আফগানিস্তান বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর একটি হলেও তাদের ভূখণ্ডে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার সমমূল্যের খনিজসম্পদ মজুদ আছে। বিপুল পরিমাণে লোহা, তামা, লিথিয়াম, কোবাল্ট ও অন্যান্য খনিজের খনি আছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে। এক দশক পার হয়ে গেলেও ভূগর্ভস্থ এসব সম্পদের সিংহভাগই এখনও অব্যবহৃত অবস্থাতেই আছে। দ্বিতীয়বারের মতো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ দখল করার পর এই বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিকানা এখন তালেবানের হাতে।
ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের এই খনিজসম্পদকে ব্যবহার করে বৈশ্বিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে একটি বিশাল সুযোগ পেয়েছে তালেবান।
আফগানিস্তানে খনিজসম্পদের মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অতি মূল্যবান লিথিয়াম। বৈদ্যুতিক গাড়ি, স্মার্টফোন এবং ল্যাপটপের ব্যাটারিতে ব্যবহৃত লিথিয়ামের চাহিদা অভূতপূর্ব পরিমাণে বেড়েছে গত কয়েক বছরে। আর তালেবান নিয়ন্ত্রিত দেশটিতে লিথিয়ামের মজুদ এতই বেশি, পেন্টাগনের এক স্মারকলিপিতে আফগানিস্তানকে ‘লিথিয়ামের সৌদি আরব’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে এবং এই দেশের লিথিয়ামের মজুদ বলিভিয়ার সমান হতে পারে ধারণা করা হয়েছে।
কভিড-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে তামার চাহিদাও বেশ বেড়ে গেছে। গত বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এই খনিজের চাহিদা। তামার খনিগুলো সম্প্রসারিত করা হলে খনিজসম্পদ থেকে আফগানিস্তানের মোট আয়ের এক-চতুর্থাংশ আসতে পারে এখান থেকেই।
২০১০ সালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিশেষজ্ঞ এবং ভূতাত্ত্বিকদের একটি প্রতিবেদনে এসব খনিজসম্পদের কথা বলা হয়েছিল। এরপর এক দশক পার হয়ে গেলেও ভূগর্ভস্থ এসব সম্পদের সিংহভাগই এখনও অব্যবহৃত অবস্থাতেই আছে।
এদিকে এরই মধ্যে এ খনিগুলোর অনেকের মূল্যই আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। ২০১৭ সালে আফগান সরকারের একটি প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছিল, জীবাশ্ম জ্বালানিসহ দেশের সব খনিজসম্পদের মূল্যমান ২৫৪ লাখ কোটি টাকার মতো হতে পারে।
ক্ষমতা দখলের পর তালেবান আফগানিস্তানের খনিজসম্পদ উত্তোলনের দিকে মন দিতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। তবে এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ তাদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তালেবান ক্ষমতা দখলের আগেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আফগানিস্তানের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়াটা দুস্কর ছিল। এখন তা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে পশ্চিমারা তালেবানের সঙ্গে কাজ না করার হুমকি দিলেও চীন, রাশিয়া এবং পাকিস্তান ইতোমধ্যেই তালেবানের সঙ্গে বাণিজ্য করার ইচ্ছা পোষণ করেছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক শিল্পসামগ্রী প্রস্তুত করা হয় চীনে এবং চীনই মূলত বিশ্বব্যাপী পণ্যের চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আফগানিস্তানও বেইজিংয়ের হাত ধরে দেশে একটি দক্ষ খনি ব্যবস্থা গড়ে তুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অস্ট্রিয়ান ইনস্টিটিউট ফর ইউরোপিয়ান অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসির সিনিয়র ফেলো মাইকেল তাঞ্চুম বলেন, এমন এক সময়ে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, যখন এসব খনিজের সরবরাহ সংকট দেখা দিচ্ছে এবং চীনের তাদের প্রয়োজন। আফগানিস্তানে খনি নির্মাণের জন্য চীন প্রস্তুত হয়েই আছে।
আর চীনকে বাদ দিয়ে আফগানিস্তানের নতুন তালেবান নেতাদের জন্য দেশের খনিজসম্পদকে ব্যবহার করা এখনও একটি আকাশকুসুম কল্পনা। কারণ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে শুধু টেকসই খনি ব্যবস্থা তৈরি করতেই আরও কয়েক বছর লেগে যাবে তালেবানের।