পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলার প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিনিধিসহ স্থানীয় চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিজ্ঞ সাইবার ট্রাইব্যুনাল রাজশাহীতে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার(২৬অক্টোবর) বিজ্ঞ সাইবার ট্রাইব্যুনাল রাজশাহীতে এ মামলাটি দায়ের করেন ভাঙ্গুড়া পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম।
মামলায় আসামী করা হয়েছে- (১) প্রতিদিনের সংবাদের ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি ও সাপ্তাহিক চলনবিলের আলোর বার্তা সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আপন(২৬)। (২) বাংলাদেশ সময় এর ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি ও সাপ্তাহিক চলনবিলের আলোর নির্বাহী সম্পাদক রায়হান আলী(৩৩)। (৩) আলোকিত সকালের ভাঙ্গুড়া প্রতিনিধি ও সাপ্তাহিক চলনবিলের আলোর ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি মেহেদি হাসান রানা(৩২)। (৪) সাপ্তাহিক চলনবিলের আলোর স্টাফ রিপোর্টার আব্দুল আজিজ(৪৬) নামের চার সাংবাদিককে। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ এবং চাঁদা না দেয়ায় অসত্য তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।
ভাঙ্গুড়া পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের মেন্দা মাস্টার পাড়া মহল্লার আব্দুল জলিলের ছেলে পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম মামলার এজাহারে অভিযোগ করেন, গত ২২ অক্টোবর রাত ৯ টার দিকে আসামীগণের সহিত বাদীর কথা কাটাকাটি হয় এবং আসামীগণ বলে ৫,০০,০০০/-(পাঁচ লক্ষ) না দিলে তোমার বিরুদ্ধে আমরা নিউজ করব এবং তোমাকে তোমার পদ থেকে বহিস্কার করার ব্যবস্থা করব। আসামীগণ পূর্বপরিকল্পিতভাবে চলনবিলের আলো নামক অনলাইন পত্রিকায় গত ২৫ অক্টোবর ” ভাঙ্গুড়ায় কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে” মর্মে ১ নং আসামী নিউজ করেন এবং গত ২৬ অক্টোবর প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকায় ”কিশোরী ধর্ষণের অভিযুক্ত পৌর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম ও ভাঙ্গুড়া ছাত্রদল নেতা দুলু” মর্মে ১ নং আসামী নিউজ করেন। আসামীগণ পরস্পর যোগসাজসে আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনদের মান সম্মানের হানি ঘটায় এবং আমায় রাজনৈতিকভাবে হেয় করে। আসামীগণ পরস্পর যোগসাজসে আমাকে সমাজের হেয় প্রতিপন্ন, আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বক্তব্য, ভীতি প্রদর্শন এবং মানহানিকর তথ্য প্রকাশ এবং প্রচার করে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেন।
এজাহারের অভিযোগ প্রসঙ্গে সিরাজুল ইসলাম আপন বলেন, কোনো সংবাদই মনগড়া তথ্যে হয় না। ধর্ষিতা কিশোরীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় এবং প্রতিবেদনে আব্দুল আলীমের বক্তব্যও রয়েছে যা প্রতিদিনের সংবাদের কাছে সংরক্ষিত আছে। এখন তিনি আইনগতভাবেই বিষয়টি মোকাবিলা করবেন। এ রকম মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা করে ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল আলীম সাংবাদিকদেরকে ভয় দেখাতে চান। শুধু নিউজ প্রকাশ করার কারণে স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করার লক্ষ্যে পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম আমাদেরকে মামলায় জড়িয়েছেন। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের দায়িত্বশীল মহলের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এদিকে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম আপনসহ ৪ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করে সাংবাদিকধের কণ্ঠরোধ করার অপ্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পাবনা জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমান ও ভাঙ্গুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুব-উল আলম বাবলু বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হওয়া স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপ। অবিলম্বে এই মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি তাঁর। তা না হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে লাগাতার কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।
এ ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান প্রধান সংবাদকর্মীদের মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে হয়রানি করার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান। তিনি বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে কোনো সাংবাদিককে মামলার আসামী বানানো কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
#চলনবিলের আলো / আপন