বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

শীতকে গিরে ব্যস্ত চৌহালীর লেপ-তোষকের কারিগররা

মাহমুদুল হাসান, চৌহালী(সিরাজগঞ্জ)প্রতিনিধি
আপডেট সময়: শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১, ২:২৮ অপরাহ্ণ

এখন কার্তিকের প্রায় শেষ, শুরু থেকে বইছে উত্তরে লু-হাওয়া, ভোরের  আকাশে ঘনকুঁয়াশায় তাই সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে শীতের দেখা মিলেছে ৷
দিনে প্রচন্ড গরম সন্ধ্যার শুরুতে পড়ছে হালকা কুঁয়াশা আর ঠান্ডা ঠান্ডার ফুলঝুরি। হেমন্তের দিনগুলো শেষ হতে না হতেই শীতের বুড়ি এসে যেন জবরদখল করে নিচ্ছে আশপাশের প্রকৃতি।
দিনে গরম, রাতে হিমালয় থেকে আসা কুঁয়াশার শীতল হাওয়া আর ভোর রাতে ঘন কুয়াশার হাতছানিই বলে দিচ্ছে শীত বেশ দুরে নয়। দিনের বেলা সূর্যের আলোর দেখা মিললেও দিন দিন তাপমাত্রা কমছে।
এতদিন যারা হালকা বা পাতলা কাপড় গায়ে জড়িয়ে বের হতেন তারা এখন শীতের ভারী কাপড় পরতে শুরু করেছেন। সকালে ঘাসের ডগায় আর বৃক্ষরাজির পাতায় পাতায় জমে থাকা শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা।
ভোর থেকে ঘন কুয়াশা আর বিকেলের হিমেল বাতাসে শীতের হাওয়া। উপজেলায় শীতকে সামনে রেখে উপজেলা প্রতিটি বাড়ি-বাড়ির ছুটে বেড়াচ্ছেন লেপ-তোষক ফেরিওয়ালা ও কারিগররা। অনেকেই আগাম শীতের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবার অনেকেই লেপ-তোষক তৈরি করতে শুরু করেছেন।
উপজেলায় শীতের আগমনি বার্তা আসার সঙ্গে সঙ্গে ধুনকারদের তুলা ছাঁটাই ও লেপ তৈরির কাজে কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে। কয়েক দিন ধরে এ উপজেলায় শীত ও কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। ভোরবেলায় কুয়াশায় ঢেকে যায় সবুজ মাঠ।
সামনে পৌষ ও মাঘ মাস শীতকাল। তাই গ্রামাঞ্চলের মানুষ আগে ভাগেই লেপ, তোষক বানাতে শুরু করেছে। তাই লেপ, তোষক কারিগরদের এখন দম ফেলার সময় নেই।
বিরামহীন ভাবে কাজ করছেন তারা। কেউ কেউ পুরনো লেপ ভেঙে নতুন করে বানিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ নতুন তুলা দিয়ে তৈরি করে নিচ্ছে লেপ, তোষক ও বালিশ।
এদিকে, শীতকে সামনে রেখে অনেকেই যারা পুরনো শীত বস্ত্র তুলে রেখেছেন সেগুলো বের করছেন। কেউ কেউ আবার নতুন করে লেপ-তোষক তৈরি করছেন।
লেপ-তোষকের কারিগরদের ব্যস্ততাই মনে করিয়ে দিচ্ছে শীতকাল বেশী দূরে নয়। বিত্তবানদের যেখানে বাহারি ডিজাইনের শীতের কাপড়ের সমারোহ থাকে,সেখানে নিম্ন-শ্রেণীর অনেকের ভাগ্যে হয়তো একটি কাপড়ও জোটে না।
আর তাই নিম্ন-শ্রেণীর নারীরা বেশ আগে-ভাগেই সংসারের কাজের ফাঁকে পুরনো শীতের কাঁথাগুলো নতুন করে ছেঁড়া শাড়ী-লুঙ্গি দিয়ে জোড়া তালি লাগিয়ে ব্যবহারের উপযোগি করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এদিকে, দিন যত গড়াচ্ছে শীতের প্রকোপ ততই বেশি বাড়ার আশঙ্কায় চৌহালী উপজেলার প্রায় সর্বত্রই কারিগররা নতুন লেপ-তোষক তৈরি করছেন। এর মধ্য রয়েছেন মৌসুমী  কারিগররাও।
বছরের অন্যান্য সময় বেচাকেনা কম হলেও শীত মৌসুমে এসবের বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। চৌহালীর বাজারে কম্বলের তুলনায় লেপের দাম কম হওয়ায় চাহিদা বেশি।
তুলা ধুনিয়ে তা রং বেরঙের কাপড়ের তৈরি লেপ-তোষকের কাভারে মুড়িয়ে সুই-সুতার ফোড়ে তৈরি করা হয় লেপ। খুব দ্রুত শীত নিবারণে উপযোগী এটি। শীতের তীব্রতা বাড়লে লেপ-তোষক তৈরি ও বিক্রি হয় বেশি।
লেপ-তোষকের কারিগর ও দোকানের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে অর্ডার নিলেও যথাসময়ে ডেলিভারি দিতে হিমশিম খাচ্ছে কারিগররা। এবার তুলার দাম একটু বেশি। কালার তুলা প্রতি কেজি ৩৫ টাকা, মিশালী তুলা ২০ টাকা, সিম্পল তুলা ৭০ টাকা, শিমুল তুলা ৩৫০ টাকা ও সাদা তুলা ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার খাষকাউলিয়া কেআর পাইলট মডেল স্কুল মোড়ের ভাই ভাই বেডিং স্টোরের মালিক মোঃ রতন মিয়া জানান,  এখন দিন-রাত পরিশ্রম করে লেপ-তোষক তৈরি করছি। অনেক অর্ডার আছে। প্রতিদিনই আরও নতুন নতুন  অর্ডার আসছে । তাছাড়া তৈরি করা লেপ-তোষক কিনতেও প্রতিদিন ভিড় করেন ক্রেতারা।
উপজেলার বেবী স্ট্যান্ড মোড়ের ধুনকার মোঃ শাহাদাৎ হোসেন জানান, প্রতিদিন একজন কারিগর ৬ থেকে ৮ টি লেপ তৈরি করেন। মাঝারি ধরনের একটি লেপ বানাতে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। তোষক বানাতে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়। তবে তুলার প্রকারভেদে লেপতোষকের দাম কমবেশি হয়। এছাড়া দিনদিন জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় লেপের দাম বেড়ে গেছে। কোদালিয়া ও রেহাই পুকুরিয়া বাজারে নেপ তোষক ব্যবসায়ী আঃ আলীম  একই সুর তুলে কথা বলেন, এ ব্যবসা আমার বাব দাদার তারা বেছে না থাকলেও আমি তিনজন শ্রমিক নিয়ে কাজ করছি, সারা বছরের ম্লান শীত গিরে পুশিয়ে উঠা সম্বাব। এ পেশার  ব্যবসায়ীদের প্রতি সরকারের নজর দেওয়ায় দরকার বলে মনে করেন তিনি । 

 

#চলনবিলের আলো / আপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর