প্রণবদার সরকারি চাকরি হয়ে যায়। তার পোস্টিং হয় তাড়াশ উপজেলার সম্ভবত দীঘি সগুনা এলাকায়। ফলে তার কর্ম ব্যস্ততা বেড়ে যায়। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আমাকে সময় দেয়া তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমি হয়ে যাই বড় একা।কিন্তু মনে প্রবল ইচ্ছে আমাকে আমার লেখালেখি চালিয়ে যেতে হবে। সলঙ্গা অঞ্চলের মাটি ও মানুষের কথা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে।এই মনোবাসনা নিয়ে সামনে অগ্রসর হতে থাকি।
আমার পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষা গুরু সলঙ্গা ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বহু গুণে-গুণাম্বিত মরহুম আব্দুল আজিজ মিয়া (বি.এ.বি.টি) স্যারের স্নেহভাজন হই।তিনি আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে উৎসাহ-উদ্দিপনা দেন।তাঁর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উপর গভীর জ্ঞান ছিল। তিনি সলঙ্গা নামের উৎপত্তিসহ বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লিখেছেন। মূলত তিনি ছিলেন একজন প্রচার বিমুখ ব্যক্তিত্ব ও স্বনামধন্য সাহিত্যিক।মাঝে মাঝে আমার লেখা নিয়ে তাঁর কাছে যাই।তিনি আমার লেখার ভুল-ত্রুটি লাল কালির দাগ দিয়ে চিহ্নিত করে, কোথাও নতুন শব্দ বসিয়ে সংশোধন করে দিয়েছেন।
মরহুম আলহাজ্ব আব্দুল আজিজ মিয়া স্যারের নজরে এসেছিলাম একটি ঘটনার পর থেকে।ঘটনাটি আমার খেয়ালিপনা ছিল। আমাদের সময় পরীক্ষা ছিল দু’টি অংশে বিভক্ত নৈর্ব্যক্তিক ও রচনা মূলক।আমি রচনা মূলক অংশে অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর না লিখে শুধু “তোমার প্রিয় কবি” রচনা লিখে খাতা জমা দিয়ে চলে যাই।যত দূর মনে পড়ে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের উপর মনের মাধুরী দিয়ে পরীক্ষার পুরো সময় রচনাটি লিখেছিলাম।
পরীক্ষা শেষ।এবার খাতা মূল্যায়ন করে ফিডব্যাক দেবার পালা।একজন একজন করে ডেকে স্যার আমাদের লিখিত খাতা গুলো বিতরণ করেন।এক পর্যায়ে আসে আমার পালা।কেমন করে যেন আমাকে ডাকলেন।তাঁর ডাক শুনেই শরীর কাঁপতেছিল।ভয়ে ভয়ে তাঁর কাছে গেলাম।তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে কয়েকটি বাক্য বলেছিলেন। যা আমার হ্নদয়ে আজও গেঁথে আছে। তিনি বলেছিলেন ” একজন শিক্ষকই জানে,তার ছাত্রের মেধা কেমন? তুমি রচনা ছাড়া অন্য কিছু লিখতে পারনি এ কথা পৃথিবীর সবাই বিশ্বাস করলেও আমি তোমার শিক্ষক হিসাবে বিশ্বাস করি না।তোমার জ্ঞান ও মেধা সম্পর্কে আমার জানা আছে।তুমি নিশ্চয়ই দুষ্টামি করে এ কাজ করেছ?আর যেন কোন দিন পরীক্ষায় এ রকম না কর।তবে তোমার লিখিত রচনার ভাষা শৈলী অতি চমৎকার ও মনোমুগ্ধকর।”তুমি কোন বই থেকে লিখেছ?এমন প্রশ্নের জবাবে বলেছিলাম আমার নিজের জ্ঞানে লিখেছি।আমাদের সময়ে পরীক্ষার খাতায় বর্তমান সময়ের মত সঠিক হলেই পুরো নম্বর দেন নাই।সব বন্ধুরা রচনা লিখে ২০ মধ্যে ১২/১৩ পেলেও আমি পেয়েছিলাম সম্ভবত ১৭/১৮।একটা রচনা লিখেই রচনা মূলক অংশে পাশ করেছিলাম।
শ্রদ্ধেয় শিক্ষা গুরু আব্দুল আজিজ স্যারের কাছে সে দিন সত্যিই মাথা নিচু করে খাম্বার মত দাঁড়িয়ে ছিলাম।মুখে কোনো কথা ছিল না।তাঁর প্রশ্নের জবাবে ভয়ে মিথ্যা বলেছিলাম যে, আমার প্রশ্ন কমন পড়েনি।প্রকৃত পক্ষে স্যার ঠিকই বলেছিলেন। আমার সব গুলো প্রশ্নের উত্তর জানা ছিল। স্যারের কাছে মিথ্যা কথা বলার জন্য অনুতাপের অনুশোচনা আজও আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
মরহুম আব্দুল আজিজ মিয়া স্যার একজন সাহিত্য প্রেমি মানুষ ছিলেন। তিনি নানা বিষয়ে লেখালেখি করেছেন।মাসিক মদিনা পত্রিকায় তাঁর ধর্মীয় লেখা পড়েছি।সলঙ্গা নাম করণের কোন সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও এর উৎপত্তি সম্পর্কে তিনিই প্রথম সর্বজন গ্রহণ যোগ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর চেয়ে গ্রহণ যোগ্য ব্যাখ্যা অন্য কেউ দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই। পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি দেখে আমার প্রতি স্যারের আস্থা বেড়ে যায়। তিনি আমার ঘুমন্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করে দেন।সম্ভবত লেখালেখির কারণে স্যার আমাকে একটু বেশি ভালো বাসতেন।তাঁর ভালোবাসা আমাকে লেখালেখিতে ও সাংবাদিকতা করার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।আমি তাঁর কাছে চির কৃতজ্ঞ ও ঋণী। লেখক : শাহ আলম,শিক্ষক,সলঙ্গা।(চলবে)…
#চলনবিলের আলো / আপন