেরা নৌকা নিয়ে কাছে যায় । মেয়েটিকে নৌকায় তুলে নেয় এবং ভেলাকে নদীর তীরে নিয়ে আসে। মেয়েটি অর্থাৎ মায়াবতী তাদের জানায়, এখানে কাছে হাসপাতাল আছে কিনা? তার স্বামীকে সাপে কেটেছে, তাকে চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন। তখন তারা তাকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক দেখেন যে দয়াল কুমার এখন পর্যন্ত বেঁচে আছেন , কিন্ত খুবই সংকটাপন্ন। তখন মায়াবতীর অনুরোধে এবং দয়ালের আসল পরিচয় তাদের জানালে দ্রুত চিকিৎসক গণ চিকিৎসা সেবা দেন। চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দয়াল সুস্থ্য হয়ে ওঠেন। পাশাপাশি মায়াবতীকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেন। এতে করে মায়াবতীর ক্লান্ত ভাব কেটে যায় । অন্যদিকে মায়াবতীর চাচা তার মাসিদের বাড়ীতে এসে দেখে তার মাসি আর মেসোর কান্নার রোল শুনতে পান। কান্নার শব্দ শুনে প্রথমে অনুমান করেন এবাড়ীতে হয়ত কেউ মারা গেছে। বাড়ীতে প্রবেশ করে যখন মায়াবতী আর দয়ালের কথা শুনতে চান তারা কোথায়? তখন মাসি আর মেসো মায়াবতীর চাচার দুহাত ধরে দুজন হাউমাউ করে কাদতে কাদতে বলেন , দুদিন আগে তারা গ্রামে ঘুড়তে বের হয়ে আর ফেরত আসেনি। অনেক খোজাখুজি করে ও আর তাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তখন মায়াবতীর চাচা গনেশ বলে আপনারা এটা কাজ করেছেন।
আপনাদের জিমায় ওদের রেখে গেছি। ওদের একটু দেখে শুনে রাখবেন। দাদা আর রাজা-রানীকে কি জবাবা দিবো? এবার রাজার কাছে আমরা তার ছেলের হত্যাকারী অথবা গুম অপহরণ অভিযোগে অভিযুক্ত হবো। আপনারা ওদের কে এ নতুন এলাকায় স্বাধীন ভাবে ঘোরা ফেরা করতে দেয়া ঠিক করেননি। তখন গনেশ তাদের বলে তাহলে চলে যাই। তখন মায়াবতীর মেসো বলে এখন কিভাবে যাবেন? থাকেন সকালে চলে যাইয়েন। গনেশ বলে না যেখানে আমার একমাত্র আদরের ভাতিজিকে রাখতে পারেননি সেখানে একমুহুর্ত থাকবোনা। রাত্রে নৌকার ভিতর থাকবো কিন্ত আপনাদের বাড়িতে থাকবোনা। গনেশ দ্রুত বাড়ী হতে চলে আসে। নৌকার ঘাটে গিয়ে দেখে, নদীর ঘাটে অনেক নৌকা রাখা আছে, যেগুলো পরেরদিন ওপারে টিপ নিয়ে যায় । সেই সব নৌকার মধ্যে একটি ছইওয়ালা নৌকায় উঠে মাঝি কে বলে ভাই আমি বিপদে পড়ে আছি। আমাকে ওপারে যেতে হবে, আপনার নৌকায় যাব। কিন্ত রাত্রিটা একটু নৌকার ভিতরে থাকবো এজন্য দশটাকা বেশি দিবো। তখন দশটাকার লোভে মাঝি তাকে থাকতে দেয় । সে নৌকার ভিতরে একটি পলিথিন দিয়ে বিচানা বানিয়ে মশার কামড় খেয়ে শুয়ে পড়ে।